চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়ার বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুলের শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম বলেছেন, চট্রগ্রাম বন্দরের সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা প্রশ্ন জড়িত। নিরাপত্তা ইস্যুর কারণেই বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, এমনকি সেনাপ্রধান এই বন্দর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বিদেশিদের দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চুক্তি প্রক্রিয়া বাতিল করে রুল যথাযথ ঘোষণা করার আর্জি জানাচ্ছি।
আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের দিলে রেভিনিউ বাড়বে না বরং কমবে। কারণ রেভিনিউর বিরাট অংশ বিদেশে চলে যাবে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন।
আদালত এই রুলের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল দিন ধার্য করেছেন। একইসঙ্গে আটর্নি জেনারেল কথা দেওয়ার পরও চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ।
এরআগে গত ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল রুল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর করা হবে না বলে আদালতকে আশ্বস্ত করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
সেদিন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আবেদন জানিয়েছিলাম রুল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর না করা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আদালতকে আশ্বস্ত করেছেন রুল শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিদেশিদের কাছে হস্তান্তর করা হবে না।
গত ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন। একইসঙ্গে যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন রিটটি করেন। রিটে নৌ-সচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়।
নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ প্রতিবেদনসহ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এনসিটি পরিচালনায় ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়।
কেএন/টিএ