বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে ঝুঁকি বেড়েছে: আইএমএফ

করোনার আগে থেকেই বাংলাদেশের ব্যাংক খাত দুর্বল ছিল। এখন এই খাতে ঝুঁকি আরও বেড়েছে। সুশাসনের অভাব ও আইনি কাঠামোর দুর্বলতার কারণে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের হার বেড়েছে। অন্যদিকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত খেলাপি ঋণের হার দাঁড়ায় ৮ শতাংশের বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এটি ২০ শতাংশ। কিন্তু খেলাপি ঋণের এই পরিস্থিতি ব্যাংক খাতে বিরাজমান সমস্যার প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করছে না।

কোভিড সংকট মোকাবিলায় আইনকানুন শিথিল করে ঋণ বিতরণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই নীতি সাময়িকভাবে সহায়ক হলেও ব্যাংক খাতে ঝুঁকি বাড়িয়েছে। এই ঝুঁকি নিরসন করতে হলে খারাপ ঋণগুলো সময়মতো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি এভাবেই বর্ণনা করেছে। আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড বাংলাদেশ সম্পর্কে সংস্থাটির আর্টিকেল ফোর কনসাল্টিং পর্যবেক্ষণ শেষ করেছে। সম্প্রতি পুরো পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের মতে, করোনার আগে থেকেই ব্যাংক খাতের অবস্থা খারাপ ছিল। তখনই খেলাপি ঋণ ২০-২২ শতাংশ ছিল। এখন তা আরও বেড়ে যাবে। কারণ, কোভিড সংকট মোকাবিলায় প্রণোদনার মাধ্যমে মূলত ব্যাংকের ঋণসহায়তা দেওয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসের হিসাব অনুযায়ী, আগের তিন মাসের তুলনায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। এটি এখন আরও বাড়বে। কারণ, ঋণের বিপরীতে গ্যারান্টি নেওয়া হয়নি।

দেশের ব্যাংক খাতের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি নিরসনে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার সুপারিশ করেছে আইএমএফ। এ জন্য চার ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রথমত, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সংস্কার। এর আওতায় ব্যাংকগুলোকে করপোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হতে হবে। বিশেষ করে স্বতন্ত্র পরিচালকের ভূমিকা আরও শক্তিশালী করা উচিত।

দ্বিতীয়ত, আইনি সংস্কার। এ ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশনিং তথা নিরাপত্তা সঞ্চিতি, বিশেষ করে ঋণ পুনর্গঠন ও খেলাপি ঋণের বিষয়ে ব্যাসেলের মান নিশ্চিত করতে হবে।

তৃতীয়ত, তদারকির সংস্কার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদ্যমান আইনকানুন কঠোরভাবে প্রতিপালন করা উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা জোরদার করার পাশাপাশি স্বায়ত্তশাসনেও জোর দিতে হবে। চতুর্থত, আইনি সংস্কার। ঋণগ্রহীতাদের দেরিতে ঋণ পরিশোধের প্রবণতা ঠেকাতে কঠোর হতে হবে। এ ছাড়া ঋণদাতাদের অধিকার যেমন সুরক্ষিত করতে হবে, তেমনি ঋণগ্রহীতাদের সময়মতো ঋণ পরিশোধের জন্য প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়েও আইনি সংস্কার লাগবে।
আইএমএফ আরও বলছে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে শর্তসাপেক্ষে ২০০ কোটি ডলার পর্যন্ত দেশের বড় অবকাঠামো প্রকল্পে ব্যবহারের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু এই ধরনের অস্থায়ী ভিত্তিতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ব্যবহার করলে তা রাজস্ব খাতের শৃঙ্খলাকে বিনষ্ট করবে। এটি সরকারি খাতে দায় আরও বাড়িয়ে দেবে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নতুন নির্দেশনা দিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় Apr 25, 2024
img
এক দিনের ব্যবধানে আরও কমলো স্বর্ণের দাম Apr 25, 2024
img
চুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ Apr 25, 2024
img
যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া বিএনপি: কাদের Apr 25, 2024
img
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত শনিবার: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী Apr 25, 2024
img
ফ্যাটি লিভারের সমস্যা প্রতিরোধে জীবনযাপনে আনুন ৫ পরিবর্তন Apr 25, 2024
img
নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করলেন ন্যান্সি পেলোসি Apr 25, 2024
img
উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে : সিইসি Apr 25, 2024
img
শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি Apr 25, 2024
img
যুদ্ধ কখনো কোনো সমাধান দিতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী Apr 25, 2024