১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠালেন ট্রাইব্যুনাল

মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিন মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এছাড়া গুমের অভিযোগে করা দুটি মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। আর গত বছরের ১৮ ও ১৯ জুলাই রামপুরায় গণহত্যা চালানোর অভিযোগে করা মামলায় শুনানির জন্য ৫ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

এদিকে, শুনানি শেষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আসামিদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে আনলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এখন আসামিদেরকে কোন কারাগারে রাখা হবে তা কারা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।

এদিন সকাল সোয়া ৭টায় কড়া নিরাপত্তায় প্রিজনভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। সাড়ে ৭টায় প্রিজনভ্যান থেকে নামিয়ে তাদের ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।

সেনা কর্মকর্তারা হলেন- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, মেজর জেনারেল মোস্তফা সরোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, কর্নেল মশিউল রহমান জুয়েল, লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবির আহম্মেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, লে. কর্নেল মখচুরুল হক (অব.), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার ও কর্নেল কেএম আজাদ।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের দিন ধার্য রয়েছে। তবে না এলে তাদের হাজির হতে দুটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। আর যদি হাজির হন এবং ট্রাইব্যুনাল জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন, তাহলে কোন কারাগারে থাকবেন তা সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারা কর্তৃপক্ষ।

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে বিরোধী ঘরানার লোকদের গুম করে র‌্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশনের (টিএফআই) গোপন সেলে বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। গত ৮ অক্টোবর এ অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। পরে শুনানি শেষে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি আজকের মধ্যে হাজিরের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল।

একই দিন জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) বা আয়নাঘরে গুমের অভিযোগে আরেকটি মামলায় হাসিনা-তারিকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করা হয়। এছাড়া জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিজিবির কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেন প্রসিকিউশন। সবমিলিয়ে এ তিন মামলায় ২৫ সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন। ৯ অক্টোবর ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে সেনা সদর থেকে জানানো হয়।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর আমলে নেওয়ার জন্য শুনানি শুরু হয় ট্রাইব্যুনালে। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারিসহ আজকের মধ্যে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ওপেনএআই'র অ্যাপ সাজেশন নিয়ে বিতর্ক Dec 08, 2025
img
অস্ট্রেলিয়ার চূড়ান্ত স্কোয়াডে ‘বাংলাদেশি’ ফুটবলার Dec 08, 2025
img
ড্রোন হামলায় চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রের ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত’: জাতিসংঘ Dec 08, 2025
img

আদালত অবমাননার অভিযোগ

নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অব্যাহতি পেলেন বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান Dec 08, 2025
img
মালদ্বীপের পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ Dec 08, 2025
img
সিইসির সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দল Dec 08, 2025
img
আজ ৮ ডিসেম্বর ঝালকাঠি হানাদারমুক্ত দিবস Dec 08, 2025
img
সারা দেশে রাত-দিনে তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে Dec 08, 2025
img
গণতান্ত্রিক যাত্রায় যারাই বাধার সৃষ্টি করবে, তাদের প্রত্যাখ্যান করবে জনগণ: সালাহউদ্দিন Dec 08, 2025
img
ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাতে ফোন করলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো Dec 08, 2025
img
জামায়াত আমিরের সঙ্গে ব্রুনাইয়ের হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ Dec 08, 2025
img
দেবকে চিনতেন না রুক্মিণীর বাবা Dec 08, 2025
img
ব্যাংক খাতের রাজনৈতিক অঙ্গনের স্বেচ্ছাচারিতা কারো অজানা নয় : জিল্লুর রহমান Dec 08, 2025
img

জুলাই আগস্ট হত্যাযজ্ঞ

ওবায়দুল কাদের ও যুবলীগ সভাপতিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ Dec 08, 2025
img
আইনজীবীদের বহর নিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান Dec 08, 2025
img
ইউরোপজুড়ে অভিবাসন বিতর্কে ইতালি এখন কেন্দ্রে Dec 08, 2025
img
পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি আজ Dec 08, 2025
img
মালদ্বীপে বিশেষ অভিযানে ১৮ বিদেশি আটক Dec 08, 2025
img
আইইএলটিএস-এ ভুল ফলাফল ৮০ হাজার শিক্ষার্থীর, বাংলাদেশে প্রশ্নফাঁস Dec 08, 2025
img
শীতকালে পিরিয়ডে কোন ফলগুলো এড়িয়ে চলবেন Dec 08, 2025