শেষের বাঁশি বাজতে কয়েক সেকেন্ড মাত্র বাকি তখন। আর্সেনালের ডি-বক্সে হামলে পড়ল অ্যাস্টন ভিলা। কয়েক দফায় সুযোগ পেয়েও ক্লিয়ার করতে পারল না সফরকারীরা। জটলার মধ্যে বল পেয়ে শট নিলেন এমিলিয়ানো বুয়েন্দিয়া, চোখের পলকে বল চলে গেল জালে। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল পুরো ভিলা শিবির, অন্যপাশে হতাশায় কাতর মিকেল আর্তেতার দল।
ভিলা পার্কে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের রোমাঞ্চকর ম্যাচে ২-১ গোলে জিতেছে স্বাগতিকরা। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ১৮ ম্যাচের অপরাজে যাত্রা থেমে গেল আর্সেনালের।
ভিলার বিপক্ষে গত কয়েক মৌসুমে একাধিকবার কপাল পুড়েছে আর্সেনালের। ২০২৩-২৪ মৌসুমে দুই লেগেই দলটির বিপক্ষে হেরে বসে আর্তেতার দল। বলা যায়, ফিরতি লেগের হারেই শেষ পর্যন্ত তাদের শিরোপা স্বপ্ন মিথ্যে হয়ে যায়। গত মৌসুমেও তাদেরকে তাদেরই মাঠে রুখে দেয় উনাই এমেরির দল।
এবার এই কঠিন চ্যালেঞ্জে উতরেই লিগ টেবিলে ব্যবধান বাড়ানোর আশায় ছিলেন আর্তেতা। তবে মাঠে নেমে প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়ে দলটি, ম্যাটি ক্যাশের গোলে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে লিয়ান্দ্রো ত্রোসার সমতা টানলেও, শেষটায় সব এলোমেলো হয়ে যায় তাদের।
পুরো ম্যাচে লড়াই হয়েছে দুর্দান্ত, জমজমাট। বল দখলে আর্সেনাল একটু এগিয়ে রইলেও, গোলের জন্য উভয় পক্ষই শট নেয় সমান ১৫টি করে। সফরকারীদের ৯টি ও ভিলার ৬টি লক্ষ্যে ছিল।
এই নিয়ে প্রিমিয়ার লিগে টানা পাঁচ ও সব মিলিয়ে টানা সাতটি ম্যাচ জিতল ভিলা। ১৫ ম্যাচে ৯ জয় ও ৩ ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট ৩০। সমান ম্যাচে ভিলার চেয়ে ২ পয়েন্ট বেশি নিয়ে শীর্ষে আর্সেনাল।
ছন্দে এগিয়ে চলা দুই দলের লড়াই প্রত্যাশিতভাবেই শুরু থেকে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠে। প্রথম ১০ মিনিটে পরপর দুই পাশে দুটি সুযোগ তৈরি হয়; আর্সেনাল অধিনায়ক মার্টিন ওডেগোরের ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। পরের মিনিটে ওয়াটকিন্সের শট দারুণ নৈপুণ্যে রুখে দেন দাভিদ রায়া।
চতুর্দশ মিনিটে দূর থেকে চেষ্টা করেন বুকায়ো সাকা। তার জোরাল শট ঝাঁপিয়ে আটকান মার্তিনেস। পরক্ষণে এই ইংলিশ ফরোয়ার্ডের হেড হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট।
দারুণ এক পাল্টা আক্রমণে ৩৬তম মিনিটে আর্সেনালকে থমকে দেয় ভিলা। বাঁ দিক থেকে সতীর্থের বাড়ানো ক্রসে এক প্রতিপক্ষের মাথায় ছুঁয়ে আসা বল ছয় ছজ বক্সের ডান দিকে পেয়ে যান ম্যাটি ক্যাশ, জোরাল শটে গোলরক্ষকের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে জালে পাঠান পোলিশ ডিফেন্ডার।
চলতি মৌসুমে লিগে চতুর্থবার প্রথমার্ধে গোল হজম করল আর্সেনাল; তবে আগের তিনটি ম্যাচে অবশ্য হারেনি তারা। এবার আর সেই ধারা ধরে রাখতে পারল না দলটি। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিট থেকে অবশ্য তাদের খেলায় মরিয়া ভাব ফুটে ওঠে। দ্রুত সাফল্যও পায় তারা।
৫২তম মিনিটে কাছ থেকে সাকার কোনাকুনি শট ঝাঁপিয়ে আটকাতে পারেননি মার্তিনেস, বল তার হাত ছুঁয়ে আরেকজনের পায়ে লেগে চলে যায় ছয় গজ বক্সের বাঁদিকে, সেখানে অরক্ষিত ত্রোসার ঠাণ্ডা মাথার শটে সমতা টানেন।
গোল হজমের পরের কয়েক মিনিটে টানা কয়েকটি আক্রমণ করে ভিলা। এরপর আবার চাপ বাড়ায় আর্সেনাল। দুই প্রান্তেই সুযোগ আসতে থাকে; কিন্তু কেউই পারছিল না ব্যবধান গড়ে দিতে।
৮৭তম মিনিটে শেষ চেষ্টায়ই হয়তো ক্যাশকে তুলে বুয়েন্দিয়াকে নামান কোচ। কী দারুণভাবেই না কোচের আস্থা ও দলের দাবি মেটান এই মিডফিল্ডার। বক্সে মুহূর্তের ব্যবধানে তাদের তিনটি শট প্রতিহত হওয়ার পর, বল পেয়েই জোরাল শট নিয়ে বাজিমাত করেন তিনি।
ভিএআরে কিছুক্ষণ যাচাইয়ের পর গোলের সিদ্ধান্ত আসতেই ভিলা পার্কে শুরু হয় স্মরণীয় এক জয়ের উৎসব।
এমআর/টিকে