জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বললেও ফলাফল মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস)। তাদের দাবি, গণতান্ত্রিক চর্চা ও শিক্ষক–শিক্ষার্থীর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে নির্বাচনের ফলাফলকে তারা গ্রহণ করবে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বাগছাস নেতারা। ছাত্রদলসহ পাঁচটি প্যানেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর রাতেই সংবাদ সম্মেলন করে বাগছাস।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাগছাস সমর্থিত ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও বাগছাস জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জল। পরে তিনি ও জিএস প্রার্থী আবু তৌহিদ মো. সিয়াম সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
সিয়াম বলেন, “জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়াটাই ইতিবাচক। সাত-আট হাজার শিক্ষার্থী প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ভোট দিয়েছেন, আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। তাই এই নির্বাচনকে আমরা বর্জন করছি না। তবে এটি যে ত্রুটিপূর্ণ, সেটি আমরা স্পষ্টভাবে বলছি।”
তিনি আরও বলেন, “৩২ বছর পর জাকসু ফিরে পাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নির্বাচনের ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও এটি শিক্ষক–শিক্ষার্থীর ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য। যদি আমরা নির্বাচন বর্জন করি এবং এটি বানচাল হয়, প্রশাসন হয়তো আবারও দীর্ঘ সময় নির্বাচন স্থগিত রাখবে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলবে।”
বাগছাসের লিখিত বক্তব্যে আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল। মনোনয়ন জমাদানের সময় বাড়ানো, প্রার্থিতা বাতিল, ব্যালট পেপার ছাপানো নিয়ে বিভ্রান্তি, ডোপ টেস্টের ফলাফল প্রকাশ না হওয়া—এসব বিষয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ভোটের আগের রাতে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে উপস্থিতি, পুলিশ পাহারা ছাড়া ব্যালট বাক্স পরিবহন এবং পোলিং এজেন্ট নিয়োগে অব্যবস্থাপনা শিক্ষার্থীদের আস্থায় আঘাত করেছে।”
ভোটের দিনও অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বিভিন্ন হলে অমোচনীয় কালি ব্যবহার করা হয়নি বা সহজেই মুছে গেছে, অনেক ব্যালটে ছবি ছিল না, পরিচয় যাচাই ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং কিছু হলে প্রার্থী ও সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে দাবি করে উজ্জ্বল বলেন, ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল ভোটকেন্দ্রে লিফলেট বিতরণ, টোকেন সরবরাহ, লাইন জ্যামিংসহ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে। এছাড়া নির্বাচনের আগের রাতে তাদের বিরুদ্ধে গুজব ও প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়, যা নির্বাচনের ফল প্রভাবিত করার চেষ্টা ছিল।
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ হয়। রাত সোয়া ১০টায় ভোট গণনা শুরু হয়, যা চলমান রয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, পূর্ণাঙ্গ ফলাফল শুক্রবার দুপুরে প্রকাশ হতে পারে।
২৩ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় বাগছাসের ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম’। প্যানেলে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আরিফুজ্জামান উজ্জল, জিএস পদে আবু তৌহিদ মো. সিয়াম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে মালিহা নামলাহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে জিয়া উদ্দিন আয়ান।
এমআর