পিরিয়ড চলাকালে যা খাবেন আর যা এড়িয়ে চলবেন

মাসিক ঋতুস্রাব নারীদের জীবনের অংশ। তাই এ বিষয়ে লজ্জা বা জড়তা কাটিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা খুব জরুরী। এই ঋতুস্রাবের সময় অনেকের নানারকম অস্বস্তিকর উপসর্গ দেখা দেয়। কিছু খাবার আছে এই উপসর্গগুলি হ্রাস করতে পারে, আবার অন্য কিছু খাবার উপসর্গ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে- পেটে ব্যথা, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, অবসাদ, মাথা ঘুরানো, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া প্রভৃতি।

আপনি যদি পিরিয়ডের সময় এই লক্ষণগুলির কোনোটি অনুভব করেন, তবে আপনার খাদ্যাভ্যাসে কিছু নির্দিষ্ট খাবার যুক্ত করে এবং কিছু খাবার অপসারণ করার মধ্য দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

এই বিশেষ সময়ে এটা খাওয়া যাবে না ওটা খাওয়া যাবে না এরকম অনেক কু-সংস্কারও সমাজে প্রচলিত আছে। আসুন জেনে নিই স্বাস্থ্য বিজ্ঞান এ বিষয়ে কী বলছে।

যেসব খাবার খেলে উপকার পাওয়া যাবে-

পানি
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা সব সময় দরকারি এবং পিরিয়ডের সময় এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পিরিয়ডের সময় ডিহাইড্রেশনের কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে দেহের আদ্রতা বজায় থাকবে এবং এ কারণে মাথা ব্যথা হবে না। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে এটি ফোলাভাব রোধ করতে পারে।

ফল
পানি সমৃদ্ধ ফল যেমন- তরমুজ ও শসা, হাইড্রেটেড থাকার জন্য দুর্দান্ত কার্যকর। মিষ্টি ফলগুলি আপনাকে চিনির আকাঙ্ক্ষা কমাতে সহায়তা করবে। এছাড়াও ফলে প্রচুর ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা আপনার দৈহিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

সবুজ শাকসবজি
পিরিয়ডের সময় আপনার দেহে আয়রনের মাত্রা কমে যেতে পারে, বিশেষত যদি আপনার মাসিক প্রবাহ ভারী হয়। ফলে ক্লান্তি, শরীর ব্যথা, মাথা ঘোরানো ভাব দেখা দিতে পারে। পাতাযুক্ত সবুজ শাকসবজি আপনার আয়রনের স্তরকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

আদা
এক মগ উষ্ণ আদা চা রজঃস্রাবের নির্দিষ্ট উপসর্গ সমূহ উপশম করতে পারে। আদাতে প্রদাহ হ্রাসকারী উপাদান রয়েছে, যা ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও আদা বমিভাব কমায়। তবে বেশি পরিমাণে আদা খাবেন না, কারণ দিনে ৪ গ্রামের বেশি গ্রহণের ফলে অম্বল ও পেটে ব্যথা হতে পারে।

মুরগির মাংস
মুরগির মাংস আয়রন ও আমিষ সমৃদ্ধ খাবার, যা আপনি আপনার পিরিয়ডকালীন খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন। আমিষ খাওয়া আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।

মাছ
আয়রন, আমিষ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ আপনার ডায়েটে একটি পুষ্টিকর সহযোজন। আয়রন গ্রহণের ফলে আপনার দেহে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেবে না। ২০১২ সালের এক গবেষণা অনুসারে ওমেগা-৩ পিরিয়ডের ব্যথার তীব্রতা ও হতাশা হ্রাস করতে পারে।

হলুদ
হলুদ একটি প্রদাহনাশক মশলা হিসেবে পরিচিত, কারক্যুমিনের প্রধান সক্রিয় উপাদান। ২০১৫ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে ব্যক্তিরা কারক্যুমিন গ্রহণ করেছেন তাদের পিরিয়ডের তীব্র উপসর্গ কম ছিল।

ডার্ক চকোলেট
একটি সুস্বাদু ও উপকারী খাবার ডার্ক চকোলেট। এটি আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। এটি আয়রনের ঘাটতি দূর করে এবং পিরিয়ডকালীন উপসর্গ সমূহের তীব্রতা হ্রাস করে।

বাদাম
বেশিরভাগ বাদাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ এবং বাদাম প্রোটিনের দুর্দান্ত উৎস। এছাড়াও বাদামে ম্যাগনেসিয়ামসহ বিভিন্ন ভিটামিন রয়েছে।

মসুর ও মটরশুঁটি
মসুর ডাল ও মটরশুঁটি উদ্ভিজ্জ আমিষের দুর্দান্ত উৎস, তাই এগুলি নিরামিষভোজীদের জন্য মাংসের ভালো প্রতিস্থাপন।

দই
অনেকে পিরিয়ডকালীন অবস্থায় যোনিতে ইষ্ট ইনফেকশনে আক্রান্ত হন। ইষ্ট ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে দই কার্যকর। এছাড়া দই ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ।

যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে-

লবণ
প্রচুর পরিমাণে লবণ খাওয়ার ফলে ফোলাভাব হতে পারে। ফোলাভাব কমাতে, লবণ এবং প্রচুর পরিমাণে সোডিয়ামযুক্ত উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলি এড়িয়ে চলুন।

চিনি
পরিমিত পরিমাণে চিনি খাওয়া যেতে পারে, তবে খুব বেশি পরিমাণে চিনি খাওয়ার ফলে আপনার মেজাজ খিটখিটে হতে পারে। আপনি যদি আপনার পিরিয়ডের সময় মুডি, হতাশাগ্রস্ত বা উদ্বেগ বোধ করেন, আপনার চিনি গ্রহণ কমিয়ে আনার মধ্য দিয়ে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

কফি
ক্যাফেইন দেহ ফুলে যাওয়ার কারণ হতে পারে এবং এটি মাথাব্যথাও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এছাড়া কফি হজমে সমস্যা বাড়াতে পারে। যদি আপনার পিরিয়ড চলাকালীন ডায়রিয়া হওয়ার ঝোঁক থাকে, আপনার কফি পানের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া উচিৎ।

অ্যালকোহল
অ্যালকোহল আপনার শরীরে বেশ কয়েকটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা আপনার পিরিয়ডকালীন লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, অ্যালকোহল পানিশূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে, যা মাথাব্যথা এবং দেহ ফুলে যাওয়ার কারণ হতে পারে। এটি ডাইরিয়া ও বমি বমি ভাবের মতো হজমজনিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, অবসাদ প্রভৃতি দেখা দিতে পারে।

মশলাদার খাবার
মশলাদার খাবারগুলি অনেকের পেট খারাপ করে, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, এমনকি বমি বমি ভাব সৃষ্টি করে। যদি আপনার পেট মশলাদার খাবার সহ্য করতে না পারে, তবে পিরিয়ডের সময় এগুলি এড়ানোই ভালো।

লাল মাংস
পিরিয়ড চলাকালীন আপনার শরীর প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন উৎপাদন করে। এই যৌগগুলি আপনার মাসিক প্রবাহ সহায়তা করে। তবে, উচ্চ স্তরের প্রস্টাগ্ল্যান্ডিনগুলি মাসিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। লাল মাংসে (গরু বা খাসির মাংস) আয়রন বেশি থাকতে পারে তবে এতে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের পরিমাণও বেশি তাই রজঃস্রাবের সময় লাল মাংস এড়ানো উচিত। তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: