পুষ্টির ভান্ডার বাতাবি লেবু

পুষ্টিগুণে ভরপুর এক ফলের নাম বাতাবি লেবু। দেশের কোথাও বাতাবি লেবু আবার কোনো কোনো অঞ্চলে এই ফল জাম্বুরা নামে পরিচিত। তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন দেশীয় এ ফলটি অত্যন্ত পুষ্টিগুনসমৃদ্ধ। বিশেষত এ ফল থেকে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। বাতাবি লেবু ক্যানসার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। শরীরের দূষিত ও বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণে এই ফলের ভূমিকা প্রমাণিত। বিভিন্ন ধরনের প্রাণঘাতী রোগ প্রতিরোধেও বাতাবি লেবুর রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেকোনো ধরনের কাটা-ছেঁড়া ও ক্ষত সারাতে বাতাবি লেবুর জুড়ি নেই।

গ্রামে বড় হয়েছেন এমন অনেকেই ছোটবেলায় ফুটবলের অভাব পূরণ করেছেন বাতাবি লেবু বা জাম্বুরা দিয়ে। কখনো জাম্বুরার খোলস হয়েছে মাথার টুপি। তবে সেই জাম্বুরার কদর এখন বেড়েছে অনেক বেশি। কী আছে জাম্বুরায়, আর কেনই বা খেতে হবে, জানতে চেয়েছিলাম যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানভীর আহমেদের কাছে।

তিনি জানান, প্রচুর ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়ামসহ শরীরের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান আছে এতে। তাই রোগ প্রতিরোধে, রোগ নিরাময়ে, এবং শরীরের ঘাটতি পূরণে জাম্বুরা খুবই কার্যকর একটি ফল। যকৃত, দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষাতেও বাতাবি লেবু অতুলনীয়। হৃদপিন্ড সুরক্ষায় এবং ওজন কমাতেও বাতাবি লেবু সহায়তা করে। এর ফ্যাট বার্নিং এনজাইম শ্বেতসার ও সুগার শোষণ করে ওজন কমাতে সহায়তা করে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে সুরক্ষা এবং হৃদরোগজনিত জটিলতা থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
টক-মিষ্টি মিশ্রিত স্বাদের এই ফলের আদি নিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। তবে কালান্তরে এখন এটি আমাদের দেশি ফল। এই ফল নিয়মিত খেলে অনেক রোগ এড়ানো যায়।

বাতাবি লেবুর পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম বাতাবি লেবুতে খাদ্য উপাদান হিসেবে আপনি পাবেন ৩৮ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি। প্রোটিন ০.৫ গ্রাম। স্নেহ ০.৩ গ্রাম। শর্করা ৮.৫ গ্রাম। খাদ্যআঁশ ১ গ্রাম । থায়ামিন ০.০৩৪ মিলিগ্রাম । খনিজ লবণ ০.২০গ্রাম। রিবোফ্লেভিন ০.০২৭ মিলিগ্রাম। নিয়াসিন ০.২২ মিলিগ্রাম। ভিটামিন বি-২ ০.০৪ মিলিগ্রাম । ভিটামিন বি-৬ ০.০৩৬ মিলিগ্রাম। ভিটামিন সি ১০৫ মিলিগ্রাম। ক্যারোটিন ১২০ মাইক্রোগ্রাম। আয়রন ০.২ মিলিগ্রাম। ক্যালসিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম। ম্যাগনেসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম। ম্যাংগানিজ ০.০১৭ মিলিগ্রাম। ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম। পটাশিয়াম ২১৬ মিলিগ্রাম। সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম।

বলা যেতে পারে, বাতাবি লেবু সব রোগের মহৌষধ। কারণ কোনো রোগেই এই ফল খাওয়ার ব্যাপারে বিধি-নিষেধ নেই। এই ফল সতেজ রাখবে আপনার হার্ট। ফলের রাজ্যে বাতাবি লেবু অলরাউন্ডার ফল। নরম গোলাপি শাঁস। স্বাদে খাট্টা-মিঠা। একটু নুন-মরিচ ছড়িয়ে দিলে তো কথাই নেই। বাতাবির গুণ গাইতে বসলে, দুই হাতের আঙ্গুলের সবগুলো কর গুণেও শেষ করতে পারবেন না। এক নজরে দেখে নেয়া যাক, বাতাবির আরও যত গুণ।

বাতাবি লেবুর ঔষধিগুণ

পেটের গ্যাস কমায় : বাতাবি লেবু বা জাম্বুরায় রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার বা তন্তু যা ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। বাতাবি লেবুর সাইট্রিক এসিড হজমে সহায়ক এবং পেটে গ্যাসের প্রবণতা কমায়।

কিডনির কাজে সাহায্য : এতে রয়েছে পেকটিন, যা ধমনীর রক্তে দূষিত পদার্থ জমা হতে বাধা দেয় এবং দূষিত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে। রক্তের লোহিত কণিকাকে টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) ও অন্যান্য দূষিত পদার্থের হাত থেকে রক্ষা করে বিশুদ্ধ অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে : বাতাবি লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ বায়োফ্যাভোনয়েড। যা ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন থেকে শরীরকে মুক্ত রাখার কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে বাতাবি লেবু ভূমিকা রেখে থাকে। প্রোটেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধেও বাতাবি লেবু কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

হৃদরোগে উপকারী : বাতাবি লেবুতে আছে যথেষ্ট পরিমাণ পটাসিয়াম, ভিটামিন সি। ফলে বাতাবি লেবু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। আর নিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ হৃদরোগে উপকারী। বাতাবি লেবু রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

হজম সমস্যা সমাধানে কার্যকরী : অম্ল জাতীয় হওয়ার কারণে খাদ্য পরিপাকে এই ফল অত্যন্ত সহায়ক। খাদ্য পাচিত হওয়ার পর বাতাবি লেবুর রস অ্যালকালাইন রি-অ্যাকশন তৈরি করে হজমে সহায়তা করে।

ত্বকের সতেজতা বৃদ্ধি করে : অতিরিক্ত ভিটামিন সি থাকার কারণে ধমনীর ইলাস্টিক অবস্থা ও দৃঢ়তা রক্ষায় ও বাতাবি লেবু অত্যন্ত কার্যকর। আর ত্বকের যত্নেও এটি খুবই উপকারী। কারণ, এটি ত্বককে কুঁঁচকাতে দেয় না। বাতাবি লেবুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।

দাঁত ও মাড়ির ক্ষয়রোধ করে : দাঁত ও মাড়ির ক্ষয়রোধে বাতাবি লেবুর পাতা ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এই ফলের রস মাড়ির রোগ সারাতে বেশ কার্যকর।

রক্ত পরিষ্কারক: বাতাবি লেবুতে বিদ্যমান পেকটিন ধমনীর রক্তে দূষিত পদার্থ জমা হতে বাধা দেয় এবং দূষিত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে। বাতাবি লেবুর রস রক্তের লোহিত কণিকাকে টক্সিন ও অন্যান্য দূষিত পদার্থের হাত থেকে রক্ষা করে বিশুদ্ধ অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে।

বাতাবি লেবু কখন পাওয়া যায়

টক-মিষ্টি ফলটি সাধারণত ভাদ্র-আশ্বিন মাসে বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই পাওয়া যায়। তবে শ্রাবণের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই ফল বাজারে আসতে শুরু করে। কার্তিক মাসের শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায় বাতাবি লেবু। এখন বাজারে প্রচুর বাতাবি লেবু পাওয়া যাচ্ছে। দেশি ফল হওয়ায় এর দামও কম। তাই খাদ্য তালিকায় আজই যোগ করতে পারেন বাতাবি লেবু।

 

টাইমস/এসএ/এসএন

 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সকালে এই ৫ পানীয় পান করলেই সুন্দর হবে চুল May 07, 2024
img
সোনার দাম ভরিতে বাড়ল সাড়ে ৪ হাজার টাকা May 07, 2024
img
৪ বছরের মধ্যে ব্যাটারি রিপ্লেসমেন্ট সুবিধা নিয়ে এলো ভিভো ভি৩০ লাইট May 07, 2024
img
রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের May 07, 2024
img
কুষ্টিয়ায় বেঙ্গল টোব্যাকো গোডাউনে অভিযান: রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ May 07, 2024
img
উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করুন : প্রধানমন্ত্রী May 07, 2024
img
বান্দরবানে যৌথ অভিযানে কেএনএফের এক সন্ত্রাসী নিহত, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার May 07, 2024
img
ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুল-এর প্রশিক্ষণ উন্নয়নে যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতা May 07, 2024
img
ভোট কেন্দ্রে অনুপ্রবেশকারীদের প্রতি সিইসির কঠোর হুঁশিয়ারি May 07, 2024
img
ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে কোক স্টুডিও বাংলা, ফের সমালোচনা May 07, 2024