আমরা সবাই কোনো না কোনো সময় অম্লতা জনিত সমস্যা বা অ্যাসিডিটিতে কমবেশি আক্রান্ত হয়েছি। পেটের গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থিতে অম্ল বা অ্যাসিডের অত্যধিক নিঃসরণ ঘটলে অ্যাসিডিটি হয় এবং গ্যাস, দুর্গন্ধ, পাকস্থলীতে ব্যথা প্রভৃতি দেখা দেয়। অ্যাসিডিটিতে ভুগলে আমরা সাধারণত চট করে অ্যান্টাসিড ওষুধ খেয়ে নিই, কিন্তু এটি আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী কোনো সমাধান দেবে না।
দীর্ঘ বিরতিতে খাবার গ্রহণ করলে বা অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে এবং অতিরিক্ত চা, কফি, ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণের কারণে অম্লতা দেখা দিতে পারে। যখন অ্যাসিডের অত্যধিক নিঃসরণ নিয়মিত ঘটনাতে পরিণত হয় তখন অম্বল, অ্যাসিড রিফ্লেক্স বা জিইআরডি (গ্যাস্ট্রোসোফিজিয়াল রিফ্লেক্স ডিজিজ) প্রভৃতিতে জটিল রোগ দেখা দেয়। ফলে ভারী কোনো খাবার বা মশলাদার খাবার খেলেই আমাদের পেটে সমস্যা দেখা দেয়।
অম্লতার সমস্যা নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক পরিপাক প্রক্রিয়ার উন্নতি করতে কিছু ঘরোয়া সমাধান আপনার অবলম্বন হতে পারে।
চলুন জেনে নিই, ওষুধ ছাড়াই অম্লতার সমস্যা থেকে মুক্তি উপায়-
দারুচিনি
দারুচিনি আমাদের কাছে গরমসলার একটি উপাদান হিসেবেই পরিচিত। রান্নাঘরের এই সাধারণ উপাদানটি অম্লতা নিরাময়ে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসাবে অসাধারণ কাজ করে এবং হজমের উন্নতি ঘটিয়ে আপনার পেটকে প্রশমিত করতে পারে। একইসঙ্গে দারুচিনি নানা পুষ্টিগুণেও ভরপুর। অ্যাসিডিটিতে স্বস্তির জন্য বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে সংক্রমণ নিরাময়ের জন্য নিয়মিত দারুচিনি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
কলা
অম্লতা বা অ্যাসিডিটির মারাত্মক আক্রমণের একটি নিখুঁত প্রতিষেধক হতে পারে পাকা কলা। কলা আপনার পেট ও পেটের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার, যা হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। কলা পটাসিয়াম সমৃদ্ধ, তাই এটি পেটে শ্লেষ্মা উৎপাদন বৃদ্ধি করে, যা অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন প্রতিরোধ করে এবং এর ক্ষতিকারক প্রভাবগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে। তাই কলা খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে মুক্তি দিতে পারে অ্যাসিডিটির অত্যাচার থেকে।
গুড়
গুড়ে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি রয়েছে, যা অন্ত্রের শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। এটি হজমেও সহায়তা করে, ফলে পেটের অম্লতা হ্রাস পায়। এছাড়াও এটি শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং পেট ঠাণ্ডা রাখে। খাওয়ার পরে গুড়ের একটি ছোট টুকরোতে চুষে খেতে পারেন। আপনি চাইলে গুড়ের শরবত বানিয়েও খেতে পারেন।
পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতা হলো প্রকৃতির অন্যতম সেরা শরীর ঠাণ্ডা কারী উপাদান। বদহজমের ফলে বুক জ্বলা ও পেট ব্যথা কমাতে পুদিনা পাতা সাহায্য করে। পুদিনা পাকস্থলীর অ্যাসিডের পরিমাণ হ্রাস করতে এবং হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে সহায়তা করে। অম্লতা নিয়ন্ত্রণ ও প্রশমিত করতে কিছু পুদিনা পাতা পানিতে সেদ্ধ করে ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ার পর তা পান করুন।
আদা
সর্দি-কাশি নিরাময় থেকে শুরু করে হজম ও অন্ত্রের বিভিন্ন ব্যাধি থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে এমন একটি রান্নাঘরের উপাদান হলো আদা। আদা অম্লতা সৃষ্টিকারী পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে কার্যকর। এছাড়াও এটি প্রদাহ হ্রাস করে, বমি বমিভাব দূর করে এবং পেটের পেশী শান্ত করে।
গুরুতর বদহজম এবং অম্লতাতে ভুগলে- এক টেবিল চামচ আদা ও লেবুর রস, দুই চা-চামচ মধুর সঙ্গে গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন। এটি অ্যাসিডিটির লক্ষণ সমূহ হ্রাস করতে, হজমের দুর্বলতা দূর করতে এবং ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করবে। তথ্যসূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
টাইমস/এনজে/জিএস