পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হবে বলে ধারণা করছিলেন অনেকে। তবে সেই ভাবনায় পানি ঢেলে আজ (রোববার) ৫৯.২ ওভার ব্যাট করল আয়ারল্যান্ডের টেল এন্ডাররা। ৭১ রানে অপরাজিত কার্টিস ক্যাম্ফার তো মিরপুরে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ বল (২৫৯) খেলার রেকর্ডই গড়ে ফেললেন। তা সত্ত্বেও দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে ২১৭ রানের ব্যবধানে বড় জয় পেয়েছে স্বাগতিকরা।
৬ উইকেটে ১৭৬ রান তুলে গতকাল চতুর্থ দিন শেষ করেছিল আয়ারল্যান্ড। তখনই জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছিল নাজমুল হোসেন শান্ত’র দল। তবে সিরিজ নিশ্চিত করতে তাদের লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। আগেরদিন টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটাররা ৫৪ ওভার খেলেছিল, বিপরীতে আজ তাইজুল-হাসানদের বিপক্ষে দাঁতে দাঁত চেপে বাকি ৪ ব্যাটার খেললেন ৫৯ ওভার। এর আগে সিলেট টেস্টে বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে জিতেছিল। ফলে লাল বলের সিরিজ শেষ হলো ২-০ ব্যবধানে।
এর আগে মিরপুরে টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২১২ বল খেলার রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। তাকে ছাড়িয়ে ২৫৯ বলে ৭১ রানে অপরাজিত ছিলেন ক্যাম্ফার। যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। এর আগে এই আইরিশ অলরাউন্ডার আন্তর্জাতিক টেস্টে একটি সেঞ্চুরি করেছিলেন। আইরিশদের পঞ্চম দিনে অর্ধেকেরও বেশি সময় ম্যাচে টিকিয়ে রাখার মূল ভূমিকা ছিল ক্যাম্ফারের। তিনি অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের সঙ্গে ১০৫ বলে ২৬, জর্ডান নিলের সঙ্গে ৮৫ বলে ৪৮ এবং নবম উইকেটে গ্যাভিন হোয়ের সঙ্গে ১৯১ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়েছিলেন।
এর আগে চতুর্থ দিনে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ২৯৭ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে। প্রথম ইনিংসের ২১১ রান মিলিয়ে আইরিশদের লক্ষ্য দেয় ৫০৯ রানের। প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৭৬ রান নিয়ে দিন শেষ করে সফরকারীরা। আজ দিনের ১৪তম ওভারে অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে ফেরান তাইজুল ইসলাম। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম কোনো বোলার হিসেবে বাঁ-হাতি এই স্পিনার টেস্টে ২৫০তম উইকেট পেলেন। ২১ রানে এলবিডব্লিুউ হয়েছেন ম্যাকব্রাইন।
সপ্তম উইকেটের পতনে ক্যাম্ফার-ম্যাকব্রাইনের ২৬ রানের জুটি ভাঙে। এরপর ৪৮ রান যোগ করে ক্যাম্ফার ও জর্ডান নিলের জুটি। নিলকে বোল্ড করে সেই জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। যা দ্বিতীয় ইনিংসে এই অলরাউন্ডারের প্রথম উইকেট। ২৩৭ রানে ৮ উইকেট তুলে বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে জয়ের প্রত্যাশা করছিল। কিন্তু তখনও ক্রিজে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেওয়া ক্যাম্ফার। নবম উইকেটে হোয়েকে নিয়ে তিনি আরও শক্ত জুটি বাধেন। ম্যাচ ড্রয়ের দিকে গড়াবে কি না সেই শঙ্কার মাঝে হোয়েকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ব্রেকথ্রু দেন হাসান মুরাদ।
১০৪ বলে ৩৭ রান করেছেন এই আইরিশ লেগস্পিনার। তাতে ভেঙেছে ১৯১ বলে ৫৪ রানের ম্যারাথন জুটি। শেষ ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে এসে মুরাদের পরের বলেই বোল্ড হয়েছেন ম্যাথু হাম্প্রিস। এ নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ এবং ম্যাচে ৬ উইকেট শিকার করলেন সিলেট টেস্ট দিয়ে অভিষেক হওয়া হাসান মুরাদ। তার সমান ৪ উইকেট শিকার করেছেন তাইজুল, পুরো ম্যাচে পেয়েছেন ৮ উইকেট। দুই টেস্ট মিলিয়ে ১৩ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হয়েছেন বাংলাদেশের এই সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।
অন্যদিকে, মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ তারকা মুশফিকুর রহিম নেমেছিলেন ১০০তম ম্যাচে। মাইলফলক ম্যাচ তিনি রেকর্ডরাঙা ব্যাটিংয়ে রাঙিয়েছেন। বিশ্বের মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে শততম টেস্টের দুই ইনিংসে পঞ্চাশোর্ধ (১০৬ ও ৫৩*) রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন মুশি।
এসএস/টিকে