ভারতের চলচ্চিত্র জগতে মৌসুমী চ্যাটার্জি এক সম্মানিত নাম। হিন্দি ও বাংলা দুই ভাষার ছবিতেই তার দাপুটে উপস্থিতি ছিল। সত্তর এর দশকে তার স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় আর বহুমুখী চরিত্র বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
মৌসুমী তার ক্যারিয়ারে অমিতাভ বচ্চন, রেখা, বিনোদ খান্না, জয়া বচ্চনের মতো বিখ্যাত তারকাদের সাথে অভিনয় করেছেন। কিন্তু তার স্পষ্টবাদী ও মূল্যবোধসম্পন্ন সিদ্ধান্তের কারণে সিনেমায় অনেক বড় বড় কাজ হারান তিনি।
মূ্ল্যবোধে দৃঢ় মৌসুমী সিনেমায় ক্যারিয়ারের শুরুতেই নিজের জন্য কিছু সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করেন। সিনেমা করতে যেকোনো অভিনেত্রীকেই খোলামেলা পোশাকের দৃশ্য করতে হয় কিন্তু মৌসুমী অশ্লীল পোশাকে কোনো দৃশ্য করতে সাফ মানা করে দিতেন।
এই বর্ষীয়ান অভিনেত্রী সবসময় ছিলেন স্পষ্টভাষী। শ্যুটিং সেটে যেসব নায়ক সীমা ছাড়িয়ে যেতেন তিনি তাদের চড় মারতে দুবার ভাবতেন না।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি ‘অভদ্র নায়কদের চড়’ মারার ঘটনা নিয়ে বলেন, ‘এটাই ওদের প্রাপ্য। ওরা ছিল নারীবিদ্বেষী। তখন নায়কেরা নায়িকাদের সঙ্গে ফ্লার্ট করত আর ভাবত নায়িকারাও একইভাবে সাড়া দেবে। আমাদের সমাজে ছেলেদেরকে মা, বোন, স্ত্রী সবাই অনেক আদর করে বড় করে, সেখান থেকেই তাদের ভুল ধারণা তৈরি হয়।’
মৌসুমী নিজের মর্যাদার সঙ্গে আপস না করায় বহু ছবিতে কাজ করার সুযোগ হারান। গুলজারের ‘কোশিশ’ ছবিতে মৌসুমীকে নেয়ার কথা থাকলেও তার পরিবর্তে জয়া বচ্চনকে নেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই নিজের সম্মান নিয়ে আপস করিনি। যা হওয়ার হয়েছে। পরে গুলজার সাহেবের সঙ্গে সব ঠিক হয়েছে। এরপর আমরা ‘আঙ্গুর’ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করি।
১৯৬৭ সালে কলকাতার সিনেমা ‘বালিকা বধু’ দিয়ে সিনেমায় অভিষেক হয় তার। এরপর, তিনি ‘অনুরাগ’ ছবি দিয়ে বলিউডে অভিষেক করে যা সিনেমায় তার স্থান সুদৃঢ় করে।
পরবর্তীতে তিনি ‘রোটি কাপড়া অউর মাকান(১৯৭৪)’, ‘বেনাম(১৯৯১)’ এবং ‘আঙ্গুর(১৯৮২)’ মতো বিখ্যাত ছবিতে কাজ করেন।
বলিউডের স্বর্ণালী যুগের শীর্ষ অভিনেত্রীর মধ্যে একজন ছিলেন মৌসুমী চ্যাটার্জী। কিন্তু তিনি কখনো কাউকে খুশি করার জন্য নিজের মূল্যবোধ ও আত্মসম্মানবোধের সাথে আপোস করেনি। যার কারণে একজন প্রতিভাবান অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও ক্যারিয়ারে খুব বেশি সফলতার মুখ দেখেনি।
আরপি/টিকে