বিশ্বে এই প্রথম: নিউইয়র্কে ধর্মীয় পোশাক নিয়ে বিল পাস

বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন ধরনের একটি বিল পাস হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে ধর্মীয় পোশাক পরিধানের বিপরীতে কাউকে কটূক্তি করা, বৈষম্য কিংবা হয়রানি করা অপরাধের পর্যায়ে পড়বে এবং এর জন্য আইনের অধীনে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আলবেনির ক্যাপিটাল ভবনে মঙ্গলবার এই বিল ৬৩-০ ভোটে পাস হয়। এখন শুধু অঙ্গরাজ্যের গভর্নর বিলটিতে সই করলেই তা আইনে পরিণত হবে। আর ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠ নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নর অ্যান্ডু মার্ক কুমো যে বিলটিতে খুব দ্রুতই স্বাক্ষর করবেন এই ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী ‘বিশ্বাসী’ গ্রুপগুলো(রিলিজিয়াস গ্রুপ না বলে নিজেদের তারা ফেইথ গ্রুপ হিসেবে অভিহিত করেন)।

২০১৩ সাল থেকে ধর্মীয় পোশাক পরার স্বাধীনতা এবং এর জন্য বৈষম্য ও হয়রানির প্রতিবাদে নিউইয়র্ক কেন্দ্রীক কয়েকটি সংগঠন আইন প্রণয়নের জন্য সিনেটের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু এত দিন স্টেট সিনেট রিপালিকানদের আধিপত্য থাকায় বারবার উত্থাপন করেও এই বিল পাস করা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন ডেমোক্র্যাট সিনেটররা। জন লু ছাড়াও কেভিন থমাস এবং লুইস সিপুলভিডা আইন প্রণয়নের পক্ষে কাজ করেন গেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা উল্লেখ থাকলেও এই আইন ধর্মীয় স্বাধীনতার পক্ষে নাগরিকদের আরো বেশি অধিকার দিবে এবং ধর্মীয় পোশাক পরিধানের বিপরীতে যে কোনো ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে নাগরিকদের আরো বেশি আইনগত সুবিধা দেবে।

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে প্রায় ১০ লাখের বেশি মুসলমানদের বসবাস। এছাড়া বিপুল সংখ্যক শিখ ও ইহুদিও আছেন যারা ধর্মীয় পোশাক পরিধান করে থাকেন। হিজাব পরার জন্য ২০১১ সালে এক মুসলিম নারীর চাকরি চলে যাওয়াকে কেন্দ্র করে এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের হামলাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবেও উল্লেখ করা হয় স্টেট সিনেটে।

এত কথা লিখার পেছনে কারণ হলো বাক স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা কি জিনিস এটা আমাদের দেশের পাবলিক কবে পাবে আল্লাহ জানে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে আপনি ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করতে পারবেন কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে কিছু বলতে পারবেন না। আমাদের দেশে নাটক, সিনেমায় দাঁড়ি-টুপিওয়ালা লোকদের কেমন ভিলেন হিসেবে অবিহিত করা হয়। যেন দাঁড়ি-টুপি শয়তানির প্রতীক। তথাকথিত প্রগতিবাদীরা তো রীতিমতো ইসলামোফোবিয়ায়( ইসলামভীতি বা ইসলামবিদ্বেষ বা মুসলিমবিরোধী মনোভাব) আক্রান্ত। আমি নিজেও মনে করি অবশ্যই মানুষকে যে কোনো ধর্ম বা বিশ্বাস নিয়ে সমালোচনার অধিকার দেয়া উচিত। তবে কোনোভাবেই ব্যক্তিকে তার ধর্মীয় স্বাধীনতা (বিশ্বাস/পোশাক) নিয়ে কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানি করা যাবে না। এটা নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী ও শাস্তির আওতায় আনা উচিত। রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো ভাবেই ধর্মীয় পৃষ্টপোষকতা করাটাও ঠিক না। ধর্মের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় থাকাটাও আসলে কতটা যৌক্তিক সেটাও আমার কাছে এক বড় প্রশ্ন। যে কোনো ধরনের জাতীয় মসজিদ মন্দিরেরও বিরোধী আমি।

 

 

লেখক: সাজিদ হক সৌম্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক।

Share this news on: