ভিটামিনের ভাণ্ডার মিষ্টি কুমড়া

মিষ্টি কুমড়া দেখতে যতটা সুন্দর, এর উপকারিতাও ততটাই বেশি। মিষ্টি কুমড়া বৈজ্ঞানিক নাম Cucurbita moschata, যা Cucurbitaceae পরিবারভুক্ত। এটি এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি। যা মিষ্টি লাউ নামেও পরিচিত।

আমাদের দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়ে থাকে। এটি একটি খরিপ মৌসুমের সবজি, তবে রবি মৌসুমেও ব্যাপকভাবে চাষ হয়। কাচা বা পাকা মিষ্টি কুমড়া ভর্তা, ভাজি কিংবা ঝোল করে তো খাওয়া যায়ই, পাশাপাশি তৈরি করা যায় সুস্বাদু হালুয়া। এছাড়া মিষ্টি কুমড়া গাছের কচি ডগা ও পাতা রান্না করে সবজি হিসাবে খাওয়া যায়।

পুষ্টিবিদদের মতে, খাদ্যতালিকায় নিয়মিত মিষ্টি কুমড়ার উপস্থিতি আপনাকে অনেক অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে রাখবে। কেননা মিষ্টি কুমড়া এমন একটি সবজি, যার রয়েছে নানাবিধ পুষ্টিগুণ। আর পাকা মিষ্টি কুমড়া ভিটামিন -এ সমৃদ্ধ সবজি।

পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম আহার উপযোগী কুমড়ায় রয়েছে আমিষ ১ দশমিক ৪ গ্রাম, শর্করা ৪ দশমিক ৫ গ্রাম, চর্বি ০.৫ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৭ গ্রাম, ভিটামিন-বি ০.৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ২৬ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৮ মিলিগ্রাম, কোলেস্টেরল দশমিক ০৬ মিলিগ্রাম, লোহা ০.৭ মিলিগ্রাম ও বিটা ক্যারোটিন ৭২০০ মাইক্রোগ্রাম। এছাড়াও বি কমপ্লেক্স, সি, ই, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংক, ফ্লেভনয়েড পলি ফেনলিক, অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট উপাদান সমূহ যেমন লিউটিন, জ্যানথিন রয়েছে।

চলুন জেনে নিই মিষ্টি কুমড়োর অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা-

দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কুমড়া হলো বিভিন্ন ধরণের ভিটামিনের ভাণ্ডার। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-এ, সি, ই, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং আরও অনেক উপাদান। যা টিস্যুকে রক্ষা করে থাকে।

ওজন কমাতে সহায়ক
মিষ্টি কুমড়াতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম। কিন্তু এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও পটাশিয়াম আছে। কুমড়ার ফাইবার দেহের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। পটাশিয়াম দেহ থেকে অপ্রয়োজনীয় পানি ও লবণ বের করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
পুষ্টি ও ফাইবারে ভরপুর মিষ্টি কুমড়া খেলে দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। কুমড়া দেহের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়রিয়া সমস্যায় দূর করতে সাহায্য করে এবং কাঁচা কুমড়োর রস মানবদেহের অ্যাসিডিটি সমস্যা রোধ করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়
কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম উপাদান আছে, যা মানবশরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন-সি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে।

ক্যান্সার দূরে রাখে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়া ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরল কম রাখতেও ভূমিকা পালন করে।

চুল ও ত্বক ভালো রাখে
মিষ্টি কুমড়ায় থাকা ভিটামিন এ ও সি চুল ও ত্বক ভালো রাখে। তাই চকচকে উজ্জ্বল চুল ও সুন্দর ত্বকের জন্য নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন।

গর্ভবতী নারীদের জন্য
মিষ্টি কুমড়া ও এর বীজ গর্ভবতী মায়েরা তাদের অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যর জন্য নির্দ্বিধায় খেতে পারেন। মিষ্টি কুমড়া গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতা রোধ করে অকাল প্রসবের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

চোখের যত্নে
এককাপ পরিমাণ রান্না করা মিষ্টি কুমড়া আমাদের চোখের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করতে অন্যান্য খাবার থেকে ১০০ গুণ বেশি কাজ করে। বিটাক্যারোটিন ও আলফা-ক্যারোটিনের মতো ক্যারটিনয়েডসমূহ চোখের ছানিপড়া রোধসহ চোখের রেটিনা কোষ রক্ষা করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় তা সহজেই হজম করতে সাহায্য করে। হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে মিষ্টি কুমড়ার জুড়ি নেই।

বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না
মিষ্টি কুমড়াতে আছে প্রচুর পরিমাণে জিংক ও আলফা হাইড্রোক্সাইড। জিংক ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: