লেবাননের রাজনীতিতে আবারও বড় ধরনের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সেনাবাহিনীকে দিয়ে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা নিয়ে শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠক বসছে। তবে এই পদক্ষেপ ঘিরে দেশটির অভ্যন্তরে যেমন তীব্র মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক চাপ ও আঞ্চলিক সংঘাতও পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
গত আগস্টে লেবানন সরকার সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেয়, বছরের শেষ নাগাদ হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণের একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রচণ্ড চাপ এবং ইসরাইলের বাড়তে থাকা হামলার প্রেক্ষাপটেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের দাবি, পরিকল্পনাটি মূলত গত নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ, যা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা হিজবুল্লাহ-ইসরাইল সংঘাতের অবসান ঘটাতে সাহায্য করবে।
কিন্তু হিজবুল্লাহ বলছে, এই উদ্যোগ আসলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের স্বার্থে নেওয়া একটি দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত। বৈরুত থেকে একটি বার্তাসংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেনাবাহিনীর ওই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। এর আগে বুধবার হিজবুল্লাহ সংসদীয় ব্লক সরকারকে তাদের এই পদক্ষেপ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটির দাবি, মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রদ্রোহী এবং জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।
লেবাননের একটি সংবাদপত্র জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ ও আমাল আন্দোলনের মন্ত্রীরা শুক্রবারের আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেও অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। এদিকে বৈঠকের আগেই দক্ষিণ লেবাননে ইসরাইলি বিমান হামলা তীব্র হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থার তথ্যানুযায়ী, গত দুদিনে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন এসব হামলায়।
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের লেবানন–বিশ্লেষক ডেভিড উড বলেন, ইসরাইল আসলে একটি বার্তা দিতে চাইছে- মৌখিক প্রতিশ্রুতি বা কাগুজে চুক্তি নয়, বরং বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমেই নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যদি মন্ত্রিসভা পরিকল্পনাটি অনুমোদন করে, তাহলে হিজবুল্লাহ সরকারে থাকা শিয়া মন্ত্রীদের পদত্যাগে চাপ দিতে পারে কিংবা রাস্তায় গণবিক্ষোভও সংগঠিত করতে পারে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লেবাননের পার্লামেন্ট স্পিকার এবং হিজবুল্লাহ-মিত্র আমাল আন্দোলনের নেতা নাবিহ বেরি রবিবার আহ্বান জানিয়েছেন আলোচনাকে শান্তিপূর্ণ ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য।
ইএ/টিকে