ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও সক্রিয় হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ ১০ বছর পর সরাসরি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যেতে পারে তাকে, দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার নির্বাচনী সফরের জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি বুলেটপ্রুফ মিনিবাস জাপান থেকে আনা হচ্ছে। তার স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিবেচনায় যানবাহনটি কাস্টম ডিজাইনে প্রস্তুত করা হয়েছে। রোববার (৫ অক্টোবর) বিএনপির পক্ষ থেকে ওই যানবাহনটির আমদানির অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্যও জাপান থেকে আরেকটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনা হবে।বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানান, এই মিনিবাসেই খালেদা জিয়া দেশজুড়ে নির্বাচনী সফরে অংশ নেবেন। তার সঙ্গে থাকবেন নিরাপত্তা কর্মকর্তা, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও সহকারী দল। সফরে বিভিন্ন জেলায় যাত্রাবিরতি ও জনসভায় যোগ দেওয়ার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়া প্রার্থী হতে পারেন বলে দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন। দলীয় সূত্র আরও জানায়, সশরীরে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে; তবে শারীরিক অসুবিধার কারণে যদি তা সম্ভব না হয়, প্রযুক্তির সহায়তায় খালেদা জিয়া প্রচারণায় অংশ নেবেন।
বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিজেই মাঠে থাকতে চান। তার মাঠে নামা মানেই কর্মীদের মধ্যে নতুন প্রাণ ফিরে আসবে।
২০১৫ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারে অংশ নেওয়ার পর এবারই প্রথম খালেদা জিয়াকে পূর্ণমাত্রায় প্রচারণায় দেখা যাবে। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা ও নিরাপত্তা বিবেচনায় প্রতিটি পদক্ষেপে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে চলছে প্রচারণার সূচি, ভ্রমণপথ ও জনসভাস্থল নির্ধারণের কাজ। এদিকে নির্বাচনে খালেদা জিয়ার ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথা বলেন তারেক রহমান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আপনাদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কি এ নির্বাচনে কোনো ভূমিকায় থাকবেন? তাকে কি আমরা নির্বাচনে কোনো ভূমিকায় দেখতে পাবো? বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনি এমন একজন মানুষের কথা বলেছেন, যেই মানুষটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, যতবার গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে, প্রতিবার উনি অবদান রেখেছেন। সেই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত বা পুনরুদ্ধার করার জন্য।’
তিনি বলেন,‘এবারও আপনাদের সবার চোখের সামনেই ঘটেছে যে কীভাবে স্বৈরাচারের সময় তার ওপরে অত্যাচারের খড়্গহস্ত নেমে আসে। কিন্তু উনি আপস করেননি। এরকম একজন ব্যক্তি আজ অসুস্থ। কেন কীভাবে উনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেন, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হলো। আমরা দেখেছিলাম একজন সুস্থ মানুষ গেছেন। কিন্তু যখন বেরিয়ে এসেছেন একজন অসুস্থ মানুষ বেরিয়ে এসেছেন। তাকে চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এসবই ঘটনা দেশবাসী জানেন। তারপরেও যে মানুষটির এত বড় অবদান রয়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার। আমি সেই দলের একজন কর্মী হিসেবে বিশ্বাস করি বা বিশ্বাস করতে চাই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যেই প্রত্যাশিত, জনপ্রত্যাশিত যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, উনার (খালেদা জিয়া) শারীরিক সক্ষমতা যদি অ্যালাও করে উনাকে নিশ্চয়ই উনি কিছু না কিছু ভূমিকা রাখবেন।’
সেটা কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ হতে পারে? এমন প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, ‘এটি আমি এখনো বলতে পারছি না। আমি মাত্রই বললাম যে উনার শারীরিক বা ফিজিক্যাল অ্যাবিলিটির ওপরে বিষয়টি কিছুটা হলেও নির্ভর করছে।’
ইউটি/টিকে