আমরা অনেকেই জানি যে, জলপাই এবং জলপাই তেল খাদ্যতালিকায় যুক্ত করলে স্বাস্থ্যের জন্য তা অনেক উপকার বয়ে আনে। উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর চর্বির পাশাপাশি এগুলি ডায়েটারি ফাইবার বা খাদ্য আঁশে পরিপূর্ণ।
নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, জলপাইয়ের পাতাও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আমেরিকান জার্নাল অব প্ল্যান্ট সায়েন্সেস-এ প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, জলপাইয়ের পাতা রক্তের শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রাখে।
ইস্তাম্বুলের ফাতিহ সুলতান মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক আবদুর রহিম কোয়েজিগিতের নেতৃত্বে এই গবেষণাটি করা হয়। এতে দেখা গেছে, জলপাইয়ের পাতা অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল, অ্যান্টিহাইপারস্পেনসিভ এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
কোয়েজিগের মতে, সাধারণত টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে বেশিরভাগ সময় ইনসুলিনের মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকে এবং রক্তে শর্করার মাত্রাও বেশি থাকে। তিনি এজন্য ইনসুলিন রিসেপ্টরগুলির অভাবকে দায়ী করেছেন, যা কোষে গ্লুকোজ প্রবেশ প্রক্রিয়ায় এবং বিপাকীয়করণ প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়।
কোয়েজিগির মতে, জলপাইয়ের পাতা থেকে প্রাপ্ত পলিফেনল ইনসুলিন সংবেদনশীলতা এবং ক্রিয়াকলাপ বাড়িয়ে তুলতে পারে, পাশাপাশি শরীরকে আরও ভালো উপায়ে বিপাকক্রিয়ায় সহায়তা করার জন্য অগ্ন্যাশয় প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে তুলতে পারে।
জলপাই গাছের পাতায় অলিওরোপিন নামক পলিফেনল থাকে, যা ওজন বৃদ্ধি রোধ করতেও সহায়তা করে। এছাড়াও এটি উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ মাত্রার ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে।
গবেষণার জন্য, পরিপক্ব জলপাই পাতা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং এক বছরের ধরে এর কোষ সংস্কৃতির উপর গবেষণা চালানো হয়।
কোয়েজিগিত আরও জনান, তারা সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেক রোগীই জলপাইয়ের পাতা বিভিন্ন উপায়ে সেবন করে থাকেন।
তবে, সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে সর্বাধিক প্রভাবের জন্য, সঠিক ডোজ জানা জরুরি, ফলে এ বিষয়ে প্রাণী এবং মানুষের উপর আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় গবেষকরা মধ্য বয়সী ৪৬ জন পুরুষকে জলপাই পাতার নির্যাস অথবা প্লাসেবো, দুটির মধ্যে যেকোনো একটি সেবন করতে বলেছিলেন। ১২ সপ্তাহ পরে দেখা গেছে, যারা জলপাই পাতার নির্যাস গ্রহণ করেছেন তাদের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা এবং অগ্ন্যাশয়ের প্রতিক্রিয়াশীলতায় অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটেছে।
বি.দ্র. খাদ্য পরিপূরক বা ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে জলপাইয়ের পাতার নির্যাস সেবন করা যেতে পারে, কিন্তু এটি কখনোই নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিন ইনঞ্জেকশনের বিকল্প নয়। তথ্যসূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান টাইমস এবং মেডিক্যাল নিউজ টুডে
টাইমস/এনজে/জিএস