রাজনীতিতে নতুন বিপদের আলামত বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আলোচিত বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার রাজনীতির ফিলোসফার বা রাজনীতির দার্শনিক রূপে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন। এই ভদ্রলোকটি অনেক সময় যে কথাবার্তাগুলো বলেন প্রায় সব কথাই প্রথাবিরুদ্ধ। আমি বা আপনি তার অনেক কথার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারি।
কিন্তু তার সততা নিয়ে, তার জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন করার মতো দুঃসাহস অন্তত আমার নেই। তিনি বিভিন্ন সময় তার মতাদর্শ পরিবর্তন করেছেন। কখনো কখনো তিনি তার সঙ্গী সাথীদের পরিবর্তন করেছেন। রাজনীতি মূলত তার পেশা নয়। রাজনীতিকে তিনি দর্শন হিসেবে দেখেন।’
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় রনি বলেন, ‘বিএনপি খুব দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে। তারা কোনো অবস্থাতেই এনসিপির যে আধিপত্য এবং তাদের যে গুরুত্ব এটা মানতে চাচ্ছে না। এই বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব তৈরি হয়েছে, এনসিপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এমনকি ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কিন্তু ড. ইউনুস যেটা মনে করছেন, যদি তাকে সেফ এক্সিট নিতে হয়, তাহলে অবশ্যই বিএনপির সাহায্য এবং সহযোগিতা তার দরকার। এজন্য বিএনপির সঙ্গে আসলে তিনি একটা সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করছেন।’
‘কিন্তু এরই মধ্যে বিএনপির যারা বুদ্ধিজীবী ছিলেন, যাদের সবার সঙ্গে বিএনপির একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে এবং এই বুদ্ধিজীবীদের একটা বিরাট অংশ জামায়াত নিয়ে নিয়েছে। এ যাবতকালে যারা বিএনপিকে বুদ্ধি, পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছে, তারা এখন বিএনপির পক্ষে কেউ কথা বলছে না।
তারা এখন অনেকেই জামায়াতের পক্ষে কথা বলছেন। আবার জামায়াতের অনেক লোক দীর্ঘদিন যারা জামায়াতকে সাহায্য করেছেন, তারা আবার হঠাৎ করে জামায়াত বিরোধী হয়ে গেছেন। কিন্তু তারা বিএনপির বিরোধী হননি।’
‘তো এইদিক থেকে হঠাৎ করে যখন আমি এই ফরহাদ মজহারের একটা বক্তব্য শুনলাম যে- বিএনপি একটি অকৃতজ্ঞ দল। তো এই অকৃতজ্ঞ দলের নেপথ্যে তার যে যুক্তি সেটি হলো- বিএনপি এখন বলছে পুরো বিপ্লব তারা করেছে। বিপ্লবের মাস্টারমাইন্ড তারা এবং এই বিপ্লবের ফলে যে পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এটার একমাত্র সুবিধাভোগী তারা। আগামীতে সরকার তারা গঠন করবে। কাজেই আওয়ামী লীগ যে ধরনের ন্যারেটিভ লালন করত যে দেশটি তাদের বাপের, মুক্তিযুদ্ধ তারা করেছে ইত্যাদি। ঠিক একই কাজ এখন বিএনপি করছে বলে ফরহাদ মজহার মনে করেন।’
‘তার বক্তব্য হলো- এই যে এনসিপি, এখন আমরা তাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার চেষ্টা করছি কিংবা হাসনাত, সারজিস তাদের ভুল ধরার চেষ্টা করছি, মাহফুজদের ভুল ধরার চেষ্টা করছি। অথচ এই মানুষগুলো তাদের জীবনকে বুলেটের মুখে নিয়ে এবং শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকতেন সবাইকে তিনি ফাঁসিতে চড়াতেন; এত ঝুঁকি নিয়ে যারা জীবন দেওয়ার জন্য সামনে এগিয়ে গেল, তাদেরকে এখন যেভাবে অপদস্ত করা হচ্ছে বা ছোট করা হচ্ছে তার প্রেক্ষিতে ফরহাদ মজহার এমন কথা বলেছেন।’
‘এনসিপির যারা লোকজন, তারা খোঁচা দিয়ে বিএনপিকে বলার চেষ্টা করছেন যে; আরে রাখেন আপনাদের মুরোদ দেখা আছে। যেদিন খালেদা জিয়ার বাসার সামনে বালির ট্রাক ছিল, সেদিন আপনারা কোথায় ছিলেন? যেদিন বেগম জিয়াকে জেলে নিয়ে যাওয়া হলো, আপনারা কোথায় ছিলেন? যেদিন তারেক রহমানকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো সেদিন কোথায় ছিলেন? এসব কথা জামায়াতও বলছে, এনসিপিও বলছে বিএনপিকে ছোট করার জন্য।’
‘আবার বিএনপির যারা লোকজন তারাও এনসিপিকে সরাসরি না বলে তারা জামায়াতকে বলার চেষ্টা করছে- একটা সময় তো গোলাম আজমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, জামায়াতের অফিসে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কাজেই বিএনপিকে যেভাবে ভীরু কাপুরুষ বলা হচ্ছে, জামায়াতও তেমন ভীরু কাপুরুষ; এরকম একটা বিতর্ক চলছে। ঠিক সেই সময়টিতে হঠাৎ করে ফরহাদ মজহার বিএনপিকে একটি অকৃতজ্ঞ দল বললেন।’
কেএন/টিএ