আমরা এমন একটি সময়ে বসবাস করছি যখন খাবার কিংবা নিঃশ্বাসের সাথে প্রতিনিয়ত আমাদের দেহে সিসার মতো নানা ধাতব পদার্থ ও বিষাক্ত উপাদান প্রবেশ করছে। আমাদের শরীর থেকে এই বিষাক্ত পদার্থ সমূহ বের করে দেয়ার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডিটক্সিফিকেশন বা বিষমুক্তকরণ।
ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমাদের যকৃৎ বা লিভার। এটি বিষাক্ত পদার্থ পরিশোধনের দায়িত্ব পালন করে। আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ সমূহ ঘাম, প্রস্রাব বা মলমূত্রের সাথে বাইরে বেরিয়ে যায়।
সাধারণত প্রাকৃতিক উপায়েই আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহ নিজেকে বিষমুক্ত করে থাকে। তবে পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধির ফলে ভারী ধাতব এবং বায়ুমণ্ডলের অন্যান্য ক্ষতিকারক উপাদানের সংস্পর্শে এসে মানবদেহের নিয়মিত টক্সিন গ্রহণের পরিমাণ উচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছে।
আমাদের শরীরে অতিরিক্ত বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতির ফলে অনেক সময় আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো নিজে থেকে সম্পূর্ণরূপে বিষমুক্ত হতে পারে না। তবে প্রকৃতিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা মানবদেহের প্রাকৃতিক বিষমুক্তকরণ প্রক্রিয়াকে গতিশীল করে।
আসুন এমন কিছু ভেষজ এবং স্বাস্থ্যকর পানীয় সম্পর্কে জেনে নিই, যা আমাদের শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সহায়তা করবে।
আদা এবং হলুদ চা
প্রাচীনকাল থেকেই হলুদ এবং আদা ঔষধি উদ্দেশ্যে ব্যবহার হয়ে আসছে। হলুদ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সমৃদ্ধ ভেষজ। অন্যদিকে আদা প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে এবং প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার। ঘুমাতে যাওয়ার আগে আদা এবং হলুদ দিয়ে তৈরি চা পান করুন, এটি আপনার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিষমুক্ত করতে সহায়তা করবে।
গোলমরিচ চা
গোলমরিচের বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে। গোলমরিচ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা আপনার দেহের সামগ্রিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উন্নত করে। এটি ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াকে স্বাভাবিকভাবে দূরে রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি শ্লেষ্মা পরিষ্কারে কার্যকর। পিটপারমিন্টে উপস্থিত ম্যাঙ্গানিজ আমাদের দেহের ফ্রি র্যাডিকেল সমূহ নিরপেক্ষ করতে সহায়তা করে।
গ্রিন টি
গ্রিন টি অত্যন্ত কার্যকর ডিটক্সিফায়ার হিসেবে আমাদের দেহ পরিষ্কারের কাজ করে। গ্রিন টি প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা আপনার শরীরকে ডিটক্সাইফিকেশন বৈশিষ্ট্য গঠনে সহায়তা করবে। এটি লিভারকে বিষাক্ত পদার্থের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
তুলসী চা
কাঁচা তুলসীর পাতা বা শুকনো তুলসী পাতার গুড়ো দুটোই ব্যবহার করা যেতে পারে। তুলসী পাতা বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি করার জন্য পরিচিত। তুলসী পাতা বা তুলসী চা একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক ডিটক্স হিসাবে কাজ করে। শক্তিশালী এই ঔষধি শরীর থেকে সমস্ত ধরণের টক্সিন দূর করে। তুলসী চা ওজন হ্রাস করতেও সহায়তা করে।
লেবু চা
লেবু প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে বিষমুক্ত করতে প্রাকৃতিক ডিক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। হলুদের সাথে বিশুদ্ধ পানি এবং কিছুটা মরিচ মিশ্রিত করলে একটি আদর্শ ডিটক্স পানীয় তৈরি হয়। প্রতিদিন লেবু চা খেলে শরীর বিষমুক্ত থাকে।
আদা চা
এটি ফ্লু বা গলা ব্যথা নিরাময়ের জন্য সাধারণত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি একইসাথে একটি কার্যকর ডিটক্সাইফিং পানীয়, কারণ আদাতে বিদ্যমান ডিটক্সিফায়িং বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। স্বাদ বাড়াতে আদা চায়ে এলাচ যোগ করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি
টাইমস/এনজে