আজ ১৪ ডিসেম্বর জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস

আজকের দিনে জয়পুরহাটের আকাশে এক দীপ্তিময় নতুন সূর্যের উদয় হয়েছিল। ঠিক ৫৪ বছর আগে ১৪ ডিসেম্বর সকালের সেই সূর্য বাংলার মাটিতে এনেছিল স্বাধীনতাকামী বাঙালির বহু আকাঙ্ক্ষিত চূড়ান্ত বিজয়।

১৯৭১ সালের দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তঝরা পথ পেরিয়ে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় সেই পরম আরাধ্য স্বাধীনতা। এই বিজয়ের মাসে পৃথিবীর মানচিত্রে ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন রাষ্ট্র আত্মপ্রকাশ করে। সেই থেকে ডিসেম্বর মাস হলো বাঙালি জাতির অদম্য অহংকার আর চিরন্তন গৌরবের মাস।

আজ ১৪ ডিসেম্বর। ৭১-এর এই দিনে জয়পুরহাটের আকাশে তখন ঘন কুয়াশার চাদর। কিন্তু এই কুয়াশার আড়ালে জমে থাকা ভয় আর শঙ্কা সেদিনই শেষ হওয়ার অপেক্ষায়। রাত পেরোতেই ভোরের প্রথম আলো যখন সবেমাত্র কুয়াশা ভেদ করার চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই পাঁচবিবির ভূঁইডোবা সীমান্ত ধরে এগিয়ে এলো দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধার এক অদম্য দল। তাদের চোখে বিজয়ের স্বপ্ন, হাতে অস্ত্র আর হৃদয়ে গর্জন।

মু্ক্তিযোদ্ধারা ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল্লাস করে যেন ঘোষণা করলেন আমরা এসেছি! তাদের আগমন বার্তা বিদ্যুতের গতিতে ছড়িয়ে পড়লো শহরে। আর তাতেই কাঁপন ধরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের মনে। জীবন বাঁচাতে তারা বগুড়া আর ঘোড়াঘাটের দিক দিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের দলটি দ্রুত দুই ভাগে ভাগ হয়ে এক দল গেলো পাঁচবিবির দিকে, অন্য দল এগিয়ে চললো জয়পুরহাটের দিকে। পায়ে হেঁটে এগিয়ে যাওয়া সেই দলের প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল বিজয়ের সুর। তারা এসে পৌঁছালেন শহরের পুরনো ডাক বাংলোতে। ততক্ষণে সূর্য কুয়াশা সরিয়ে আকাশ রাঙিয়ে তুলেছে। কমান্ডার খন্দকার আসাদুজ্জামান (বাঘা বাবলু) হাতের লাঠি দিয়ে মাটি কাঁপিয়ে ডাক বাংলো চত্ত্বরে উত্তোলন করলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা, সেই লাল-সবুজের অহংকার।

এদিন ওই চত্ত্বরটি মুক্তিযোদ্ধাদের উল্লাসে চারপাশ মুখরিত হলো। সমবেত কণ্ঠে তারা গাইলেন জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। শুধু ডাক বাংলো নয়, সিও কলোনি এবং জয়পুরহাট চিনিকলে উড়েছিল সেই স্বপ্নের পতাকা।

তবে এই বিজয় উল্লাসের ফাঁকে রয়ে গেছে গভীর ক্ষত, গণহত্যার এক করুণ ইতিহাস। পাক হানাদার বাহিনী জয়পুরহাটের সদরের পাগলা দেওয়ান এলাকায় প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে গণকবর দিয়েছিল, যা এখন পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি নামে পরিচিত। এ ছাড়া, কড়ই কাদিপুর গ্রামে ৩৭১ জন মৃৎশিল্পীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

পাগলা দেওয়ান আর কড়ই কাদিপুরের বধ্যভূমিতে ঘুমিয়ে আছেন সেই সব নিরীহ মানুষ, যারা হানাদারদের নির্মমতার শিকার হয়েছিলেন। তবুও সেদিন সেই ভোরেই জয়পুরহাট পেয়েছিল তার চূড়ান্ত মুক্তি। এটি কেবল একটি জেলার মুক্তি ছিল না, ছিল স্বাধীনতাকামী মানুষের বহুদিনের লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন। বিজয়ের এ দিনকে স্মরণ রাখার জন্য জয়পুরহাট জেলা শহরে শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানে ৭১ ফুট উচ্চ শহীদ স্মৃতি বিজয় স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
হাদির ঘটনায় ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও ৩ জন আটক Dec 14, 2025
img
বছরের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি শাকিব খানের সিনেমা করা: সাবিলা Dec 14, 2025
img
দুর্নীতি বন্ধ না হলে রাষ্ট্র কাঠামো দুর্বলই থেকে যাবে: তারেক রহমান Dec 14, 2025
img
জামায়াতকে ভোট দিলে শান্তিতে থাকতে দেওয়া হবে না : বিএনপি নেতা Dec 14, 2025
img
হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসছে সোমবার সকালে Dec 14, 2025
img
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে সকল অপশক্তি পরাস্ত হবে: ইশরাক Dec 14, 2025
img
তবে কি এবার কপাল পুড়লো ভারতের? Dec 14, 2025
img
সোমবার ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে : প্রধান উপদেষ্টা Dec 14, 2025
img
রাষ্ট্র পরিচালনায় নীতি ও আইনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে: তারেক রহমান Dec 14, 2025
img
সরকার হাদিকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে : আব্দুল্লাহ আল জাবের Dec 14, 2025
img
কেন ভেঙেছিল জিৎ আর স্বস্তিকার প্রেম? Dec 14, 2025
img
“ভুল সবই ভুল, এ জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা, সে ভুল!” Dec 14, 2025
img
মোটরসাইকেলটি শোরুমে বিক্রি করে দিয়েছিলাম: হাদির ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক হান্নান Dec 14, 2025
img
ডি পল কেন স্যান্ডো গেঞ্জি পরে মাঠে এসেছিলেন? Dec 14, 2025
img
অপুর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের খবর প্রকাশ্যে আনলেন মোমো Dec 14, 2025
img

আইপিএল মক নিলাম

৭৫ লাখ রুপিতে আইপিএলে দল পেল তানজিম সাকিব! Dec 14, 2025
img
যুব এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে হারাল ভারত Dec 14, 2025
সফলতার কুরআনিক কোড | ইসলামিক টিপস Dec 14, 2025
img
সোমবার রাজধানীতে সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশ Dec 14, 2025
img

প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত সেক্রেটারি

হাদির ওপর হামলায় জড়িত গডফাদাররা চিহ্নিত না হলে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে না Dec 14, 2025