নিউইয়র্কের ভোটারদের ইতিহাস সৃষ্টির আহ্বান জানালেন মামদানি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রধান শহর নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে আজ মঙ্গলবার। এই নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি নিউইয়র্কের ভোটারদের ইতিহাস তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন।

ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য শাখার নেতা মামদানির বয়স ৩৪ বছর এবং তিনি মুসলিম। যদি এবারের নির্বাচনে তিনি জয়ী হন, তাহলে নিউইয়র্কের ইতিহাসে দু’টি নতুন ব্যাপার ঘটবে (ক) মামদানি হবেন নিউইয়র্কের ইতিহাসের সবচেয়ে কমবয়সী নির্বাচিত মেয়র এবং (খ) ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন মুসলিম ব্যক্তিকে মেয়র হিসেবে পাবে নিউইয়র্কের বাসিন্দারা।

ভোটগ্রহণের আগের দিন সোমবার শেষবারের মতো প্রচারাভিযানে নেমেছিলেন জোহরান মামদানি। নিউইয়র্কের কুইনস শহরের অ্যাস্টোরিয়াতে বক্তৃতা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে নিজের প্রচারাভিযান শেষ করেন ডেমোক্রেটিক পার্টির এই প্রার্থী। বক্তৃতায় তার নির্বাচনী প্রচারণায় যারা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।

বক্তৃতায় স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের পরিশ্রমের কারণেই আজ আমরা নিউইয়র্কের বাসিন্দারা একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তে আসতে পেরেছি। আমরা সবসময় মেহনতী মানুষের রাজনীতি করি এবং আমাদের প্রচারাভিযানেও আমরা সেই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। নিউইয়র্ক সিটি আমাদের নিজেদের শহর এবং আপনাদের সবার অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার ভিত্তিতে এই শহরের রাজনীতি আমরা নতুনভাবে নির্মাণ করব।”

মামদানির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অংশ নিয়েছেন ১ লাখেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী। প্রচারাভিযানের শেষ দিনের ভাষণে স্বেচ্ছাসেবীদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে মামদানি বলেন, “আমাদের কাজ শেষ। সবকিছু মাঠে ফেলে আসুন। এখন নিউইয়র্ক সিটির ভোটারদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়।”

জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডায়। তার বাবা মাহমুদ মামদানি ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন লেখক, তাত্ত্বিক, অধ্যাপক এবং উগান্ডার নাগরিক, মা মীরা নায়ার একজন সুপরিচিত ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক। জন্মসূত্রে মুসলিম মামদানি নিজেকে ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

শেষ দিনের প্রচারাভিযানে অ্যাস্টোরিয়াকে বেছে নেওয়ারও কারণ আছে। এই অ্যাস্টোরিয়া থেকেই রাজনীতিবিদ হিসেবে উত্থান ঘটেছিল জোহরান মামদানির। মেয়র নির্বাচনের আগে কাউন্সিলর হিসেবে নিউইয়র্ক সিটি কর্পেরেশনে অ্যাস্টোরিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি।

এবারের মেয়র নির্বাচনে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হয়েছেন কার্টিস স্লিওয়া, তবে মামদানির সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুওমোকে। মামদানির মতো তিনিও ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা এবং জ্যেষ্ঠ নেতা। এবারের মেয়র নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য তিনিও দলের কাছে আবেদনও করেছিলেন।

এই অবস্থায় কে দলীয় প্রার্থী হবেন তা নির্ধারনে গত ২৫ জুন অভ্যন্তরীণ নির্বাচন করে ডেমোক্রেটিক পার্টির নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য শাখা। সেই নির্বাচনে কুওমোকে পরাজিত করে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নিজের নাম নিশ্চিত করেন মামদানি। কুওমোও নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ান।

তবে পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন কুওমো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে কুওমোকে সমর্থন দিয়েছেন। সেই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, মামদানি যদি নির্বাচিত হন তাহলে নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক বরাদ্দ বন্ধ করে দেবেন তিনি।

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যটি অভিবাসী অধ্যুষিত। এ কারণে নিউইয়র্ক সবসময়েই ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যতম ঘাঁটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। মামদানির স্বেচ্ছাসেবী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তাসনুভা খান। সোমবার মামদানির শেষ জনসভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে তাসনুভা বলেন, “আমার দারুণ লাগছে। আমি তিন মাস ধরে জোহরান মামদানির প্রচারাভিযান টিমে আছি। এই যাত্রাটা দারুন ছিল।”

“তবে আমি এবং টিমের অন্যান্য সদস্যরা সংযত থাকার চেষ্টা করছি এবং ভোটারদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছি। কারণ শেষ পর্যন্ত এটা নির্বাচন এবং এখানে জিততে হলে আপনাকে সর্বোচ্চ ভোট পেতে হবে।”

নিউইয়র্কের বাসিন্দা লিসা গঞ্জালেস জানিয়েছেন, তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির সমর্থক এবং জোহরান মামদানির শুভাকাঙ্ক্ষী। তবে তারপরও মামদানিকে ভোট দেবেন কি না তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন।

“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, মামদানি জিতলে সরকারি বরাদ্দ বন্ধ করে দেবেন। তিনি যদি সত্যিই এমন কিছু করেন, তাহলে সাধারণ ও সীমিত আয়ের লোকজন বড় বিপদে পড়বেন। আমি এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি যে কাকে ভোট দেবো”, আলজাজিরাকে বলেন লিজা।

সূত্র : আলজাজিরা
এসএস/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ভোটের সময় ৫ দিন মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী Dec 21, 2025
img
যে যেভাবেই বলেন না কেন, আমি নির্বাচন দেখি না : জিল্লুর রহমান Dec 21, 2025
img
আগুনে পুড়ে বিএনপি নেতার মেয়ের মৃত্যুতে মির্জা ফখরুলের শোক Dec 21, 2025
img
গোপালগঞ্জে সাংবাদিক ডেকে আরও ১০ আ.লীগ কর্মীর পদত্যাগ Dec 21, 2025
img
ওসমান হাদিকে নিয়ে ফেসবুকে ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ২ Dec 21, 2025
img
ন্যায়বিচারের পথ বন্ধ, রাজপথেই হবে ফয়সালা : ইমরান খান Dec 21, 2025
img
বিপিএল শুরুর সময়ে পরিবর্তন Dec 21, 2025
img
বিশ্ববাজারে বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম Dec 21, 2025
img
এ কে খন্দকারের জানাজা রোববার, অংশ নেবেন প্রধান উপদেষ্টা Dec 21, 2025
img
শহিদ ওসমান হাদির কবর দেখতে মানুষের ভিড়, রাতভর প্রহরায় থাকবে পুলিশ Dec 21, 2025
img
ওসমান হাদির জানাজা-দাফন শৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় ডিএমপির কৃতজ্ঞতা Dec 20, 2025
img
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ওসমান হাদির জানাজায় জনস্রোতের খবর Dec 20, 2025
img
জনতার আস্থার বাতিঘর তারেক রহমান : মাহবুবুর রহমান Dec 20, 2025
img
কোস্ট গার্ডের পৃথক অভিযানে আটক ৬ Dec 20, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে ‘ডিভি’ লটারি স্থগিত, ‘ট্রাম্প গোল্ড কার্ড’ চালু Dec 20, 2025
img
‘ধুরন্ধর’কে ধূলিসাৎ করার চ্যালেঞ্জ ধ্রুব রাঠির! Dec 20, 2025
img
এ কে খন্দকারের মৃত্যুতে এনসিপির শোক প্রকাশ Dec 20, 2025
img
নির্বাচন কীভাবে করতে হয় তার প্রক্রিয়া জানিয়ে গেছেন হাদি: প্রধান উপদেষ্টা Dec 20, 2025
img
‘ধুরন্ধর’-এর প্রশংসায় কঙ্গনা! Dec 20, 2025
img
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের কাছে পোস্টাল ব্যালট প্রেরণ শুরু Dec 20, 2025