দর্জি মায়ের প্রেরণায় বিসিএসে তৃতীয় হওয়ার গল্প জবি ছাত্রের

অভাবের সংসারে বাবা বাজারে মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। মারা যাওয়ার পর তাদের অভাব আরও প্রকট হয়। খেয়ে না খেয়ে সংসার চলেছে তাদের। এ অবস্থায় তাদের সংসারে হাল ধরেন মা। সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। এভাবে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। শুধু তাই নয় সেই ছেলে এবার বিসিএসে দেশ সেরাদের তালিকায় এসেছেন। ৩৮তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে তৃতীয় হয়েছেন তিনি। গল্পটা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লালটু সরকারের। টিউশনি করিয়ে পড়াশোনার খরচ বহন করেছেন। অভাবকে জয় করে তিনি এবার বিসিএসে চমক দেখিয়েছেন। হাসি ফুটিয়েছেন মায়ের মুখে।

জানা গেছে, লালটু সরকার সাতক্ষীরার তালা সদরের মাঝিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা। ভাই-বোনের মধ্যে লালটু ছোট। বড় বোন দিপালী সরকার থাকেন স্বামীর বাড়িতে। মা সুলতা সরকার থাকেন গ্রামের বাবার রেখে যাওয়া কুঁড়েঘরে। লালটু সরকার ২০০৭ সালে তালা বিদে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৪ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০০৯ সালে তালা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৪.৬০ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে ২০১৩ সালে অনার্স ও ২০১৪ সালে মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

লালটু সরকারের মা দিপালী সরকার বলেন, ২০০৬ সালে লালটুর বাবার মারা যাওয়ার পর খুব অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। দিন চলতো না ঠিকমতো। খেয়ে না খেয়ে থেকেছি। এরপর একটি বেসরকারি সংস্থা একটা সেলাই মেশিন দেয়। সেই সেলাই মেশিনের হাতের কাজ করে উপার্জনের টাকা দিয়ে সংসার চালত। ছেলে লেখাপড়া শিখত। খুব বেশি খরচ ছেলেকে কোনোদিন দিতে পারিনি। তবে চেষ্টা করেছি সাধ্যমতো। ছেলে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। তবে এটি কি জিনিস আমি বুঝি না। তবে ছেলে বলেছে ভালো চাকরি পেয়েছে। আমাদের আর অভাব থাকবে না।

লালটু সরকার বলেন, এসএসসি পরীক্ষার এক বছর আগে বাবা মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার পর দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। তবে লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। অভাবের মধ্যেই বেড়ে উঠেছি। এইচএসসি শেষ করে তালা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর টাকার অভাবে চারটি টিউশনি করেছি। সেই টাকায় শেষ করেছি লেখাপড়া। মা-বোন সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছে আমাকে। মাস্টার্স শেষ করার পর বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা দিয়েছি। বার বার ব্যর্থ হয়েছি। তবে আমি স্বপ্ন দেখতাম বিসিএস ক্যাডার হব। ২০১৭ সালে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হল। পরীক্ষা দিয়েই বুঝেছিলাম আমার নাম আসবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলাম। এরপর দৈনিক ১৮-১৯ ঘণ্টা পড়ালেখা করতাম। অবশেষে শিক্ষা ক্যাডারে সারা দেশে তৃতীয় হয়েছি। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

এখন সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমার ওপর আসা রাষ্ট্রের সরকারি দায়িত্ব পালন করতে চান লালটু সরকার।

 

টাইমস/জেকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিএনপি এখনো ইউনূস সরকারের প্রতি আস্থাশীল: রিজভী Nov 16, 2025
img
ফের পর্দায় জুন মালিয়া, ওয়েব সিরিজে নজরকাড়া প্রত্যাবর্তন! Nov 16, 2025
img
জুনে ফার্মগেটে শিবিরের সঙ্গে আন্দোলনের পরিকল্পনা করি : মুনতাসির Nov 16, 2025
img
সরকারকে গণভোট নিয়ে জনমনের সংশয় দূর করতে হবে: গোলাম পরওয়ার Nov 16, 2025
img
জুলাই শহীদদের পরিচয় শনাক্তে বিদেশি ফরেনসিক টিম আসছে ৫ ডিসেম্বর: আসিফ মাহমুদ Nov 16, 2025
img
অসুস্থতা কাটিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন সৌমিতৃষা Nov 16, 2025
img
শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে হাইকোর্ট এলাকায় বিক্ষোভ Nov 16, 2025
img
তাজুল ইসলাম, শিশির মনিরদের চালাকি ফাঁস হয়ে গেছে : মো. তারেক রহমান Nov 16, 2025
img
দেশের অর্থনীতি আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা Nov 16, 2025
img
মালয়েশিয়ায় প্লাস্টিক কারখানায় অভিযান, ৪৫ বাংলাদেশিসহ ১২৩ বিদেশি আটক Nov 16, 2025
img
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকাসহ ৪ জেলায় বিজিবি মোতায়েন Nov 16, 2025
img
রয়্যাল ব্লু শাড়িতে নজর কাড়লেন নুসরাত ফারিয়া Nov 16, 2025
img
অপারেশন সিন্দুর থেকে কিছুই পাওয়া যায়নি: ফারুক আবদুল্লাহ Nov 16, 2025
img
‘তোমাকে বাংলাদেশের দরকার’, হাদীকে শিক্ষিকা মোনামি Nov 16, 2025
img
গাজীপুরে গ্রামীণ ব্যাংকের শ্রীপুর শাখায় পেট্রল বোমা হামলা Nov 16, 2025
img
সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে চায় কমিশন : সিইসি Nov 16, 2025
img
ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে মার্কিন সামরিক মহড়ার নিন্দা মাদুরোর Nov 16, 2025
img
হঠাৎ কেন দিল্লি যাচ্ছেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা : গোলাম মাওলা রনি Nov 16, 2025
img
সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের Nov 16, 2025
img
চলতি বছরের ডিসেম্বরে ফোরকে কোয়ালিটিতে আসছে আনকাট ‘শোলে’ Nov 16, 2025