বরিশালের আগৈলঝাড়ায় মাত্র তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া নোহা নামে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার চালানো হয়েছে। স্কুল শিক্ষকের বেত্রাঘাতের অপমান সইতে না পেরে গলায় ফাঁস দিয়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে এমন কথা বলা হচ্ছে। ওই ছাত্রীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। তার মা অভিযোগ করেছেন, পরিকল্পিতভাবে সৎ মা ওই ছাত্রীকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালিয়েছে। শিক্ষকের বেত্রাঘাতের বিষয়টি অজুহাত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
যদিও ওই ঘটনায় শিক্ষককে অভিযুক্ত করে ছাত্রীর বাবা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক পলাতক রয়েছেন। পুলিশ ওই ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে বরিশাল মর্গে প্রেরণ করেছে। নুশরাত জাহান নোহা খাজুরিয়া গ্রামের মো. সুমন মিয়ার মেয়ে ও অভিযুক্ত শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইক (৩৭) পাশ্ববর্তি উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের মো. আব্দুল লতিফ পাইকের ছেলে।
আগৈলঝাড়া থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আফজাল হোসেন এজাহারের বরাত দিয়ে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত দারুল ফালাহ প্রি-ক্যাডেট একাডেমি দীর্ঘদিন বন্ধের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর (শনিবার) স্কুলের মাসিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তিন দিন পরে ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় বুধবার (৯ই সেপ্টেম্বর)। প্রকাশিত ফলাফলে স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী নুশরাত জাহান নোহা ৩০ মার্ক পেয়ে অকৃতকার্য হওয়ায় স্কুলের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম সুমন পাইক তাকে ক্লাসরুমে বেত্রাঘাত ও গালমন্দ করেন। নোহা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে স্বজনদের কাছে ঘটনা খুলে বলে কান্নাকাটি করে। সহপাঠীদের সামনে শিক্ষকের মারধর ও গালমন্দ সইতে না পেরে অভিমান করে বুধবার দুপুরে নোহা নিজেদের ঘরের দোতলার আড়ায় ওড়নার সাথে গামছা জোড়া লাগিয়ে তা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে মর্মে অভিযোগ করা হয়।
এদিকে নোহার মা তানিয়া বেগম ও প্রতিবেশীরা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, নোহার বাবা সুমন মিয়া বর্তমানে চার নম্বর স্ত্রী নিয়ে সংসার করছেন। নোহা ওই পরিবারের সৎ মায়ের কাছে ছিল চক্ষুশূল। তার দাদা দাদীর কাছেও নোহা ছিল অবহেলিত। তানিয়ার অভিযোগ তার মেয়ে নেহাকে তার সতীন ও শ্বশুর-শাশুড়ি বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার পরে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। নোহার মৃত্যুর খবর পেয়ে তার গর্ভধারিণী মা ঢাকা থেকে বুধবার রাতেই থানায় ছুটে আসেন মামলা করার জন্য। থানার সামনে বসেই তিনি এসব অভিযোগ করেন। তিনি থানায় যাওয়ার আগেই সাবেক স্বামী সুমন মিয়া শিক্ষককে অভিযুক্ত করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। তার প্রশ্ন অতটুকু মেয়ে কিভাবে ওড়না ও গামছা জোড়া লাগিয়ে গলায় ফাঁস দিতে পারে? নোহার মৃত্যুর পিছনে পরিবারের তৃতীয় ব্যক্তি জড়িত রয়েছে অভিযোগ করে মামলাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গভীরে গিয়ে তদন্ত করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মনিরুজ্জামান জানান, বিভিন্ন দিক মাথায় রেখে তিনি তদন্ত শুরু করেছেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরেই বিষয়টি উদঘাটন করা যাবে বলেও জানান তিনি।
টাইমস/জেকে/এইচইউ