ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে যা করবেন

পরিবার, সমাজ ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ পরিচালনা ও শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টিতে ইতিবাচক মনোভাব অদৃশ্য শক্তি হিসেবে কাজ করে। এটি মানুষের মধ্যে মানবীয় গুণাবলী ফুটিয়ে তুলে। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে হিংসা-বিদ্বেষ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বিদায় নিতে বাধ্য হয়। চির শত্রু পরম বন্ধুতে রূপান্তরিত হয়।

ইতিবাচক মনোভাব স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠেনা। এর জন্য প্রয়োজন চেষ্টা ও সদিচ্ছার মিলিত প্রচেষ্টা। তবে কিছু উপায় আছে, যেগুলো অনুসরণ করলে আপনি যে পরিস্থিতিতে যেখানেই থাকেন না কেন সর্বদা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতে পারবেন।

আমরা জানি, এনজাইটি ডিজঅর্ডার বিশ্বজুড়ে বহুল আলোচিত একটি সমস্যা। নাতালিয়া ব্রাইটহাম অ্যান্ড ওইমেনস হাসপাতালের পরিচালক ড: নাতালিয়া ডাত্তিলো বলেন, “যখন আমরা সাইকোলজিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি, এনজাইটি ডিজঅর্ডারকে আমরা মূলত ‘ভুল হিসাব’ (মিসক্যালকুলেশন) বিবেচনা করে থাকি। আমরা যখন খারাপ কোনো কিছু ঘটার সম্ভাবনাকে অতিরিক্ত অনুমান করতে থাকি এবং সেটি সামলাতে আমাদের যে সক্ষমতা রয়েছে তা তুচ্ছ করি তখন উদ্বেগের সূচনা ঘটে।”

অর্থাৎ এনজাইটি ডিজঅর্ডারের প্রধান কারণ হলো নেতিবাচক ভাবনা-চিন্তা। আমাদের অপ্রয়োজনীয় এসব নেতিবাচকতা মন থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়ার মধ্য দিয়ে আমরা এনজাইটি ডিজঅর্ডার থেকে মুক্তি পেতে পারি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতিবাচকতার অভ্যাস গড়ে তোলা হলে উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

চলুন জেনে নিই ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলার কৌশল-

ভাবনার পথ পরিবর্তন করুন
ড: ডাত্তিলো যখন রোগীদের উদ্বেগ নিয়ে কাজ করেন, তখন তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ভাবনা পরিবর্তন করে থাকেন। তিনি বলেন- “আমাদের ভাবনাগুলো কীভাবে আমাদের স্নায়বিকভাবে জড়িত আমি সে বিষয়ে কথা বলি। যদি আমরা নিজেদের সম্পর্কে, অন্য মানুষ সম্পর্কে এবং জগত সম্পর্কে যেভাবে চিন্তা করি সেভাবে তা পরিবর্তন করতে চাই, তাহলে বুঝতে হবে যে নতুন রাস্তা তৈরি করতে সময় লাগে।”

তিনি আরও বলেন, আমাদের মস্তিষ্ক নমনীয় ও পরিবর্তনশীল। এটি যদিও সময় সাপেক্ষ, তবে পুনরাবৃত্তি ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে ভাবনা পরিবর্তন করা সম্ভব।

কোনো কিছু চিন্তা করবার অনেকগুলো রাস্তা থাকে, মানুষ চাইলে নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনার পথ ছেড়ে ইতিবাচক পথে ভাবতে পারেন।

ইতিবাচক মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন
বন্ধুত্ব আমাদের অনুপ্রেরণা দান করে। কথায় আছে, “সঙ্গ দোষে, লোহাও ভাসে।” কারণ মানুষ অবচেতনভাবে তার আশপাশের মানুষের দ্বারা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়। তাই অতি নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা করা লোকদের সংস্পর্শ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। সেই সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন ইতিবাচক লোকদের সঙ্গে। তাদের ইতিবাচক মনোভাব আপনাকেও ইতিবাচক হয়ে ওঠতে সহায়তা করবে।

প্রতিদিন একটি ইতিবাচক কাজ করার সিদ্ধান্ত নিন
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে একটি ইতিবাচক কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন এবং সেটি খাতায় লিখে ফেলুন। এটি আপনাকে ইতিবাচক মানসিকতা দান করবে।

ঘুম থেকে ওঠার পর যা আপনি সমাদর করেন এমন কিছু করার সিদ্ধান্ত নিন। ‘আমাকে করতেই হবে’ এমন চিন্তার বদলে ‘আমি করতে চাই’ এমন ভাবনা গড়ে তুলুন। যদি এমন হয় যে সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনাকে বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে আসতে হবে। তাহলে, “আমাকে অবশ্যই বাচ্চাদেরকে দিয়ে আসতে হবে” এরকম না ভেবে আপনি এভাবে ভাবতে পারেন যে, “আমার বাচ্চাগুলো সুস্থ আছে ফলে তারা স্কুলে যেতে পারছে” অথবা “আমার গাড়ি আছে, যাতে করে আমি আমার বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে আসতে পারি”।

নিজেকে ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা ভাবা বন্ধ করুন
আপনি অবশ্যই একজন ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা নন, এই কথাটি স্বীকার করতে শিখুন। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা আমরা কেউ জানি না। সুতরাং নেতিবাচক কিছু ভেবে নিজের শারীরিক মানসিক ক্ষতি করার কোনো মানে নেই।

একবার এরকম হয়েছে তাই বারবার একইরকম হবে, এমন ভাবনা প্রচণ্ড নেতিবাচক মানসিকতার উদাহরণ। বারবার সব কিছুর পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে এমনটা ধরে নেয়ার কোনো যুক্তি নেই।

ভাগ্যকে দোষ দেয়া বন্ধ করুন
আমাদের সব সফলতা ও ব্যর্থতার পেছনে নিজেদের অবদানই বেশি। কিন্তু দেখা যায়, আমাদের কোনো ব্যর্থতা বা অযাচিত কোনো খারাপ ঘটনার জন্য বা কোনো সমস্যায় পড়লে সব সময় আমরা পরিবারকে দোষারোপ করতে থাকি। নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করি। এসব দোষ দেয়া বন্ধ করুন। ব্যর্থতা ভুলে গিয়ে তার কারণগুলি খুঁজে বের করুন, সমস্যা নিয়ে এত না ভেবে তার সমাধান নিয়ে ভাবনা শুরু করুন। তথ্যসূত্র: হেলথলাইন.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সাফল্য নয়, সংগ্রামই তৈরি করেছে ঋতুপর্ণাকে Jul 04, 2025
img
'সে তো আজও বোঝে না' - সোহম চক্রবর্তীর অচেনা রূপ ফার্স্ট লুকে! Jul 04, 2025
img
সাজিদ খানের সঙ্গে তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এষা Jul 04, 2025
img
আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার এখনো পাই নাই: আবু সাঈদের ভাই Jul 04, 2025
জিম নয়, জাদুকরী পানীয়ই অক্ষয়ের ফিটনেসের চাবিকাঠি! Jul 04, 2025
ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন জুলাই শহীদ রনির মা! Jul 04, 2025
img
প্রচারের চেয়ে অভিনয়ে বেশি মনোযোগ অমৃতা চট্টোপাধ্যায়ের Jul 04, 2025
img
বিচার-সংস্কারের মধ্য দিয়ে নির্বাচন আমাদের মূল লক্ষ্য : হাসনাত আবদুল্লাহ Jul 04, 2025
img
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ পরিবারের কেউ ভর্তি হতে এলে বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে : উপাচার্য Jul 04, 2025
img
‘প্রজাপতি ২’ সিনেমায় দেব-জ্যোতির্ময়ী জুটি, এল আনুষ্ঠানিক ঘোষণা Jul 04, 2025
img
ধনেপাতার কেজি ৬০০ টাকা Jul 04, 2025
img
আবু সাঈদের রক্তের সঙ্গে কেউ বেইমানি করবেন না: এটিএম আজহারুল ইসলাম Jul 04, 2025
img
১৬ বছর পর ধরা পড়ল ‘গুডু আরিফ’ Jul 04, 2025
স্বাধীনতা দিবসের আগেই ট্রাম্পের 'বিগ বিউটিফুল বিল' পাস Jul 04, 2025
img
‘ট্রেটর্স’ জিতেও শান্তি নেই, শুভেচ্ছার বদলে হুমকি পাচ্ছে উরফি! Jul 04, 2025
img
দীর্ঘ বিরতির পর আবারও মঞ্চে ব্ল্যাকপিঙ্ক Jul 04, 2025
img
সংবিধান ছুড়ে ফেলার কথা বললেই তা বাতিল হয়ে যায় না: রিজভী Jul 04, 2025
img
তিন সপ্তাহ পর ইরানে অবতরণ করল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট Jul 04, 2025
img
পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ ফোনালাপে কোনো অগ্রগতি হয়নি : ট্রাম্প Jul 04, 2025
img
আমার নাম ভাঙিয়ে কেউ যদি চাঁদা দাবি করে, সে আমার লোক নয় : সারজিস Jul 04, 2025