মাটিবিহীন সবজি চাষ

ছাদে বাগান করা যাদের শখ, তাদের বেশির ভাগই মৌসুমি ফলের গাছ বা ফুলগাছ লাগিয়ে থাকেন। এতে করে সারা বছরের পরিচর্যায় কয়েক মাস ফল পাওয়া যায়। এর জন্য বেশ পরিশ্রমও করতে হয় না। কিন্তু অনেকেই হয়ত জানেন না, ‘হালকা জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে শাকের চাষ’ পদ্ধতিতে নিজের ছাদ বাগান থেকেই প্রতিদিনের রান্নার সবজি উৎপাদন সম্ভব।

এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ ছাদে মাটি টেনে তোলার ঝামেলা থেকেও মুক্তি দেবে। এ পদ্ধতিতে প্রতি বর্গমিটারে যেখানে ৪০ কেজি মাটির প্রয়োজন হয়, সেখানে মাত্র ৪ থেকে ৫ কেজি কোকোডাস্টই যথেষ্ট। ফলে ওজন কমে আসে অনেকটাই। এতে করে ছাদের ভার বহনে কোনো সমস্যা হয় না। মাটিবিহীন ছোট পাত্রে টমেটো, লেটুস, লাউ, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, খিরা, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, মটরশুঁটি, গাঁদা, গোলাপ, অর্কিডসহ নানা ফসল উৎপাদন সম্ভব।

মাটি ছাড়া চাষ পদ্ধতি

  • এই পদ্ধতিতে প্রথমেই প্রয়োজন হবে কোকোমাস (নারিকেলের ছোবড়া) ও কোকোডাস্ট (নারিকেলের ছোবড়া থেকে পাওয়া গুঁড়া)। কোকোডাস্ট পাওয়া যাবে আগারগাঁওয়ের গ্রিন সেভারসসহ বড় সব নার্সারিতে। আর কোকোমাস পাওয়া যাবে লেপতোষক-জাজিম বানানোর দোকানে।
  • দোকান থেকে অল্প পরিমাণে কোকোডাস্ট নিলে তাতে খুদে জীবাণু বা ক্ষতিকর কোনো কিছুর উপস্থিতি থাকতে পারে। তাই তা শোধন করে নেয়া ভালো। রাসায়নিকভাবে কৃষি পরীক্ষাগারে, গরম পানি ব্যবহার করে, সেদ্ধ করে কিংবা বালাই ও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে কোকোডাস্টের বিশুদ্ধতা আনা যায়।

  • এবার বেড বা বিছানা তৈরির পালা। দৈর্ঘ্য হবে ১০ ফুট আর প্রস্থ ৩ ফুট। গভীরতা ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি। চারপাশে পরপর ইট বিছিয়ে নিতে হবে। বেডের মাপ অনুযায়ী পলিথিন এমনভাবে বিছিয়ে নিতে হবে, যাতে ইটও ঢাকা পড়ে।
  • ৬-৮ ইঞ্চি গভীরতার ক্ষেত্রে বেডের নিচের দেড় থেকে ২ ইঞ্চি অংশ কোকোমাস দিয়ে খুব আঁটসাঁটভাবে পূর্ণ করতে হবে। এবার ওপরের বাকি অংশ কোকোডাস্ট দিয়ে পূর্ণ করতে হবে।
  • বেড তৈরির সময়ই নাইট্রোজেন, পটাস, সালফারসহ প্রয়োজনীয় সব সার নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে দিতে হবে। সার মেশানোর ৪-৫ দিন পর শাকের বীজ বুনে দিন। সাধারণত পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটাশাক, পালংশাক, পাটশাক, লাউ, রাই বা সরিষা শাক থেকে শুরু করে ধনিয়া পর্যন্ত চাষ করা যায়।
  • একই বেডে একই বীজ একদিনে না বুনে পরপর তিন ধাপে তিন দিনে ফেললে শাক পর্যায়ক্রমে বেড়ে উঠবে। এতে অনেক দিন ধরে খাওয়া যাবে।
  • পাখির হাত থেকে রক্ষা পেতে চারপাশে ও উপরে জাল টেনে দেয়া যেতে পারে।
  • প্রতিদিন পানি দিতে হবে। প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহে অল্প সার দেয়া যায়। মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত সার শাকের পাতা ঝলসে দিতে পারে, এমনকি গাছ মারাও যেতে পারে। তাই সার দেয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

সতর্কতা

  • ‘হালকা জৈব মাধ্যমে শাকের চাষ’ পদ্ধতির ক্ষেত্রে সবার আগে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হয়। কারণ, মাটির টবে দু-একদিন পানি দেয়া না হলেও হয়তো গাছ টিকে থাকে, কিন্তু কোকোডাস্টের মাধ্যমে তা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকাল-বিকেল পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।
  • নিচে পলিথিন থাকে বলে ছাদ ঘামতে পারে। নতুন ছাদের ক্ষেত্রে তেমন সমস্যা না হলেও পুরনো ছাদের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতি তিন মাস পরপর বা এক ফসল পর পলিথিনসহ বিছানো বেডের স্থান বদলে দিতে হবে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: