নারী ও শিশুর পুষ্টিহীনতা

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের প্রধান সমস্যা অপুষ্টি। শিশু ও প্রজনন বয়সী নারীদের এই সমস্যা প্রকট। অপুষ্টির প্রধান কারণ সব বয়সী মানুষের সঠিক খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস ও চর্চা না থাকা। আর্থসামাজিক নানা বিষয় এর পেছনে কাজ করে। শহর-গ্রাম এবং ধনী-দরিদ্র পরিবারভেদে শিশুদের খর্বতা, কৃশতা ও কম ওজনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। অপুষ্টির শিকার হলে দেহের স্বাভাবিক গঠন ও বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। অপুষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। অপুষ্টির শিকার মানুষের কর্মক্ষমতা লোপ পায়।

এবার জেনে নেই অপুষ্টির কারণ ও কুফল

জন্মের সময় ওজন
জন্মকালীন ওজন একটি শিশুর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কতটুকু তার নির্দেশক হিসেবে কাজ করে। জন্মকালীন আদর্শ ওজন কমপক্ষে আড়াই কিলোগ্রাম। এর কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বেশি। সাধারণত সময়ের আগে জন্মগ্রহণ করা (৩৭ সপ্তাহ গর্ভে থাকার আগে) শিশুর ওজন কম হয়। এদের ‘সময়ের আগে জন্মানো শিশু’ বা ‘প্রি-টার্ম বেবি ’বলে। যে ১০টি দেশে সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশু বেশি, বাংলাদেশ তার একটি।



খর্বতা
বয়সের তুলনায় শিশুর উচ্চতা কম হলে তাকে বলা হয় খর্বকায় শিশু (স্টান্টেড চাইল্ড)। দীর্ঘকাল অপুষ্টিতে ভুগতে থাকলে শিশু খর্বকায় হয়। খর্বকায় শিশু ঘন ঘন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। এদের মানসিক বিকাশ কম হয়। ২০১১ সালের জরিপে (বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ) দেখা যায়, পাঁচ বছরের কম বয়সী ৪১ শতাংশ শিশু খর্বকায়। এর অর্থ প্রতি পাঁচটি শিশুর দুটি খর্বকায়। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে ছিল যথাক্রমে ৫১ ও ৪৩ শতাংশ। খর্বকায় শিশুর হার বছরে ১.৪ শতাংশ হারে কমছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরে ২ বা ৩ শতাংশ হারে কমলে তা সন্তোষজনক হতো।

কৃশতা
কৃশকায়তা অপুষ্টির নির্দেশ করে। শিশুর ওজন যদি উচ্চতার তুলনায় কম হয়, তা হলে শিশু কৃশকায় হয়। তীব্র অপুষ্টির শিকার শিশু কৃশকায় হয়ে পড়ে। ২০১১ সালে কৃশকায় শিশু ছিল ১৬ শতাংশ। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে ১৫ও ১৭ শতাংশ।

ওজনস্বল্পতা
অপুষ্টির আরেকটি রূপ হলো পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের বয়সের তুলনায় ওজন কম হওয়া। বাংলাদেশে ২০১১ সালে এই ধরণের শিশু ছিল ৩৬ শতাংশ। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে ৪৩ ও ৪১ শতাংশ।



রক্তস্বল্পতা
শিশু ও নারীদের রক্তস্বল্পতা অপুষ্টির নির্দেশক। রক্তে আদর্শ অবস্থার চেয়ে কম পরিমাণ হিমোগ্লোবিন থাকলে মানুষ রক্তস্বল্পতায় ভুগছে বলা হয়। মাতৃমৃত্যু, হঠাৎ গর্ভপাত, সময়ের আগে জন্ম নেয়া শিশু বা কম ওজন নিয়ে শিশু জন্মগ্রহণ করার একটি প্রধান কারণ মায়ের রক্তস্বল্পতা।

দেশের ১৫-৪৯ বছর বয়সী ৪২ শতাংশ নারী রক্তস্বল্পতার শিকার। অন্যদিকে ৬-৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ৫১ শতাংশ রক্তস্বল্পতায় ভুগছে।

বয়ঃসন্ধিকালীন অপুষ্টি
সরকারের পুষ্টিবিষয়ক দলিলে বলা হচ্ছে, দেশের এক-তৃতীয়াংশ মেয়ে বয়ঃসন্ধিকালীন অপুষ্টির শিকার। তাদের উচ্চতা অনুপাতে ওজন কম। একজন নারীর উচ্চতা ১৪৫ সেন্টিমিটারের কম হলে তাকে খর্বকায় বলা হয়। বাংলাদেশে প্রজননক্ষম নারীদের ১৩ শতাংশ খর্বকায়। এসব নারীর প্রসবকালে জটিলতার ঝুঁকি বেশি এবং পাশাপাশি এদের শিশুর খর্বকায় হওয়ার আশঙ্কাও বেশি।

স্থুলতা
নারীদের মধ্যে ওজনাধিক্য বা স্থুলতা নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। ২০০৭ সালে দেশে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ওজন, এমন নারী ছিল ১০ শতাংশ। ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ শতাংশ। অর্থাৎ চার বছরে ওজনাধিক্যের মাত্রা ৪০ শতাংশ বেড়েছে। ২০০৭ সালে দেশে স্থুল নারী ছিল ২ শতাংশ। ২০১১ সালে দেখা গেছে ৩ শতাংশ। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, নারীদের মধ্যে ওজনাধিক্য ও স্থুলতা বেশি দ্রুতই বাড়ছে।

 

টাইমস/এসই/এইচইউ

Share this news on: