নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহী গান্ধী আশ্রম

”প্রতিদিন কিছু শেখো, প্রতিদিন পরিণত হও” এটি ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর অবিস্মরণীয় উক্তির মধ্যে একটি। নিজেকে পরিণত করতে হলে প্রতিদিন কিছু শিখতে হবে। শিক্ষা জীবনের অন্যতম একটি পদক্ষেপ। শিক্ষা ছাড়া জীবন সাজানো সম্ভব নয়। এরমধ্যে আর একটি হলো বিনোদন। বলা হয়, বিনোদন ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই জীবনে চলার পথে বিনোদন জীবনের গতিকে আরও বেগবান করে। তাই বিনোদন আপনার জীবনকে করবে সুন্দর ও প্রফুল্ল।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় বৃক্ষরাজি দ্বারা আচ্ছাদিত প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠা গান্ধীজী আশ্রম আপনার অন্যতম বিনোদনের কেন্দ্র হতে পারে।

নোয়াখালী জেলা সদর মাইজদি কোর্ট হতে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ বাজার সংলগ্ন সড়কের পাশে গান্ধী আশ্রম এর অবস্থান।

১৯৪৬- এর শেষভাগে সারা ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ে। তখন পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রভাব এসে পড়ল নোয়াখালীতে। বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানায় সাম্প্রদায়িকতার তাণ্ডবলীলা দেখা দেয়। শান্তি মিশনের অগ্রদূত হয়ে নোয়াখালীতে ছুটে আসেন অসহযোগ ও অহিংস আন্দোলনের পুরোধা মহাত্মা গান্ধী। ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর চৌমুহনী রেলস্টেশনে নেমে নোয়াখালীর মাটিতে পদার্পণ করেন মহাত্মাগান্ধী। তৎকালীন এম.এল.এ. শ্রী হারান ঘোষ চৌধুরীর উদ্যোগে নোয়াখালীর প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয় চৌমুহনীতে। ধারাবাহিকভাবে চলল তার পরিক্রমা। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে ১৯৪৭ সালের ২৯ জানুয়ারি তিনি জয়াগ গ্রামে এসে পৌঁছেন। সেদিনই নোয়াখালী জেলার প্রথম ব্যারিস্টার জয়াগ গ্রামের কৃতী সন্তান হেমন্তকুমারঘোষ মহাশয় তার জমিদারির স্থাবর- অস্থাবর সম্পত্তি জনকল্যাণখাতে ব্যয়ের উদ্দেশ্যে মহাত্মা গান্ধীর নামে উৎসর্গ করেন। মহাত্মা গান্ধীর নামে একটি আশ্রম খুলে তার দায়িত্ব দেন চিরকুমার শ্রীযুক্ত চারু চৌধুরী মহাশয়ের ওপর। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার উন্নয়ন সাধন ছিল এই ট্রাস্টের লক্ষ্য। আর এভাবেই শান্তি মিশনে কর্মরত গান্ধীর কর্মীদের একটি স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা হয়, যার প্রচলিত নাম ছিল গান্ধী ক্যাম্প। 

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকার অম্বিকাকালীগঙ্গা চেরিট্যাবল ট্রাস্ট ভেঙে দিয়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বলে এর নামকরণ করেন গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট। এ অধ্যাদেশ অনুসারে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট গঠিত হয় এবং বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যকে এর সভাপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এই ট্রাস্টের মাধ্যমেই মহাত্মা গান্ধীর জীবনদর্শন প্রচার ও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সচিব হিসাবে কর্মরত আছেন শ্রীমতী ঝর্ণা ধারা চৌধুরী।

‘অহিংস’ সমাজ প্রতিষ্ঠায় গান্ধীর কর্মময় জীবনকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন দুর্লভ ছবি, বই ও জিনিসপত্র নিয়ে ২০০০ সালের ২ অক্টোবর গান্ধী আশ্রমের মূল ভবনে প্রতিষ্ঠা করা হয় গান্ধী স্মৃতি জাদুঘর। প্রতিদিন (সোম থেকে শনিবার) সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসেন অসাম্প্রদায়িক ও অহিংস সমাজ গঠনে মহাত্মা গান্ধীর ভূমিকার নানা দিক দেখতে।

জাদুঘরে রতি গান্ধীর কর্মময় জীবনের কিছু কথা, কিছু ছবি, কিছু স্মৃতি যে কারো চিন্তার জগতকে নাড়া দেবে। কোনো ব্যক্তির স্মৃতি কিংবা ব্যক্তিজীবনের কর্মকাণ্ড নিয়ে এমন জাদঘুর সত্যিই বিরল।

জাদুঘরে প্রবেশ করতেই মহাত্মা গান্ধীর বিশাল আব মূর্তি সবার নজর কাড়ে। গান্ধীজির শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৩০টি ছবি শোভা পাচ্ছে এ জাদুঘরে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলনের সময় বিলাতি পোশাক বর্জনের ডাক দিয়ে যে চরকায় গান্ধী সুতা কাটতেন, জাদুঘরে সংরতি সেই চরকা এখনো মানুষের চিন্তাকে নাড়া দেয়।

সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, গান্ধীজির জন্মবার্ষিকী ও প্রয়াণ দিবস ঘিরেও নানা কর্মসূচি পালন করা হয় ট্রাস্টের পক্ষ থেকে।

যাওয়ার উপায়: ঢাকা থেকে সড়কপথে বাসে যেতে হবে নোয়াখালীর মাইজদি। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৩৫০-৪৫০ টাকা। সেখান থেকে সোনাইমুড়ীগামী যেকোনো লোকাল বাস সার্ভিস/ সিএনজি অটোরিকশা যোগে সম্মুখে জয়াগ বাজার নেমে রিক্সা বা পায়ে হেঁটে আধা কিলোমিটার পূর্বে গেলে গান্ধী আশ্রমে পৌঁছা যাবে।

অথবা ঢাকা থেকে ট্রেনযোগেও যাওয়া যাবে। ট্রেনে করে নামতে হবে মাইজদি স্টেশনে। সেখান থেকে সোনাইমুড়ী গামী যেকোন লোকাল বাস সার্ভিস কিংবা সিএনজি অটোরিক্সাযোগে গান্ধী আশ্রমে পৌঁছা যাবে।

থাকার ব্যবস্থা: থাকার জন্য নোয়াখালি শহরে রয়েছে আবাসিক হোটেল। একই সাথে খাবার সুবিধাও রয়েছে সেখানে। হোটেল পুবালি, হোটেল রয়েল, হোটেল রাফসান, হোটেল লিটন উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাইমুড়ী বাজারে হোটেল মৌচাক, হোটেল মৌচাকের পাশেই আছে সোহাগ বেডিং, জেলা পরিষদ ডাক বাংলোয়।

 

টাইমস/এসআর/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মেঘলা আকাশ, শুষ্ক পরিবেশে রাজধানীতে বাড়ছে গরম Jul 12, 2025
img
নয়াদিল্লিতে ধসে পড়ল ৪ তলা ভবন, অনেকে আটকা পড়ার আশঙ্কা Jul 12, 2025
img
অপরাধী যেই হোক, তার স্থান কখনোই আইনের ঊর্ধ্বে নয়: মির্জা ফখরুল Jul 12, 2025
img
সহশিল্পীর সঙ্গে রোম্যান্টিক ভঙ্গিমায় জয়া, ছবি ঘিরে চমক Jul 12, 2025
img
সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ গেল ১ বাংলাদেশির Jul 12, 2025
img
গাইবান্ধায় পৃথক দুই ঘটনায় প্রাণ গেল ২ জনের Jul 12, 2025
img
বিএনপির ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন Jul 12, 2025
img
ডব্লিউএইচও থেকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল Jul 12, 2025
img
হজ শেষে দেশে ফিরলেন ৮৭ হাজার ১০০ হাজি Jul 12, 2025
img
প্রেসিডেন্টকে টিভিতে দেখতে না চাওয়ায় ৬ মাসের কারাদণ্ড Jul 12, 2025
img
বাংলা সিনেমায় যা আছে, বলিউডে তা নেই : সঞ্জয় দত্ত Jul 12, 2025
img
গুজরাটে সেতু ধসে মৃত্যু বেড়ে ২১ Jul 12, 2025
img
দীর্ঘদিন বাঁচার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন করণ জোহর! Jul 12, 2025
img
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাস-বর্বরতার কোনো সম্পর্ক নেই : মির্জা ফখরুল Jul 12, 2025
img
আজ ঢাকার আকাশ মেঘলা থাকবে Jul 12, 2025
img
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য: সুইচ বন্ধ হয় হঠাৎ Jul 12, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা চলমান রাখার সিদ্ধান্ত Jul 12, 2025
img
বিএনপির ২ পক্ষের সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী Jul 12, 2025
img
উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শনে ত্রিপক্ষীয় মহড়া Jul 12, 2025
img
অদৃশ্য শত্রু এখন দৃশ্যমান: তারেক রহমান Jul 12, 2025