হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর নেই  

সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

রোববার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।

এরশাদের রাজনৈতিক ও প্রেসসচিব এবং জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুনীল শুভ রায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত ১০ দিন ধরে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি ঢাকার সিএমইচ হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে ছিলেন। ৮৯ বছর বয়সী এরশাদ মাইডোলিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিলেন, রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতায়ও ভুগছিলেন তিনি; সেই সঙ্গে তার ফুসফুসে দেখা দিয়েছিল সংক্রমণ, কিডনিও কাজ করছিল না।

গত ২৭ জুন সকালে এরশাদ অসুস্থবোধ করলে তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।

এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে। অবিভক্ত ভারতে শিশুকাল কুচবিহারে কাটে তার। ভারত ভাগের পর তার পরিবার চলে আসে রংপুরে; পেয়ারা ডাকনামে পরিচিত এরশাদের পড়াশোনার শুরু রংপুরেই। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬০ - ১৯৬২ সালে তিনি চট্টগ্রাম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কেন্দ্রে অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি কোয়েটার স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি শিয়ালকোটে ৫৪ ব্রিগেডের মেজর ছিলেন। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি লাভের পর ১৯৬৯-১৯৭০ সালে ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট-এর অধিনায়ক ও ১৯৭১ - ১৯৭২ সালে ৭ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের অব্যবহিত পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) হিসেবে দেশ শাসন করেন। এরপর তিনি রাষ্ট্রপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণ করে ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্বৈরাচারবিরোধী প্রবল গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

ক্ষমতাচ্যুত এরশাদ বন্দি হন তখন, তার বিরুদ্ধে হয় অনেকগুলো দুর্নীতির মামলা। কিন্তু তার মধ্যেই চমক দেখিয়ে ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ৫টি আসন থেকে বিজয়ী হন এরশাদ। ছয় বছর জেলে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের আমলে তিনি জামিনে মুক্ত হন।

২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। এরপর তিনি ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য হন। তিনি চলতি জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতা ছিলেন।

আরও পড়ুন...

এরশাদ চোখে মেলে তাকাননি আজ: জি এম কাদের

 

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশকে হেসেখেলে হারিয়ে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া Oct 16, 2025
img
আমাদের ব্যাটিং দূর্বলতা একদম এক্সপোজ হয়ে গেছে : লিপু Oct 16, 2025
img
নিহত ৩ বাংলাদেশির মরদেহ হস্তান্তর করল ভারত Oct 16, 2025
img
মাইলস্টোনে পাসের হার ৯৯.৮৩ শতাংশ, ফল উৎসর্গ বিমান দুর্ঘটনায় আহত-নিহতদের Oct 16, 2025
img
রাকসুর ভোট গণনা শুরু Oct 16, 2025
img
দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট চায় : মেজর হাফিজ Oct 16, 2025
img
‘সব শিক্ষার্থী বিবাহিত, তাই পাস করেনি কেউ’ Oct 16, 2025
img
রাকসু নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ৬৯.৮৩ শতাংশ Oct 16, 2025
img
হাসপাতালে ভর্তি অভিনেত্রী তমা মির্জার মা Oct 16, 2025
img
চাকসু নির্বাচনের পর ছাত্রদলের ৪ নেতা বহিষ্কার Oct 16, 2025
img
জুলাই সনদে পরেও স্বাক্ষর করা যাবে: আলী রীয়াজ Oct 16, 2025
img
যাত্রাবাড়ীতে ১২৫ ভরি স্বর্ণ লুটের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ Oct 16, 2025
img
২০২৭ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ওয়ানডে দলে অঙ্কন Oct 16, 2025
img
বিএনপি ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল : সালাউদ্দিন আহমদ Oct 16, 2025
img
দুটো সমাজ ইসলামকে দারুণভাবে ধারণ করছে: জামায়াত আমির Oct 16, 2025
img
বেতন ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ অথবা সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে : শিক্ষা উপদেষ্টা Oct 16, 2025
img
ফের বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ Oct 16, 2025
img
ভিউ বাণিজ্য দেশটাকে শেষ পর্যায়ে নিয়ে গেছে : হামিন আহমেদ Oct 16, 2025
img
জুলাই সনদে সই করবে না ৪ বাম দল Oct 16, 2025
img
ছুটির দিনেও ইসি কর্মকর্তাদের অফিস করার নির্দেশনা জারি Oct 16, 2025