চার বন্ধু নাগরিক কোলাহল থেকে একটু স্বস্তি পেতে বেড়াতে গিয়েছিল পালামৌর জঙ্গলে। সেখানে তাঁদের ভ্রমণ, প্রেম, সম্পর্কের জটিলতা – সব কিছু নিয়ে সেলুলয়েডের পর্দায় উঠে এসেছিল কালজয়ী বাংলা সিনেমা ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’। সেটা ১৯৭০ সাল। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সেই অরণ্যের কাহিনি এতকাল পেরিয়েও সিনেপ্রেমী বাঙালির মনে একটা স্থায়ী ছবি এঁকে রেখেছে। কাট টু। ২০২৫ সাল। পাঁচ দশক পেরিয়ে নতুন করে বড়পর্দায় মুক্তির আলো দেখেছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, শমিত ভঞ্জ, শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন অভিনীত সেই ‘কাল্ট’ সিনেমা। কান চলচ্চিত্র উৎসবের পর এবার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তার প্রদর্শনী চলছে। দাদু শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় অভিনীত সেই সিনেমাটি প্রথমবারের জন্য বড়পর্দায় দেখলেন তাঁর নাতনি তথা টলিউডে নবাগতা হিয়া চট্টোপাধ্যায়। কেমন অনুভূতি হল? ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’কে তা খোলাখুলি জানালেন হিয়া।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৭০ সালে সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী এই ছবির প্রযোজনা করেছিল প্রিয়া ফিল্মস। প্রিয়া সিনেমাহলের কর্ণধার অরিজিৎ দত্তের মা-বাবা যৌথভাবে সেই প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গী ছিলেন। শর্মিলা ঠাকুর, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সিমি গারেওয়াল, রবি ঘোষ, শমিত ভঞ্জ, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়দের মতো তারকাখচিত সিনেমা এটি। চলতি বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবির ৪কে সংস্করণ প্রদর্শিত হয়েছিল।
এবার ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় দিন, শনিবার শহরের প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হল সিনেমা। আর সিনেমাহলে বসে দাদুর সেই ছবি দেখলেন শুভেন্দুর নাতনি, শাশ্বতকন্যা হিয়া। তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া, ”দাদুভাইয়ের সিনেমা এই প্রথম বড়পর্দায় দেখলাম। ভীষণ ভীষণ ভালো লেগেছে। আসলে অনেক ছোটবেলায় দাদুভাইকে হারিয়েছি। তাই বড়পর্দায় প্রথমবার ছবি দেখে একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। প্রথম যখন সিনেমায় দাদুভাইয়ের সিন এল, একটু খারাপ লাগা, অনেকটা ভালো লাগার একটা মিশ্র অনুভূতি হয়েছিল। দেখতে দেখতে বাবা আর দাদুভাইয়ের মধ্যে অনেকটা মিল পেয়েছি। ওঁদের ম্যানারিজমের মধ্যে। সবমিলিয়ে আমি জীবনেও ভুলব না এই দিনটার কথা। আমি চাই, ছবিটা আবার বড়পর্দায় সবাই দেখুন।”
কিন্তু কেন হিয়ার মুখে বাবা-দাদুর মধ্যে আদবকায়দার এই মিলের কথা? আসলে ২০০৩ সালে পরিচালক গৌতম ঘোষ ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ সিনেমার সিকুয়েল ‘আবার অরণ্যে’ তৈরি করেছিলেন। তাতে শুভেন্দু অভিনীত চরিত্র সঞ্জয়ের ছেলে হিসেবে দেখা গিয়েছিল তাঁরই পুত্র শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে। সেই সিনেমায় বাবাকে দেখেছেন হিয়া, এবার বড়পর্দায় দেখলেন দাদুকে। ফলে এই মিল খুঁজে পাওয়া হিয়ার পক্ষে খুব স্বাভাবিক। দুর্দান্ত নৃত্যশিল্পী হিয়া নিজেও পেশা হিসেবে অভিনয় জগৎকে বেছে নিয়েছেন। টলিউডে সবে কেরিয়ার শুরু করেছেন। বাপ-ঠাকুরদার কর্মধারাকে হিয়া কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, সেদিকে অধীর আগ্রহ সিনেপ্রেমীদের।
এসএন