দেশে নির্বাচনী ট্রেন লাইনে উঠে গেছে : মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা ১৬ বছর গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের জন্য, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লড়াই করেছি। বিএনপি একটি পরীক্ষিত রাজনৈতিক দল। কারো জন্য আর অপেক্ষা নয়। দেশে নির্বাচনী ট্রেন লাইনে উঠে গেছে। কারো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভোটের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।’

তিনি শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মরহুম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম ও হান্নান শাহ-এর নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট স্কুল মাঠে হান্নান শাহ স্মৃতি সংসদ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হওয়ায় মানুষ অনেক খুশি। কারণ দেশে এখন জনপ্রতিনিধি নেই। দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিরা দেশ চালালে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘অপশক্তি জনতার প্রতিরোধে এক বছর আগে পালিয়ে গেছে।

মনে হচ্ছে এখন আমরা স্বাধীন। হাসিনার শাসনামলে আমরা বাড়িতে থাকতে পারিনি, ঘরে ঘুমাতে পারিনি। দেশে একটা বিভীষিকাময় পরিবেশ ছিল। হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে মনে হচ্ছে আমরা নতুন করে স্বাধীনতা পেয়েছি। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।

ড. ইউনূস সবার শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি নোবেল বিজয়ী। এ সরকার গঠনের উদ্দেশ্য ছিল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেই লক্ষ্যে তিনি কাজ করছেন।

ভেঙে পড়া আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন, বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে স্বাভাবিকতা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ব্যাংকের লুটপাট বন্ধ করেছেন। প্রশাসন ও বিচার বিভাগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘ড. ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান যে ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন তার মধ্যে সংস্কারের সবকিছুই বিদ্যমান রয়েছে। একটি দল ইউটিউব ও সামাজিক মাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বলে বেড়াচ্ছে বিএনপি সংস্কার চায় না। আসলে বিএনপি সংস্কারের জন্মদাতা ও ধারক-বাহক। বিএনপিকে সংস্কার শেখাতে হবে না।’

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘শেখ মুজিব ৭৫ সালে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। চারটি পত্রিকা রেখে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নারীদের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, তিনি মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলা সংস্থা গঠন করেছিলেন। তিনি নারীদের চাকরির সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া ছাত্রীদের লেখাপড়া দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিনা মূল্যে করেছিলেন। নারী শিক্ষা এগিয়ে যাওয়ার ফলে দেশে এখন উন্নয়ন হচ্ছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হাসিনার শাসনামলে আমাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। লাখ লাখ মানুষকে নির্যাতন করা হয়েছিল। ইলিয়াস আলীসহ অসংখ্য মানুষকে গুম করা হয়েছিল। যারা আমাদের ওপর নির্যাতন করেছে, তারা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ভারত আমাদের বন্ধু নয়, তারা সীমান্তে মানুষ হত্যা করছে, পানির ন্যায্য হিস্যা দিচ্ছে না। দুই দেশের মধ্যে যে সমস্ত চুক্তি রয়েছে তা রক্ষা করছে না। এমনকি আমাদের নির্বাচন নিয়েও তারা চক্রান্ত করছে। বন্ধুত্ব হতে হবে সমান সমান। পলাতক ফ্যাসিস্টরা যাতে অন্যের ওপর ভর করে ফিরে আসতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘একটি দল ধর্মের কথা বলেন অথচ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করেছিলেন।

জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়েছিল। আজ দেশে ৩২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে। যার অবদান এই জনশক্তি রপ্তানি। মিল-কারখানা তৈরি করে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

তারেক রহমানের ৩১ দফার মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এক কোটি বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। আমাদের একদিকে তরুণ, অন্যদিকে প্রবীণরা রয়েছেন। তাই আর বিলম্ব নয় ধানের শীষের পক্ষে গ্রামে গ্রামে গিয়ে ঘরে ঘরে প্রচার-প্রচারণা শুরু করুন।’

প্রয়াত হান্নান শাহর স্মৃতিচারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ব্রিগেডিয়ার আসম হান্নান শাহর জনগণের প্রতি এবং দলের প্রতি অসীম ভালোবাসা ছিল।তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সামনে রেখেই রাজনীতি করতেন। দলের চরম দুঃসময়ে তিনি বিএনপির হাল ধরেছিলেন। অনেকবার তাকে জেলে যেতে হয়েছিল এবং তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন অকৃত্রিম দেশ প্রেমিক।’

কাপাসিয়া বিএনপির সদস্য সচিব খন্দকার আজিজুর রহমান পেরার সঞ্চালনায় স্মরণসভায় বক্তব্য দেন হান্নান শাহর ছেলে গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক শাহ রিয়াজুল হান্নান, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় নেতা ড. এম এ কাইয়ুম, কেন্দ্রীয় সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান প্রমুখ।

এমআর/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মধ্যরাতে আশুলিয়ার জিরানী বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড Oct 12, 2025
img
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তুমুল সংঘর্ষ Oct 12, 2025
img
বিয়ের গুঞ্জনে এবার নীরবতা ভাঙলেন অভিনেত্রী তৃষা কৃষ্ণান Oct 12, 2025
img
'ফ্রি প্যালেস্টাইন' স্লোগানে মুখর মাঠে নেতানিয়াহুর দেশকে উড়িয়ে দিল নরওয়ে Oct 12, 2025
img
কুমিল্লাকে নিয়ে কটূক্তি করায় নোয়াখালীগামী বাস আটকে রাখে স্থানীয়রা Oct 12, 2025
img
হাতে বাগদানের আংটি, বিজয়কে কবে বিয়ে করছেন রশ্মিকা? Oct 12, 2025
img
বিএনপির ৩১ দফা হাওরবাসীর মুক্তির সনদ : মাহবুবুর রহমান Oct 12, 2025
img
আমরা চাপমুক্ত সাংবাদিকতা দেখতে চাই : সিনিয়র সচিব Oct 12, 2025
img
ইতিহাস গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল নামিবিয়া Oct 12, 2025
img
চট্টগ্রামে কনসার্টে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের জেরে সংঘর্ষ Oct 12, 2025
img
অধিকাংশ সেনা সদস্য চান সীমা লঙ্ঘনকারীরা বিচারের মুখোমুখি হোক : বিএনপি Oct 12, 2025
img
আরিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা করায় বিপাকে সমীর ওয়াংখেড়ে Oct 12, 2025
img
আফগানদের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক সিরিজ হার বাংলাদেশের Oct 12, 2025
img
বিমানবন্দর সড়কে নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম! Oct 11, 2025
img
বিএনপি সরকারে এলে জিডিপির ৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করবে : শামা ওবায়েদ Oct 11, 2025
img
জুলাই অভ্যুত্থানের পর সাংবাদিকদের অবারিত স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে: আজাদ মজুমদার Oct 11, 2025
img

সামান্তা শারমিন

শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যাগুলোকে আইডেন্টিফাই করতে হবে Oct 11, 2025
img
রোববার থেকে দেশে প্রথমবারের মতো টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু Oct 11, 2025
img
মাচাদোকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ায় তীব্র নিন্দা ইরানের Oct 11, 2025
img
জামায়াত সৎ মানুষদের মনোনয়ন দিয়েছে : এটিএম আজহার Oct 11, 2025