পর্দায় তিনি ছিলেন বলিউডের ‘হিম্যান’। অ্যাকশন, দাপট আর ব্যক্তিত্ব সব মিলিয়ে ধর্মেন্দ্র ছিলেন হিন্দি সিনেমার প্রথম সারির নায়ক। তবে অভিনয়ের বাইরে জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো রাজনীতি। আর সেই অধ্যায়টিই শেষ হয়েছিল মোহভঙ্গ, বিতর্ক আর হতাশার সঙ্গেই।
সত্তরের দশকে মুম্বাইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ড থরহরি। হাজি মস্তান, করিম লালাদের মতো গ্যাংস্টারদের নামেই কেঁপে উঠত মায়ানগরী। ঠিক সেই সময়ে মুখের ওপর দাঁড়িয়ে ধর্মেন্দ্র বলে দিয়েছিলেন- ‘আমাকে ভয় দেখিও না। তোমরা দশজন লোক পাঠালে, আমার জন্য পাঞ্জাব থেকে ট্রাকভর্তি লোক আসবে।’ পর্দার বাইরে বাস্তব জীবনেও তার এই দাপটই বলিউডে কিংবদন্তি হয়ে আছে।
২০০৪ সালে বিজেপির ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’ ক্যাম্পেইনে যোগ দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে আসেন ধর্মেন্দ্র। সেই বছরই রাজস্থানের বিকানের থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়ে লোকসভা নির্বাচনে জেতেন তিনি। দলীয় শীর্ষ নেতাদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন দ্রুতই। নির্বাচনী প্রচারে তার উচ্চস্বরে বক্তৃতা তখন রাজনৈতিক মহলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
তবে এক মন্তব্য ঘিরে শুরু হয় বিতর্ক। রাজস্থানে প্রচারের সময় তিনি বলেছিলেন- ‘গণতন্ত্রের মৌলিক শিষ্টাচার শেখাতে আমাকে একনায়ক হিসেবে নির্বাচিত করা উচিত।’ এই মন্তব্যেই সরব হয় বিরোধী শিবির। প্রশ্ন ওঠে ধর্মেন্দ্র কি একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী? তবুও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস প্রার্থী রামেশ্বর লালকে ৬০ হাজার ভোটে হারিয়ে তিনি সাংসদ হন।
লোকসভার কার্যক্রমে নিয়মিত উপস্থিত না থাকা নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। বিকানেরের মানুষ অভিযোগ করেন-তিনি শুটিং আর ফার্মহাউজের জীবনেই ব্যস্ত, এলাকার সমস্যার খোঁজ নেওয়ারও সময় পান না।
অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে দলের পক্ষ থেকেই ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে হয়। জানানো হয়, সামনে না থাকলেও আড়ালে থেকে এলাকার জন্য তিনি কাজ করেছেন।
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই ধর্মেন্দ্র ঘোষণা করেন, তিনি আর ভোটে লড়বেন না। পরে সানি দেওল এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বাবা রাজনীতি পছন্দ করতেন না। পরে তিনি অনুশোচনাও করতেন যে কেন রাজনীতিতে এসেছিলেন।’
নিজেও এক সাক্ষাৎকারে ধর্মেন্দ্র বলেছিলেন, ‘কাজ আমি করব, আর কৃতিত্ব নেবে অন্য কেউ।’
রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, তিনি কি দলের ভেতরেই কোনো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন? সেই প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা।
অভিনয়ে যেমন তিনি ছিলেন নির্ভীক, রাজনীতিতেও তেমনই ছিলেন স্পষ্টবাদী। তবে রাজনৈতিক অধ্যায়টি শেষ হয়েছিল মানসিক ক্লান্তি, সমালোচনা আর মোহভঙ্গের মধ্য দিয়েই।
এসএন