দীর্ঘ রাজনৈতিক আলোচনার পর জার্মানির জোট সরকার দেশটির সৈন্যসংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে নতুন সামরিক পরিষেবা পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৮ বছর বয়সী সব পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে প্রশ্নপত্র পূরণ এবং ২০২৭ সাল থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে। বার্লিনের লক্ষ্য ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করা এবং যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করা।
জার্মানির বৃহত্তম প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান রাইনমেটালের প্রধান আর্মিন পাপারগার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, জার্মান সেনাবাহিনী—বুন্ডেসভেয়ার'কে শক্তিশালী করার সরকারের লক্ষ্য পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে অর্জন করা সম্ভব।
বর্তমানে বুন্ডেসভেয়ারের সৈন্যসংখ্যা প্রায় ১,৮২,০০০। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী এক বছরে ২০,০০০ সৈন্য বাড়ানো এবং পরবর্তী দশ বছরে তা ২,৫৫,০০০ থেকে ২,৬০,০০০ পর্যন্ত উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ২,০০,০০০ রিজার্ভ সদস্য প্রস্তুত থাকবে বলে জানান আর্মিন পাপারগার ।
পরিকল্পনা অনুযায়ী:
২০২৫ সাল থেকে: ১৮ বছর বয়সী সব পুরুষ ও নারীকে প্রশ্নপত্র পাঠানো হবে। পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক, নারীদের জন্য স্বেচ্ছাসেবী। জুলাই ২০২৭ থেকে: ১৮ বছর বয়সী সব পুরুষকে বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
সরকারের লক্ষ্য পূরণ না হলে সংসদ বাধ্যতামূলক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী এই প্রশ্নপত্র ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার তথ্য ব্যবহার করে দ্রুত সদস্য সংগ্রহ করতে পারবে।
তবে, জার্মানির বামপন্থী রাজনৈতিক শক্তি বাধ্যতামূলক সামরিক পরিষেবার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তরুণদের মধ্যেও বিরোধিতা প্রবল—একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, যদিও অর্ধেকের কিছু বেশি মানুষ বাধ্যতামূলক পরিষেবার পক্ষে, ১৮–২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৬৩% বিরোধিতা করে।
১৮ বছর বয়সী ছাত্র জিমি, যিনি বার্লিনে বাধ্যতামূলক নিয়োগবিরোধী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন, বলেন, 'আমি যুদ্ধ করতে যেতে চাই না। আমি কাউকে গুলি করতে চাই না।' তিনি মনে করেন, সরকার অবাস্তব যুদ্ধ-ভীতি দেখিয়ে তরুণদের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে।
অন্যদিকে, ২১ বছর বয়সী জেসন নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে এ বছর বুন্ডেসভেয়ারে যোগ দেন। তার মতে, সেনাবাহিনীতে যোগদান 'সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন' এবং সম্ভাব্য আগ্রাসন ঠেকানোর উপায়।
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বোরিস পিস্টোরিয়াস জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেন, নতুন সামরিক পরিষেবা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানো হলে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বরং কমে।
ইএ/টিকে