জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান এবং তার স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে এক দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয় এই দুজনকে। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে তাদের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এই সময় তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত মুহূর্ত ঘটে, যখন মতিউর রহমান কথা বলতে গিয়ে স্ত্রীর কাছে ধমক খান। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় লায়লা কানিজ তার স্বামীকে বলেন, 'তুমি চুপ থাকো। তোমার জন্য এসব হয়েছে।' এই ধমকের পর মতিউর চুপ হয়ে যান এবং স্ত্রীর সঙ্গে কিছুক্ষণ ফিসফিস করে কথা বলতে থাকেন।
এ সময়, আইনজীবীরা তাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন এবং কীভাবে মামলা মোকাবেলা করতে হবে সে সম্পর্কে আলোচনা চলছিল। এমনকি এক পর্যায়ে লায়লার বোন এসে সাবধান করে দেন, 'এখানে সাংবাদিক আছে, সাবধানে কথা বলো।'
বিচারক ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে এজলাসে উপস্থিত হন এবং মামলার শুনানি শুরু হয়। এরপর, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা সাবিকুন নাহার আসামিদের তিন দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। তিনি বলেন, 'এরা ভুয়া কোম্পানি ও কাগজপত্র ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই কোম্পানি পরে আর চালু হয়নি, আর তারা মানিলন্ডারিং ও টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত।'
এদিকে, আসামিদের পক্ষে আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন। তিনি দাবি করেন, দুদকের প্রমাণমূলক বক্তব্য মামলার এজাহারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এছাড়া, তিনি বলেন, 'মতিউর রহমান অসুস্থ, তার উচ্চ রক্তচাপও রয়েছে, যে কোনো সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে। তাই রিমান্ড না দিয়ে, প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন জানাচ্ছি।'
এর পর আদালত তাদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
আসামিদের পক্ষের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান কাঠগড়ায় স্ত্রীর ধমকানোর বিষয়ে বলেন, 'এটা তেমন কিছু ছিল না। মতিউর রহমান আদালতে কথা বলতে চেয়েছিলেন, তবে স্ত্রীর কথায় তিনি চুপ থাকেন।'
এদিকে, হাজতখানার ইনচার্জ উপপরিদর্শক শেখ কামাল জানান, 'লায়লা কানিজ দুপুরে খাবারের কথা বলেছিলেন, কিন্তু নিয়মানুযায়ী বাইরে খাবার দেওয়ার অনুমতি ছিল না। সরকারি খাবার হিসেবে কলা, রুটি ও পানি দেওয়া হয়, তবে তিনি তা নেননি।'
দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা গোপন করেছেন এবং অপরাধলব্ধ আয়ে ৫৩ কোটি টাকার সম্পত্তি অর্জন করেছেন। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে, এবং তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তকারীরা জানতে চান, এই জালিয়াতির সঙ্গে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না।
এছাড়া, তাদের মেয়ে ফারজানা রহমানের মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির অর্জনে সহযোগিতার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলে দুদক জানিয়েছে।
এমকে/এসএন