একটি পক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের মানচিত্রকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। শুক্রবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক বিশ্লেষণে এ মন্তব্য করেন তিনি।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তিগুলো ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত নিরবে সারা দেশে তাদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করেছে। ১৯৭১ সালের পর থেকে তারা যেসব ন্যারেটিভ প্রচার করেছে সেগুলো হলো- মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের দালাল ছিল, ভারত পাকিস্তান ভেঙেছে তাদের স্বার্থে, এখানে মুক্তিযুদ্ধ হয়, আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, ইসলামকে দুইভাগ করে দেওয়া হয়েছে ইত্যাদি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমানের একজন প্রভাবশালী নেতার বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়। তিনি বঙ্গবন্ধুকে সহ্য করতে পারতেন না।বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় আসায় তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি সব সময় বলতেন, ‘দেশ ভালো পাকিস্তান, নেতা ভালো আইয়ুব খান।
বঙ্গবন্ধুর ফরিদপুরের আরেক নিকটাত্মীয় আওয়ামী লীগ অফিসে বসে বঙ্গবন্ধু গালাগাল করতেন। আর বলতেন, ‘শেখ মুজিব অভিশপ্তভাবে মারা যাবে।’ ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সকালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবর শুনে জেলা আওয়ামী লীগ সেক্রেটারির বাড়িতে এসে বললেন, ‘তোমাকে বলছিলাম না ও অপঘোতে মারা যাবে।’ এ রকম ন্যারেটিভ আওয়ামী লীগেও ছিল।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, যারা আওয়ামীবিরোধী প্রচার করতেন, তারা বলতেন আওয়ামী লীগ দেশকে দ্বিতীয় সিকিম বানাবে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের সিকিমের লেন্দুক দর্জি আখ্যা দিয়ে ১৯৭৪ থেকে আজ পর্যন্ত প্রচার চলছে। এখন বলা হচ্ছে ভারত বাংলাদেশ দখল করে ফেলবে।
ভারত যদি বাংলাদেশ দখল করে তাহলে শেখ হাসিনা মুখমন্ত্রী হিসেবে দেশ চালাবে। এর চাইতে আমরা যদি পাকিস্তান আর্মিকে আমন্ত্রণ জানাই; আমাদের রক্ষা করার জন্য যদি পাকিস্তান ও চীনের জঙ্গি বিমানগুলো এখানে থাকে; ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য যদি জনগণের মধ্য থেকে একটি প্যারা মিলিটারি গঠন করা হয়; এসব নিয়ে হাজার হাজার গোপন বৈঠক হচ্ছে এবং জনগণের কাছে এসব বার্তা পৌছে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, যারা আরো কট্টর ইসলামপন্থী, তাদেরকে বলা হচ্ছে ইসলাম ইসলামকে দুইভাগ করা হচ্ছে। আমরা মুসলমানরা ৮০০ বছর ভারতবর্ষ শাসন করেছি। দিল্লি আমাদের, হায়দ্রাবাদ আমাদের। গুজরাত, কোলকাতা, মুর্শিদাবাদ আমাদের। এখন ভারতের মোট জনসংখ্যা ১৩০ কোটি।
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে মোট মুসলমানের সংখ্যা ৭০ কোটি। যদি ৭০ কোটি মুসলমান একত্র হয়, তাহলে ভারত, মায়ানমানমার, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটান দখল করতে পারব। এতে আবার সেই মুঘল কিংবা সুলতানী আমল শুরু হবে। যারা সাধারণ ধর্মপরায়ন তারা এসব কথা মেনে নেবে। তারাও বলবে, এতবড় একটা সাম্রাজ্য যদি মুসলমানরা আবার চালাতে পারি তাহলে তো আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পরাশক্তি হতে পারব।
সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, এই মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে ধনবান পরিবারের লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত তরুণের মধ্যে ইসলামপন্থী মনোভাব ও পকিস্তানপন্থী মনোভাব চাঙ্গা করে তোলা হয়েছে। ফলে পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষা, ইসলামের হুকুমত প্রতিষ্ঠা করা, সৎ লোকের শাসন চালু করার জন্য তারা যেভাবে নিজেদের শরীর, মন ও মস্তিষ্ককে প্রস্তুত করে রেখেছে; সেটাকে মোকাবেলা করার মতো মিলিটারি ক্ষমতা, রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর নেই।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই পরিকল্পনাকে আমাদের রাজনীতিবিদরা বুঝতে পারেননি। তারা এটাকে অস্ত্র দিয়ে, রাষ্ট্র শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছে। এতে হীতে বিপরীত হয়েছে। এখন ড. ইউনূসের শাসনামলের এই সময়ে ওই সংগঠিত শক্তিটি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে, রাষ্ট্রের মানচিত্রকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে পড়েছে। তাদের কিভাবে মোকাবেলা করবেন? এখন সেটাই দেখার বিষয়।
এমআর/টিকে