টিনটিনের বাংলাদেশ ভ্রমণ

বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় কমিক চরিত্রের নাম টিনটিন। বেলজিয়ামের কার্টুনিস্ট জর্জ রেমি (হার্জ) রচিত ‘দ্যা অ্যাডভেঞ্চার অব টিনটিন’কে বলা হয়ে থাকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা কমিক স্ট্রিপ সিরিজ। ১৯২৯ সালের ১০ জানুয়ারি প্রথম প্রকাশের পর থেকে প্রায় শতবছর ধরে এখনো এর আবেদন যেন অনেকটাই অম্লান।

বিশ্বের অন্যান্য অংশের মত এক সময় বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের মনের রাজত্ব দাপিয়ে বেড়িয়েছে টিনটিন। বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকে যারা বেড়ে উঠেছেন, তাদের কাছে টিনটিন এক নস্টালজিয়ার নাম।

টিনটিন যদি তার প্রিয় কুকুর স্নোয়িকে সাথে করে বাংলাদেশে চলে আসে, তাহলে কেমন হবে? নব্বইয়ের দশকের টিনটিন ভক্ত অনেক বাংলাদেশী শিশু-কিশোরের মনে এমন প্রশ্ন হয়তো উঁকি মেরেছিল। তবে সে সময়টায় আর বাংলাদেশে আসা হয়ে ওঠেনি টিনটিনের।

অবশেষে ২০২১, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার মহামারী, এমনই এক দুর্যোগের মুহূর্তে বাংলাদেশে পা রাখল টিনটিন। কৈশোরকালে দেখা স্বপ্ন যেন সত্যি হলো তারুণ্যের স্পর্ধায়, করোনা যেন শাপে বর হয়েই ধরা দিল টিনটিন প্রেমীদের কাছে।

টিনটিনের বাংলাদেশ ভ্রমণের গল্পই আজ শোনাবো। এই গল্পের রূপকার জাহিদুল হক অপু। তার হাত ধরেই টিনটিন-স্নোয়ি-হ্যাডক ত্রয়ীর বাংলাদেশে আগমন।

জাহিদুল হক অপুর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার জিগাতলায়। ছোটবেলা থেকেই টিনটিনকে ঘিরে অদ্ভুত এক ভাললাগা তার। ঝোঁক ছিল শিল্প ও সঙ্গীতের প্রতি, সখের বসেই শিখেছিলেন গ্রাফিক ডিজাইন। এছাড়াও অ্যাকশন ফিগার কালেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নামে কমিকস সংগ্রাহকদের একটি দলও তৈরি করেছেন তিনি।

বাংলাদেশের অন্যতম সফল ব্যান্ডদল ‘অর্থহীন’ এর সাথে এক সময় কিবোর্ড বাজিয়েছেন, ‘মেঘের দেশে’ অ্যালবামের প্রচ্ছদটিও তার হাতেই করা। ‘ত্রিলয়ে’ নামে নিজের একটি ব্যান্ডদলও গড়েছিলেন তিনি, ‘শূন্য’ নামের একটি অ্যালবাম রয়েছে তাদের।

পাশাপাশি বহু বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন করেছেন, এর মধ্যে মারুফ রেহমানের ‘লাবনী’ বইটি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন রেডিও ফুর্তিতে, বর্তমানে হেড অব প্রোগ্রাম হিসেবে রয়েছেন রেডিও ‘ঢোল’ এর সাথে।

কিন্তু হঠাৎ করে কেন তিনি টিনটিনকে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে গেলেন? এই প্রশ্নের জবাবে অপু বলেন, “ছোট বেলা থেকেই মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন বারবার উঠে আসত, কেন টিনটিন বাংলাদেশে আসে নাই? ওই চিন্তা থেকেই মূলত টিনটিনকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা। টিনটিনের সাহায্যে নতুন জেনারেশনের কাছে পৌঁছানো এবং বাংলাদেশকে পরিচিত করানোর একটা উদ্যোগ নেয়া।”

তিনি আরও বলেন, “ভেবে দেখলাম যে টিনটিনের একটা ডিমান্ড আছে। নব্বইয়ের ছেলে-মেয়েরা যা দেখেছে নতুন জেনারেশন সেগুলির সাথে পরিচিত না। তবে তাদের মধ্যে জানার একটা আগ্রহ আছে। ধরেন, বাকের ভাইয়ের গল্প বললে এই জেনারেশন সেটা বুঝতে পারে না। বাংলাদেশের দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক জায়গাগুলির সাথেও এরা ততটা পরিচিত না। এখন কিভাবে এদের কাছে পৌঁছানো যায়? আমার ছয় বছর বয়সের একটা মেয়ে আছে, কার্টুন দেখালে যেকোনো জিনিস সে সহজে বোঝে। তো সেখান থেকেই নতুন জেনারেশনের কাছে পৌঁছানোর একটা চিন্তা মাথায় এলো।”

“তাছাড়া বাংলাদেশের জায়গাগুলি চেনানোর একটা প্রয়াস আছে, যেমন ষাট গম্বুজ মসজিদ, কক্সবাজার, কুমিল্লা ইত্যাদি। এখনও বিভিন্ন জায়গাতে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে, অনেকে অনেক জায়গায় নিয়ে যেতে অনুরোধও করেন। যতটুকু সম্ভব বাংলাদেশটা কাভার করার ইচ্ছা আছে,” বলেও জানিয়েছেন তিনি।

জাহিদুল হক অপু

বাংলাদেশ টাইমস: কখন এবং কিভাবে এই ধরণের কাজ করা শুরু করলেন?

জাহিদুল হক অপু: মার্চ-এপ্রিলের দিকে আমি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছিলাম। সে সময় আমি ২১ দিন আইসোলেশনে ছিলাম, তখন থেকে আঁকা শুরু করি। নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে পোস্ট করার পর সবাই উৎসাহ দিতে শুরু করল। নব্বইয়ের দশকের বিভিন্ন বিষয়কে ঘিয়ে কার্টুন-ক্যারিকেচার এগুলি নিয়ে কাজ শুরু করলাম, মানুষজন পছন্দ করল, উৎসাহ দিল, Arts by Apu পেজটা খুলে ফেললাম। পেজ খোলার পরেও দেখছি মানুষ এগুলি পছন্দ করছে।

বাংলাদেশ টাইমস: টিনটিনকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিক বা সিরিজ করার ইচ্ছে আছে?

জাহিদুল হক অপু: পূর্ণাঙ্গ সিরিজ করার ইচ্ছে আছে, তবে টিনটিনকে নিয়ে করার ইচ্ছা নাই। সৈয়দ রাশেদ ইমাম তন্ময় ভাই, উন্মাদে আঁকাআঁকি করেন, উনি উৎসাহ দিচ্ছেন। ঢাকা কমিকসের কর্ণধার মেহেদি হক ভাইও উৎসাহ দিচ্ছেন। এখন দেখা যাক কতদূর কি হয়। আপাতত টিনটিনের বাংলাদেশ ভ্রমণ চলবে, বাংলাদেশ ঘোরা শেষ করে পশ্চিমবঙ্গেও একবার নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে।

Share this news on: