কাঙ্ক্ষিত হারে ট্যারিফ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে রফতানি পণ্যের পাশাপাশি খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করতে যাচ্ছে ২১টি বেসরকারি অফডক। লিখিত ঘোষণা না দিলেও রফতানি পণ্য ও কনটেইনার না পাঠাতে শিপিং লাইনগুলোকে মৌখিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে তারা। আর এতে দেশের আমদানি-রফতানি খাত মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে এরই মধ্যে স্থগিত হয়ে গেছে বেসরকারি অফডকগুলোর ট্যারিফ বাড়ানোর সব পরিকল্পনা। বন্দরের পাশাপাশি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ও চেষ্টা করছিল নতুন ট্যারিফ নিয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে অফডক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সমঝোতা গড়ে তোলার। কিন্তু আলোচনায় সমঝোতা না হওয়ায় বিষয়টি আদালতে গড়ায়। সেখান থেকেই স্থগিত হয়ে যায় বাড়তি ট্যারিফ আদায়ের সিদ্ধান্ত। সরাসরি ট্যারিফ বাড়াতে ব্যর্থ হয়ে এবার ভিন্ন কৌশল নিয়েছেন অফডক মালিকেরা।
জানা গেছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রফতানি ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং বন্ধ রাখবে ২১টি বেসরকারি অফডক। বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব বলেন, বেসরকারি অফডকগুলো রফতানি পণ্যসহ পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের যে খরচ বহন করছে, তা বর্তমান আয়ের মাধ্যমে পোষানো যাচ্ছে না। এ কারণে ডিপোগুলো ১১ ডিসেম্বর সকাল ৬টা থেকে সব ধরনের রফতানি পণ্য ও খালি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মূলত ট্যারিফ বাড়ানোর বিষয়ে উচ্চ আদালতের একটি আদেশ বলবৎ থাকায় ট্যারিফ সমন্বয় করা সম্ভব হচ্ছে না। বিপরীতে বাড়তি খরচ দিয়ে ডিপোগুলোর পক্ষে এ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতি বিবেচনায় ডিপোগুলো কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
এর আগে কনটেইনার স্টাফিং, গ্রাউন্ড রেন্ট, লিফট অফ-লিফট অন, ডকুমেন্টেশন এবং বন্দর থেকে অফডকগামী যানবাহনের পরিবহন চার্জ সর্বনিম্ন ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল বিকডা। এবার রফতানি পণ্য ও কনটেইনার না পাঠাতে মৌখিক নির্দেশনা পাওয়ার পর সংকটে পড়েছেন মেইন লাইন শিপিং অপারেটররা।
এমএসসি শিপিংয়ের হেড অব অপারেশন আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, শিপিং খাতে অফডকগুলো বড় ভূমিকা পালন করে। তাদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেলে বন্দরের কার্যক্রম ও দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিপিং অপারেটরদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করা যেত; কিন্তু তা করা হয়নি। যার ফলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
বন্দরের ওপর চাপ কমাতে ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করে বেসরকারি অফডক। প্রথমে খালি কনটেইনার, পরে রফতানি পণ্য এবং সর্বশেষ সাত দফায় ৬৫ ধরনের পণ্য ডেলিভারির অনুমতি পায় তারা। মূলত বিদেশে রফতানির আগে মূলত জাহাজীকরণের কার্যক্রম সম্পন্ন হয় অফডকগুলোতে। এসব রফতানি পণ্যের বড় অংশই তৈরি পোশাক। এ অবস্থায় অফডকগুলোর এ অঘোষিত ধর্মঘটে গার্মেন্টস খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে শঙ্কা করছে বিজিএমইএ। শুধু তৈরি পোশাক পণ্য নিয়েই প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান আসে বেসরকারি অফডকে।
বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী বলেন, অফডকগুলো ধর্মঘটে গেলে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হবে। কারণ ডিসেম্বর মাসেই সবচেয়ে বেশি শিপমেন্ট হয়ে থাকে। মাত্র একদিনের ধর্মঘট হলেও বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হবে। তাই এর দ্রুত সমাধান জরুরি।
প্রতিদিন ৯০০ আমদানি কনটেইনার ছাড়াও ২ হাজার ৭০০ রফতানি এবং ১ হাজার ২০০ খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে ২১টি বেসরকারি অফডক। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসব অফডকে ৭ লাখ ৭৭ হাজার রফতানি এবং ২ লাখ ৬৫ হাজার আমদানি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান না করে চাপ সৃষ্টি করে বাড়তি ট্যারিফ আদায়ের চেষ্টা করছে ২১টি অফডক। এতে দেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, মৌখিকভাবে বলা হচ্ছে ১১ ডিসেম্বর থেকে অফডকগুলো পণ্য নেবে না। এটি এক ধরনের জিম্মি করার মতো পরিস্থিতি। সব পক্ষ বসে উইন-উইন পরিস্থিতি তৈরি করা যেতে পারে। বিকডার কাছে সেই সহযোগিতা আশা করছি।
সবশেষ ২০২১ সালে তেলের মূল্য বাড়ার অজুহাতে ২৩ শতাংশ ট্যারিফ বাড়িয়েছিল বিকডা। আর এবার ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য সমন্বয়ের দাবি করে প্রকারভেদে ৩০ থেকে ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
ইএ/এসএন