রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি ছয় ডিনের পদত্যাগের দাবিতে রেজিস্ট্রার দফতরে তালা ঝুলিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) ডিনস কমপ্লেক্সে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ডিনদের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। পরে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের কার্যালয় থেকেও কর্মকর্তাদের বের করে দিয়ে দফতরে তালা দেন তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রথমে রেজিস্ট্রার দফতরে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে তারা উপাচার্য ভবনের দিকে এগিয়ে গেলে উপ-উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের তর্কাতর্কির ঘটনা ঘটে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত ছয় ডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করছেন। ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার পর দোসররা ক্যাম্পাসে থাকার কারণে জুলাইয়ের পক্ষের শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ বোধ করছে।
অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তারা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিকেল তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা তালা খুলে দেন। এরপর প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন আন্দোলনকারীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো আলোচনা চলছে।
এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আম্মার তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শনিবার ঘোষণা দিয়েছিলেন রোববারের মধ্যে ফ্যাসিস্টদের দোসর আওয়ামীপন্থি ৬ ডিনকে পদত্যাগ করতে হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সালাহউদ্দিন আম্মার ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে সেইসব ডিনের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন ও মুঠোফোনে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চান তাদের কাছে।
তবে ছয়টি বিভাগের সভাপতিরা জানিয়েছেন যে তারা এখনও লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেননি। ডিনদের ৬ জন আজ ক্যাম্পাসে আসবেন না বলে জানান। কেউ কেউ ছুটি নেয়ার কথা জানালেও লিখিতভাবে তারা বিভাগের সভাপতির কাছ থেকে ছুটি নেয়নি বলে জানান সালাহউদ্দিন আম্মার।
তিনি বলেন, ‘আগামী ৩ দিনের মধ্যে তালিকা তৈরি করে আওয়ামী লীগের দোসর শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রলীগ নামধারী শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দেড় বছরেও তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় আমরাই এখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
আওয়ামীপন্থী ৬ ডিন হলেন: আইন অনুষদের প্রফেসর আবু নাসের ওয়াহিদ, বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক নাসিমা আখতার, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধ্যাপক এ এস এম কামরুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক এস এম একরাম উল্লাহ, প্রকৌশল অনুষদে প্রফেসর বিমল কুমার প্রামাণিক ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদে অধ্যাপক এএইচএম সেলিম রেজা।
এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে রাকসুর সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আম্মারের সঙ্গে দেখা করেন প্রক্টর মাহবুবুর রহমান।
পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য আমি এসেছি। যেই ৬ ডিনের ব্যাপারে আপত্তি তোলা হয়েছে তাদের মেয়াদ গত ১৭ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর সালেহ হাসান নকীব অতিদ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নিবেন।
আইকে/টিএ