আরবী গানের রাজা আমর দিয়াব পা রাখলেন ৬৪ বছরে

‘হাবিবি ইয়া নূরেল আইন’-বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় আরবি গানগুলোর একটি। গানটির গায়ক, গীতিকার ও সুরকার হলেন মিসরের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আমর দিয়াব। তাকে বলা হয় আরব বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে সফল ও প্রভাবশালী পপ তারকা। তার গানের রেকর্ড বিক্রি ৩০ মিলিয়নেরও বেশি, যা মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

আমর দিয়াব জন্মগ্রহণ করেন ১১ অক্টোবর ১৯৬১ সালে মিসরের পোর্ট সাঈদ শহরে। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল। মাত্র ছয় বছর বয়সে তিনি জাতীয় অনুষ্ঠানে মিসরের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুল নাসেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে রাষ্ট্রীয় রেডিওতে প্রচারিত সেই পরিবেশনা দিয়েই তিনি প্রথমবার জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি পান। সঙ্গীতপাগল এই শিশুশিল্পীকে তখন একটি গিটার উপহার দিয়েছিলেন স্থানীয় গভর্নর-যা দিয়াবের সংগীতযাত্রার সূচনা করে।

নব্বইয়ের দশকে যখন অধিকাংশ আরবি গায়ক পশ্চিমা ধাঁচে প্রভাবিত হচ্ছিলেন, তখন দিয়াব উল্টো পথে হাঁটেন। তিনি চেয়েছিলেন আরবি ঐতিহ্যবাহী সুরের সাথে পশ্চিমা রিদম মিশিয়ে এমন এক ধারা তৈরি করতে, যা বিশ্বজুড়ে শ্রোতাদের আকৃষ্ট করবে। ১৯৯০ সালে তার ‘মাতখাফিশ’ অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি আরব বিশ্বের প্রথম মিউজিক ভিডিও তৈরি করেন, যা প্রচারণায় নতুন মাত্রা আনে।

তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায় ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত অ্যালবাম নূর আল-আইন দিয়ে। এই অ্যালবামের গান ‘হাবিবি ইয়া নূরেল আইন’ প্রকাশের পরই সাড়া ফেলে পুরো আরব বিশ্বে। পশ্চিমা ড্যান্স বিট ও আরবি সুরের অনন্য সংমিশ্রণে গানটি ইউরোপ, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় জনপ্রিয়তা পায়। ইউরোপের নৃত্যক্লাবগুলোতেও গানটি নিয়মিত বাজতে থাকে। বিশ্বের নানা ভাষায় গানটির রিমিক্স, কভার ও অনুকরণ তৈরি হয়। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী নচিকেতার ‘রাজশ্রী তোমার জন্য’ গানটিও এর সুরে অনুপ্রাণিত।

এই অ্যালবাম দিয়াবকে এনে দেয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’-এ বেস্ট সেলিং অ্যালবাম ইন দ্য মিডল ইস্ট পুরস্কার। তিনিই ছিলেন প্রথম মিসরীয় শিল্পী, যিনি এই সম্মান অর্জন করেন। পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি আরও তিনবার একই বিভাগে পুরস্কার জেতেন এবং গিনেজ বুকে নাম তোলেন।



আমর দিয়াবের অন্যান্য বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আউয়্যেদুনি’ (১৯৯৮), ‘আলেম আল্লাহ’ (২০০০), এবং বিশ্বব্যাপী হিট ‘তামাল্লি মা’আক’-যা ইংরেজি, ফরাসি ও রাশিয়ানসহ বহু ভাষায় অনূদিত হয়। বলিউডের জনপ্রিয় গান ‘কাহো না কাহো’-ও এই গানের অনুকরণে তৈরি।

২০০৬ সালে তিনি পেপসির বিজ্ঞাপনে বিয়ন্সে, পিঙ্ক, জেনিফার লোপেজ ও ব্রিটনি স্পিয়ার্সের সঙ্গে হাজির হন, যা তাকে বৈশ্বিক তারকাখ্যাতি এনে দেয়। ভাষা, ধর্ম বা সীমান্ত-কোনো কিছুই আমর দিয়াবের সঙ্গীতকে থামাতে পারেনি। রাশিয়া থেকে ব্রাজিল, ভারত থেকে ফ্রান্স-সবখানেই তার গান একযোগে বাজে। নিজের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সংগীত নিজেই এক ভাষা, যা হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলে।” আজ, ১১ অক্টোবর, এই কিংবদন্তি গায়ক ৬৪ বছর পূর্ণ করলেন-আরও একবার প্রমাণ করে যে, সঙ্গীতের কোনো সীমানা নেই।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সাউন্ড গ্রেনেডে উত্তেজনা, প্রেস ক্লাব থেকে সরে শহীদ মিনারে শিক্ষকরা Oct 12, 2025
img
রাতের অন্ধকারে ভোট চাই না : সিইসি Oct 12, 2025
img
এনসিপি দেশপ্রেমিক, গণতন্ত্রে বাধা হবে না : সিইসি Oct 12, 2025
img
আসিয়ান সম্মেলনে ট্রাম্পের সম্ভাব্য যোগদানের প্রতিবাদে কুয়ালালামপুরে বিক্ষোভ Oct 12, 2025
img

ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর

দানবীয় সরকারের পতনে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল Oct 12, 2025
img
'সৌদি আরব ও কাতারের হস্তক্ষেপের পর হামলা বন্ধ করা হয়েছে' Oct 12, 2025
img
আমরা সবাই কাঞ্চন ভাইয়ের পাশে আছি : শাকিব খান Oct 12, 2025
img
সেনাবাহিনীর উদ্যোগে প্রশংসা করলেন জামায়াতের আমির Oct 12, 2025
img
শাহরুখ, সালমান, আমির একসাথে এক মঞ্চে! Oct 12, 2025
img
পাকিস্তান সীমান্তে ট্যাংক-অস্ত্র নিচ্ছে আফগানিস্তান Oct 12, 2025
img
মাইলস্টোনের ৭১ শতাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর এখনও ঘুমে সমস্যা হচ্ছে Oct 12, 2025
img
দীপিকা পাডুকোন ভারতের প্রথম মানসিক স্বাস্থ্য দূত! Oct 12, 2025
img
রাজধানী থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগের ৭ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার Oct 12, 2025
img
জাতীয় নির্বাচনে ১০০ আসনে লড়বে এবি পার্টি Oct 12, 2025
img
সারজিসকে ঘুমের ওষুধ খেতে বললেন সংগীতশিল্পী প্রিন্স মাহমুদ Oct 12, 2025
img
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা Oct 12, 2025
img
উচ্ছেদের পরও ফের দখলে ঢামেকের ফুটপাত Oct 12, 2025
img
সমালোচনা থেকে শক্তি নেওয়া শিখেছে জাহ্নবী: শশাঙ্ক খাইতান Oct 12, 2025
img
ছেলে-মেয়ে সবাই দেশে, একা ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে কী করব : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Oct 12, 2025
img
ময়মনসিংহে এনসিপি ও পরিবহন শ্রমিকদের দ্বন্দ্ব, বন্ধ মহাসড়কে বাস চলাচল Oct 12, 2025