দেশের জন্য, জুলাইয়ের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া মানুষটি আর সত্য উচ্চারণে জ্বলে উঠবেন না। আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি।
জুলাই স্পিরিট বাঁচিয়ে রাখতে হাদি শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়ে গেছেন। যে লড়াইয়ের জন্য নিজের ১০ মাস বয়সী সন্তানের সঙ্গেও তার ঠিকঠাক মতো দেখা হতো না।
বিভিন্ন প্লাটফর্মে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে আক্ষেপের কথা বলে গেছেন তিনি। বলে গেছেন, ‘আল্লাহ যদি আমাকে নিয়ে যায়, আমার বাচ্চাটার দিকে একটু খেয়াল রাইখেন’।
হাদিকে গুলি করার পর সংবাদ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সব জায়গায় হাদির কিছু কিছু ভিডিও ক্লিপ্স ছড়িয়ে পড়ে। এরমধ্যে শহীদকে স্মরণ করছেন সবাই। এরমধ্যেই একটি ক্লিপ্সে কান্নারত হাদিকে বলতে শোনা যায়, ‘ভাইয়া আল্লাহ যদি আমাকে নিয়ে যায় আমার বাচ্চাটার দিকে একটু খেয়াল রাইখেন’।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কথাটি বলেছিলেন ওসমান হাদি।
হাদি বলেছিলেন, ‘আমার বাচ্চাটারে তিন মাসে ত্রিশ মিনিটও আমি কোলে নিতে পারি নাই। আমার ওয়াইফ মাঝে মধ্যে মজা করে বাচ্চাকে বলে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসছে। আমার এই প্রথম মনে হইলো আমি আমার ভাইয়াকে বলি, ভাইয়া আল্লাহ যদি আমাকে নিয়ে যায় আমার বাচ্চাটার দিকে একটু খেয়াল রাইখেন। কিন্তু এই কথাটা আমি আর বলতে পারি নাই।
আমার সারা জীবনের যেটুকু সততা, সাহস, লড়াই, এটার সমস্ত শক্তি আমার আব্বা। আমি যদি কিছু হলেও করতে পারি, সততার সাথে, আল্লাহ যদি আমারে রহম করে, তাহলে আমার ছেলে, আমার পরিবার, আমার ভাইবোন, আমার ইনকিলাব মঞ্চের ভাইবোনগুলো, এগুলোকে আল্লাহই দেখবেন।যেভাবে আল্লাহ এখন আমাদেরকে দেখতেছেন, সুতরাং কারো কাছে আর কোনো প্রত্যাশা নাই।’
গত ১২ ডিসেম্বর গণসংযোগের জন্য রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গেলে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে হাদিকে গুলি করা হয়। গুলিটি তার মাথায় লাগে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। সিঙ্গাপুরে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাদি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এমআর/টিকে