থাই সরপুঁটি যেভাবে চাষ করবেন

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দ্রুত বর্ধনশীল এক বিশেষ প্রজাতির মাছ থাই সরপুঁটি। এ মাছ ১৯৭৭ সালে থাইল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। তাই এটি আমাদের দেশে থাই সরপুঁটি নামেই পরিচিত। মাছটি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। এটি বেশ শক্ত প্রকৃতির অধিক ফলনশীল মাছ। প্রতিকূল পরিবেশে কম অক্সিজেনযুক্ত বেশি তাপমাত্রার পানিতেও এ মাছ বেঁচে থাকতে পারে।

থাই সরপুঁটি চাষের কিছু সুবিধাজনক দিক রয়েছে। গ্রামাঞ্চলের পতিত পুকুর-ডোবাগুলো সামান্য সংস্কার করে অতি সহজেই এই মাছ চাষ করা যায়। রুই জাতীয় মাছের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচে, কম সময়ে ও সহজতর ব্যবস্থাপনায় এই মাছ কাঙ্খিত মাত্রার বেশি উৎপাদন পাওয়া সম্ভব। একটি থাই সরপুঁটির পোনা ছয় মাসে গড়ে ১২০ থেকে ১৫০ গ্রাম ওজনে উন্নীত হয়ে থাকে। একই পুকুরে বছরে দু’বার এই মাছের চাষ করা যায়।

থাই সরপুঁটি চাষের জন্য পুকুরের আয়তন পাঁচ শতাংশ থেকে ত্রিশ শতাংশ হতে পারে। এর চেয়ে বেশি হলেও ক্ষতি নেই। তবে এক একরের ঊর্ধ্বে না হলেই ভালো। পুকুরের গভীরতা হবে দেড় মিটার থেকে দুই মিটার অর্থাৎ তিন থেকে চার হাত।

পোনা ছাড়ার আগে পুকুর ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে। শুকনো মৌসুমে পুকুরের সম্পূর্ণ পানি নিষ্কাশন করে তলার মাটি ১০-১৫ দিন ধরে রোদে শুকাতে হয়। এরপর লাঙল দিয়ে চাষ করে নিতে হবে। পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রাণি মেরে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।

পুকুর প্রস্তুতির জন্য প্রতি শতাংশে এক কেজি হারে পাথুরে চুন প্রয়োগ করা দরকার। চুন প্রয়োগের সাত দিন পর প্রতি শতাংশে চার কেজি গোবর, দেড়শ’ গ্রাম টিএসপি, একশ’ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা জরুরি। সার পুকুরের তলার ছড়িয়ে দিয়ে কোদালের সাহায্যে ভালোভাবে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের পর পুকুর পানি দিয়ে ভরে দেয়া জরুরি।

পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য প্লাঙ্কটনের পর্যাপ্ত মজুদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে প্রতি শতাংশে দেড় ইঞ্চি থেকে দুই ইঞ্চি সাইজের ৬০-৬৫টি থাই সরপুঁটির পোনা ছাড়া যেতে পারে।

পুকুরে যে পরিমাণ মাছ আছে, সে মাছের মোট ওজনের শতকরা চার থেকে ছয় ভাগ হারে চালের কুড়া বা গমের ভুসি সম্পুরক খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে পুকুরের সর্বত্র ছিঁটিয়ে দিতে হবে। খাদ্য ঘাটতি দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতি শতাংশে দেড়শ’ থেকে দুইশ’ গ্রাম ইউরিয়া ও টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। থাই সরপুঁটি সাধারণত নরম ঘাস পছন্দ করে। তাই এ মাছের জন্য ক্ষুদে পানা, টোপা পানা, নেপিয়ার ঘাস, কলাপাতা ইত্যাদি প্রতিদিন সামান্য পরিমাণে হলেও সরবরাহ করতে পারেন।

প্রতি মাসে একবার জাল টেনে মাছের গড় ওজন নির্ধারণ করে খাবার পরিমাণ ক্রমশ বাড়াতে হবে। পাঁচ-ছয় মাস পালনের পর এক একটি মাছের ওজন দাঁড়াবে গড়ে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ গ্রাম। এ সময় মাছ বাজারজাত করার পুরোপুরি উপযোগী হয়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ফরিদপুরে ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩ May 11, 2024
img
উন্নয়ন পরিকল্পনা হতে হবে পরিবেশবান্ধব, ব্যয় সাশ্রয়ী : প্রধানমন্ত্রী May 11, 2024
img
৩৭ শতাংশ হজযাত্রীর এখনো ভিসা হয়নি May 11, 2024
img
দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ May 11, 2024
img
চালক ঘুমিয়ে পড়ায় দোকানে ঢুকে পড়ল লরি, নিহত ২ May 11, 2024
img
যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহারে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে: বাইডেন প্রশাসন May 11, 2024
img
স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠনে বাংলাদেশসহ ১৪৩ দেশের ভোট May 11, 2024
img
হায়দার আকবর খান রনো মারা গেছেন May 11, 2024
img
আফগানিস্তানে আকস্মিক বন্যায় নিহত ৬০, নিখোঁজ আরও বহু May 11, 2024
img
সকালেই আঁধারে ছেয়েছে রাজধানী, বজ্রসহ ঝোড়ো বৃষ্টি May 11, 2024