বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে একটা ধারণা দেওয়া হচ্ছে যে, ২৪-এর আন্দোলনেই সব হয়েছে। আপনারা ভুলে যাবেন না ৭১ হয়েছে বলেই আমরা দেশ পেয়েছি। আমার জন্মটাকে আমরা ভুলতে পারি না, এটা মাথায় রাখিয়েন। একাত্তর ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে একটি চক্র। কিন্তু আমরা সেটা ভুলতে পারি না।’
গতকাল সকালে ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
সভায় মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, সেটা সামনে আনতে হবে। আমরা ৭১ সালে লড়াই করেই দেশকে স্বাধীন করেছি, এটা মাথায় রাখতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলেও দাবি করেন ফখরুল।’
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর করিমের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাঈম জাহাঙ্গীর, সদস্যসচিব সাদেক আহম্মদ খান, জেলা বিএনপির সভাপতি মির্জা ফয়সল আমীন প্রমুখ।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের প্রয়াত বাবা মির্জা রুহুল আমিনের অবস্থান নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
ফখরুলের অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তাঁর বাবাকে নিয়ে ‘গুজব ও মিথ্যাচার’ করা হচ্ছে। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক স্ট্যাটাসে মির্জা ফখরুল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি গত দু’দিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে আছি। কিছু কথা বলা এখন খুব জরুরি, আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ ও তরুণ প্রজন্মের জন্য। জীবনের এই প্রান্তে এসে যখন দেখি, সমাজে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে মিথ্যার চাষ করছে, তখন বলা আরও জরুরি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমার আব্বা মরহুম মির্জা রুহুল আমিন ১৯৭১-এর ২৭ মার্চ আমার নানাবাড়ি যান আমার দুই বোন ও মাকে নিয়ে। তার পর এপ্রিলে চলে যান ভারতের ইসলামপুরে। রিফিউজি ক্যাম্পে ছিলেন যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময়। ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও স্বাধীন হয়। আমার বাবা ঠাকুরগাঁও ফিরে আসেন তখনই। যখন ফিরে আসেন, দেখেন সব লুট হয়ে গেছে।’ অর্থাভাবে তাঁর মা নিজের গয়না বিক্রি করে দেন উল্লেখ করে স্ট্যাটাসে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি যোগ দিই অর্থনীতির শিক্ষকতায়। প্রথম বেতন তুলে দিই আম্মার হাতে। আল্লাহর রহমতে জীবন চলে যায়। ১৯৭১-এর পরে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এভাবেই ধ্বংসস্তূপ থেকে তৈরি করেছে জীবন।’
স্ট্যাটাসে ফখরুল আরও লেখেন, ‘গত ৫৪ বছরে আমার বাবার নামে কোথাও কোনো মামলা হয়নি। ঠাকুরগাঁও জেলার যা কিছু আধুনিক, এর শুরু আমার বাবার হাতে। এই জেলার প্রতিটি সৎ মানুষ জানে আমার বাবার কথা। বাবা মারা যাওয়ার পর তার স্মৃতি রক্ষার জন্য যে ফাউন্ডেশন হয়, তার নেতৃত্বে ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সব নামকরা রাজনীতিবিদ। ১৯৯৭ সালে তার মৃত্যুতে সরকারি শোক প্রকাশ করা হয়।’
ফখরুল আরও লেখেন, ‘আমার বাবাকে নিয়ে মিথ্যাচার শুরু হয় গত আওয়ামী রেজিমে (শাসন) এবং দুঃখজনকভাবে গত এক বছর ধরে একটি গোষ্ঠী, যারা নিজেদের জুলাই আন্দোলনের অংশীদার মনে করে, তারাও এই মিথ্যাচারে অংশ নিচ্ছেন। মিথ্যা, গুজব ও অপবাদ সমাজ ধ্বংস করে।’
কেএন/টিকে