শেক্সপিয়ার: বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার

উইলিয়াম শেক্সপিয়ার। একজন বিখ্যাত ইংলিশ কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার ও অভিনেতা। তাকে বলা হয় ইংল্যান্ডের জাতীয় কবি। এছাড়া তিনি ‘বার্ড অফ অ্যাভন’ নামেও বেশ পরিচিত। তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ইংলিশ সাহিত্যিক এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নাট্যকার।

তিনি ইংলিশ সাহিত্যের এলিজাবেথিয়ান এবং জ্যাকোবিয়ান যুগের একজন সার্থক কবি ও সাহিত্যিক। নাট্যকার হিসেবে বিখ্যাত হলেও তার কবিতাগুলো ছিল বেশ জনপ্রিয়। তিনি ৩৯টি নাটক, ১৫৪টি সনেট, ২টি দীর্ঘ বর্ণনামূলক গীতিকাব্য এবং বিভিন্ন ধরনের বেশ কিছু কবিতা ও শ্লোক রচনা করেছেন।

১৫৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল ইংল্যান্ডের ওয়ারউইকশায়ারের স্ট্রাটফোর্ড-আপন-অ্যাভনে শেক্সপিয়ার জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা গ্লোভস বা দস্তানা তৈরির কাজ করতেন। মা ছিলেন উত্তরাধিকার সূত্রে ভূসম্পত্তির মালিক। আট সন্তানের মধ্যে শেক্সপিয়ার ছিলেন সবার বড়।

১৫৮২ সালে আঠারো বছর বয়সে তিনি ছাব্বিশ বছর বয়সী অ্যানি হেথওয়েকে বিয়ে করেন। বিয়ের প্রথম বছরেই তাদের একটি মেয়ে হয়। পরে হ্যামনেট ও জুদিথ নামে আরও দুটি সন্তানের জন্ম হলেও এগারো বছর বয়সে হ্যামনেট মারা যান।

১৫৮৫ সালের পর থেকে তার প্রায় সাত বছরের জীবনী সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। কেউ কেউ এই সময়কে ‘লস্ট ইয়ার’ বা হারিয়ে যাওয়া বছর বলে থাকেন। অনেকের মতে ১৫৮০’র দশকে তিনি লন্ডনে চলে আসার পর সেখানের বিভিন্ন থিয়েটারে হর্স অ্যাটেন্ডেন্ট হিসেবে চাকরি করতেন।

১৫৯০’র দশকে তিনি “লর্ড চেম্বার্লিন’স ম্যান” নামে একটি অভিনয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা অংশীদার হন। ১৬০৩ সালে রাজা জেমসের নামানুসারে এ প্রতিষ্ঠানের নাম হয় ‘কিংস ম্যান’। এই প্রতিষ্ঠানেই শেক্সপিয়ারের সাহিত্যিক হিসেবে ক্যারিয়ারের গোড়াপত্তন হয়।

১৫৯২ সালে তিনি অভিনেতা ও নাট্যকার হিসেবে কাজ শুরু করেন। সে সময় লন্ডনের নাট্যকার রবার্ট গ্রিন এক নিবন্ধে শেক্সপিয়ারের নাটকগুলোর খুব প্রশংসা করেন। অনেকেই বলেন রবার্ট গ্রিন বলেছিলেন যে, শেক্সপিয়ার একসময় ক্রিস্টোফার মার্লো, থমাস নেশে ও স্বয়ং রবার্ট গ্রিনকেও ছাড়িয়ে যাবেন।

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তিনি ‘Venus and Adonis’ (1593) এবং ‘The Rape of Lucrece’ (1594) কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। ১৫৯৭ সালের মধ্যে তিনি ১৫টি নাটক লিখে ফেলেন এবং ব্যাপক প্রশংসিত হন।

১৫৯৯ সালে তিনি তার ব্যবসায়ী অংশীদারকে নিয়ে টেমস নদীর দক্ষিণ তীরে বিখ্যাত ‘গ্লোভ থিয়েটার’ প্রতিষ্ঠা করেন। তার লেখা নাটকগুলোর অধিকাংশই এই থিয়েটারে মঞ্চস্থ হয়।

শেক্সপিয়ার তার রচনাগুলোর অধিকাংশই লিখেছেন ১৫৮৯-১৬১৩ সময়ের মধ্যে। তার প্রথম দিকের নাটকগুলো ছিল কমেডি, ঐতিহাসিক ও বিয়োগান্তক। ‘হেমলেট’, ‘ওথেলো’, কিং লেয়ার, ‘ম্যাকবেথ’ ইত্যাদি তার বিখ্যাত ট্রাজেডিগুলোর মধ্যে অন্যতম, যাকে ইংরেজি সাহিত্যের সবচেয়ে নিখুঁত শিল্পকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

১৬০৮ সালের পর তিনি বেশ কিছু রোমান্টিক ও ট্রাজি-কমেডি নাটক রচনা করেছিলেন। ১৬২৩ সালে শেক্সপিয়ারের দুই বন্ধু তার লেখা নাটকগুলো সম্পাদনা করে ‘ফার্স্ট ফোলিও’ নামে গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থের ভূমিকা হিসেবে একটি কবিতা লিখেন বিখ্যাত কবি বেন জনসন, যেখানে তিনি শেক্সপিয়ারকে ‘একটি যুগের নয়, বরং সব সময়ের’ বলে মন্তব্য করেন।

১৬২৩ সালের ২৩ এপ্রিল ৫২ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে যান অ্যাভনের পাখি শেক্সপিয়ার। মৃত্যুর পর লন্ডনের বিখ্যাত ট্রিনিটি চার্চে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

শেক্সপিয়ার ইংরেজি সাহিত্যে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করেন। তিনি ছিলেন শেক্সপিরিয়ান সনেটের প্রবর্তক। তাই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ইংরেজি সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে শেক্সপিয়ারের সৃষ্টিকর্মকে মূল্যায়ন করা হয়।

বিশ্বের যেখানেই ইংরেজি সাহিত্যের চর্চা হয়, সেখানেই পাঠ্যক্রমের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে শেক্সপিয়ার ও তার সৃষ্টিকর্ম।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস 

Share this news on:

সর্বশেষ