রাজশাহী পলিটেকনিকেও ছাত্রলীগের ‘টর্চার সেল’

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের একটি ‘টর্চার সেল’ এর সন্ধান পাওয়া গেছে।

রোববার দুপুরে ওই ‘টর্চার সেল’ থেকে বেশ কিছু রড, লাঠি ও লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে।

জানা গেছে, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষকে তুলে নিয়ে গিয়ে পুকুরের ফেলে দেয়ার ঘটনায় তিন সদস্যের কমিটি করেছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। রোববার এ কমিটি গঠন করা হয়।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (প্রশাসন) স্বাক্ষরিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (পিআইডব্লিউ) এসএম ফেরদৌস আলমকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন- বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) নুরুল ইসলাম ও রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ওমর ফারুক।

রোববার বিকেলে কমিটির তিন সদস্য রাজশাহী পৌঁছে তদন্ত শুরু করেন। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সিসিটিভির ফুটেজ দেখেন। এ সময় তদন্ত দল ক্যাম্পাসে একটি টর্চার সেলের সন্ধান পায়। পুকুরের পশ্চিম পাশের ভবনের ১১১৯ নম্বর কক্ষে এ টর্চার সেল থেকে লোহার রড, পাত ও পাইপ পাওয়া যায়। পরে সেগুলো পুলিশ হেফাজতে দেয়া হয়।

এ সময় তদন্ত কমিটির কাছে কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্র জানায়, ওই টর্চার সেলটি ছাত্রলীগের। ওই কক্ষের সামনে ছাত্রলীগের টেন্ট। ছাত্রলীগের নেতাদের কথা না শুনলে সেখানে নিয়ে গিয়ে টর্চার করা হতো। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধরে এনে রড ও লাঠি দিয়ে নির্যাতন করা হতো। চলতো ফ্রি স্টাইলে মারধর।

এক শিক্ষার্থী জানায়, এখানে ছাত্রলীগ একটি গণরুম বানিয়েছে, যেটি আসলে টর্চার সেল। ওরা এখানে এসে আড্ডা মারে। ওদের যতো অপকর্ম আছে এখানেই প্ল্যান হয়, এখানেই সংগঠিত হয়।

এক শিক্ষক জানান, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে বাধা দিলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শিক্ষকদের চেয়ার তুলে মারতে পর্যন্ত আসে।

ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন অবৈধ দাবি নিয়ে এসে সবসময় ঝামেলা করে বলে অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ। তিনি জানান, পরীক্ষায় শূন্য পেলেও পাশ করিয়ে দিতে হবে, একদিনও ক্লাসে আসেনি এমন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিতে হবে, এমনসব অযৌক্তিক দাবি করত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

তিনি বলেন, এই গ্রুপের (ছাত্রলীগ) ছেলেরা কেউই ক্লাস করে না। প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পোশাকও পরে না।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক এসএম ফেরদৌস আলম বলেন, রোববার সকালে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বিকেলে তারা দুইজন ঢাকা থেকে বিমানে রাজশাহী আসেন। আর কমিটির অপর সদস্য রাজশাহীতে ছিলেন। রাজশাহী পৌঁছেই তারা তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তারা তদন্ত করে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

এদিকে, অধ্যক্ষকে পানিতে ফেলার ঘটনায় শনিবার রাতভর মহানগরীর বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে ২৬ জনকে আটক করে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ। তবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার দুপুরে অধ্যক্ষের দায়ের করা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

অধ্যক্ষকে পুকুরে নিক্ষেপ: সেই ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কারের সুপারিশ

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: