দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে দুই দশক ধরে যার ব্যাটে ভর করে লড়াই দেখেছে দলগুলো, সেই শামসুর রহমান শুভ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন। শেষ ম্যাচের পর তিনি জানালেন—এত বছরের পরিশ্রম, সংগ্রাম আর সাফল্যে তিনি সন্তুষ্ট। কোনো আফসোস নেই, বরং কৃতজ্ঞতা নিয়েই বিদায় বলছেন ক্রিকেটকে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাকে সম্মানজনকভাবে বিদায় জানানোয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, মাঠ থেকেই খেলোয়াড় হিসেবে শেষটা দেখতে পারা তার কাছে ছিল বিশেষ অনুভূতি।
তিনি বলেন, "বোর্ড আল্লাহর রহমতে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। বোর্ডকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে তারা আমাকে শেষ ম্যাচটা আমার একটা সুন্দর বিদায় দিয়েছে। আমি বোর্ডের কাছে কৃতজ্ঞ যে আসলে এত বছর ক্রিকেট খেলেছি। আসলে মাঠ থেকে খেলাটা ছাড়ার চেষ্টা করেছি এবং বোর্ড মাঠ থেকেই দিয়েছে। তাই বোর্ডকে অসংখ্য ধন্যবাদ।"
নিজের প্রিয় ভেন্যু মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম নিয়েও আবেগী কথা বলেন শামসুর। টেস্ট ও ওয়ানডে অভিষেক হওয়া মাঠটিতেই বিদায় নিতে না পারার সামান্য আক্ষেপ থাকলেও, শেষ পর্যন্ত তিনি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, "মিরপুর তো আমাদের সব খেলোয়াড়দের একটা প্রিয় মাঠ। যেহেতু আমার এই মাঠে আমি টেস্ট এবং ওয়ানডে আমার অভিষেক হয়েছে। তো আমি এই মাঠ থেকে যদি ছাড়তে পারতাম, তাহলে অবশ্যই এটা খুবই ভালো লাগতো। তবুও বলব যে আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ যা দিয়েছে এরজন্য আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।"
শেষ ম্যাচে সতীর্থদের শুভেচ্ছা পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি শামসুর। দীর্ঘ ক্যারিয়ারের শেষ মুহূর্তে সতীর্থদের সম্মান আর ভালোবাসা তাঁকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, "প্রত্যেকটা খেলোয়াড় যতই বলে যে আমি আমার আবেগকে কন্ট্রোল করে ফেলবো, কিন্তু ওই যে শেষ দিনে যখন আপনি সবার কাছ থেকে শুভকামনা বা শুভেচ্ছা পাবেন, এত বছরের একটা ক্যারিয়ারে এন্ড হতে যাচ্ছে, তো অনেক সময় হয় কি আবেগ কন্ট্রোল করতে পারবেন না, যতই আপনি চেষ্টা করেন। তো সবাই যখন এসে হাত মিলাচ্ছিল—মুশফিক, জাকির, রাহি ওরা, তো তখন আর আসলে ওই আবেগটা আমি ধরে রাখতে পারিনি। তারপরও বলবো যে আমি বরিশাল এবং সিলেট দলের কাছে কৃতজ্ঞ যে তারা আমাকে যথেষ্ট পরিমাণে সম্মান দিয়েছে, যেহেতু এই খেলাটা এত বছর খেলেছি। আলহামদুলিল্লাহ।"
দীর্ঘ সময় ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সাফল্য পাওয়ার সৌভাগ্যকেও বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন তিনি। নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে নেই কোনো আফসোস বা হতাশা।
তার ভাষায়, "না, এখন পর্যন্ত আর কোনো আক্ষেপ নাই। আল্লাহ যা দিয়েছে, অনেকেই তো এই জিনিসটা পায়নি। ২০টা বছর আপনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন, এতগুলি রান করার সৌভাগ্য হয়েছে। এই আক্ষেপ তো ধরেন আমার মধ্যে নাই। আল্লাহ অনেককেও তো যে যেটা বললাম যে অনেককেও তো এই অর্জনটা করতে পারেনি।"
পরিশ্রম, নিবেদন ও ধারাবাহিকতা—এগুলোই তার ক্যারিয়ারের মূল ভিত্তি ছিল বলে জানান শামসুর। নিজের অর্জন নিয়ে অহংকার নয়, বরং শান্ত স্বরেই তুলে ধরেন খেলোয়াড় হিসেবে নিজের অবস্থান।
তিনি বলেন, "যারা এতগুলো বছর খেলেছে, তারাও কিন্তু অনেক অনেক শ্রম দিয়েছে, অনেক ডেডিকেশন দেখিয়েছে। একই জিনিসটা আমিও দেখিয়েছি। আল্লাহর রহমতে আমি বলব যে মানুষ তো অন্তত বলতে পারবে যে খেলোয়াড়টা কেমন ছিল। সেটা আমি বলতে পারব না যে আমি কতটুকু অর্জন করতে পেরেছি। তবে আল্লাহর রহমতে চেষ্টা করেছি নিজেকে একটা ভালো জায়গায় রাখার।"
ক্যারিয়ার শেষে নির্বাচকের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে—এমন প্রশ্ন উঠতেই শামসুর জানান, এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাননি। তবে দেশের সেবায় নতুন ভূমিকায় নিজেকে প্রস্তুত বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, "না, আমি সত্যি বলি আমি অফিশিয়ালি কোনো কিছু জানি না। যদি তারা এই বিষয়ে চিন্তা করে বা আমার সাথে কথা বলে, তো অবশ্যই আমি তো ওপেন আছি। আমিও চাইবো যে কোনো না কোনো দিক থেকে বাংলাদেশকে সার্ভ করতে, যেহেতু এত বছর ক্রিকেট খেলেছি, ক্রিকেটটাকে জানি, বুঝি। তো যদি এমন হয়, অবশ্যই আমি চাইবো যে আমি কোনো না কোনো ক্ষেত্রে আমি বাংলাদেশকে সার্ভ করার জন্য।"
কৃতজ্ঞতা, শান্তি আর পরিপূর্ণতা—এই তিন অনুভূতি নিয়েই মাঠ ছাড়লেন শামসুর রহমান শুভ। তার চোখে—এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন।
ইএ/এসএন