অযাচিত মোবাইল কোর্ট বন্ধের দাবি রেস্তোরা মালিক সমিতির

নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তরের অসহযোগিতা ও সমন্বয়হীনতা বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। সংগঠনটি বলছে, ১২টি অধিদপ্তর আমাদেরকে মনিটরিং করে যাচ্ছে। বছরের পর বছর বলে আসছি আমরা ১টি অধিদপ্তরের অধীনে কাজ করতে চাই। কিন্তু এর কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তাই, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল কোর্টে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। অযাচিতভাবে মোবাইল কোর্ট বন্ধ করতে হবে।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত ‌‘দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে রমজানে রেস্তোরাঁয় ন্যায্য মূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি, বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণা এবং সরকারি সংস্থার অভিযানের নামে হয়রানি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। 

একই সঙ্গে তিনি ৮ দফা দাবি জানান।
ইমরান হাসান বলেন, প্রত্যেকটা অধিদপ্তর বিক্ষিপ্তভাবে তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ/ক্ষোভ ঝাড়ছে রেস্তোরাঁ মালিকদের ওপর। পান থেকে চুন খসলেই কোনো বিশেষজ্ঞ লোক ছাড়াই যে যেভাবে পারছে জরিমানার নামে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের ব্যবসার সুনাম নষ্ট এবং আর্থিক ক্ষতিসাধন করছে। এভাবে নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আমরা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছিলাম। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা অনুরোধ করেছিলাম যে, আমাদের সেক্টরের ৯৫ শতাংশ কর্মী অদক্ষ ও স্বল্প-শিক্ষিত। তাদেরকে আগে ট্রেনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসেন এবং আন্তঃমন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে আমাদেরকে একটি মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তর/সংস্থার অধীনে নিয়ে আসেন। আমাদেরকে একটি গ্রহণযোগ্য এসওপি প্রদান করেন। যার গাইডলাইনে আমরা চলতে পারব। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সংস্থাই আমাদেরকে সু-নির্দিষ্ট কোনো এসওপি দেয়নি। 

তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তাদের টিম দিয়ে আমাদের পরিচালনার/ মনিটরিং করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যেখানে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও আইসিডিডিআর-বিকে যুক্ত করেছেন, কিন্তু প্রধান স্টেক হোল্ডার হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতিকে যুক্ত করা হয়নি। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কোনোদিনই সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে আমরা ভয় পাচ্ছি, প্রতিবারের মতো এবারও রমজানে আমাদের ওপর বিশাল খড়গ নেমে আসবে। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির দাবিগুলো হলো

১) সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল কোর্টে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। হাইকোর্টের অনেক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অযাচিতভাবে মোবাইল কোর্ট চলছে। আমরা মোবাইল কোর্টের বিরুদ্ধে না, মোবাইল কোর্ট চলুক যৌক্তিকভাবে। জামিন অযোগ্য- কালাকানুন ধারা ও বিধি বাতিল করতে হবে।

২) করোনা মহামারিতে প্রায় ৩০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়েছে। যারা টিকে আছে তারাও ধুঁকে ধুঁকে চলছে। এ অবস্থায় ব্যবসায় টিকে থাকতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি সরকারের সহযোগিতা জরুরি।

৩) সাম্প্রতিক সময়ে চড়া মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। এর মধ্যে বাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে রেস্তোরাঁ খাতে। ব্যবসায় টিকে থাকতে খাবারের দাম বৃদ্ধির বিকল্প নেই আমাদের সামনে। অন্যদিকে খাবারের দাম বৃদ্ধি করলে ভোক্তারা রেস্তোরাঁয় খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছেন। সব মিলিয়ে রাজার নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে রেস্তোরাঁ খতিটি বড় সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে ।

৪) সাম্প্রতিক সময়ে রেস্তোরাঁ খাতে কিছু নেতিবাচক প্রচারণায় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেই সংকট থেকে উত্তরণে মিডিয়া দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে এবং ভোক্তা সমাজকে অনুরোধ করবো রেস্তোরাঁ সেক্টরের বিষয়ে যাচাই বাছাই করে মন্তব্য করার জন্য। রেস্তোরাঁ বিষয়ে প্রশাসন এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। রেস্তোরাঁ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা মিথ্যা প্রমাণিত হলে আইসিটি আইনে মামলা করা হবে।

৫। বর্তমানে রেস্তোরাঁ সেক্টরে ভ্যাট ও ট্যাক্স হচ্ছে- এসি ও নন এসি রেস্তোরাঁ ওপর ৫ শতাংশ। কিন্তু আমাদের প্রস্তাব হচ্ছে— মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কর্মজীবী, শ্রমজীবী, দিনমজুরদের জন্য নিম্ন ও মাঝারি মানের রেস্তোরাঁ (বাংলা খাবার) ও নিচে যুক্ত এর ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার হবে সর্বোচ্চ ৩% এবং ট্যাক্সের হার হবে সর্বোচ্চ ০.৫%।

এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলা খাবারের ক্ষেত্রে ৮২/সি ধারার ৪ নম্বর কলামে বর্ণিত নির্দেশনা পরিবর্তন পূর্বক ফুল অ্যান্ড ফাইনাল এসেসমেন্টের মাধ্যমে ট্যাক্স নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রতি মাসে ভ্যাটের সঙ্গে ০.৫% হিসাবে ট্যাক্স প্রদান করতে চাই, এতে বছর শেষে ইনকাম ট্যাক্স রিটান দাখিল করার সময়ে কোনো ঝামেলা পোহাতে হবে না।

৬) তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ থেকে যে গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছি তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল অর্থাৎ পূর্বের তুলনায় গ্যাস পাচ্ছি ১০০ এর মধ্যে ৪০% মাত্র। কিন্তু বিল আসছে দ্বিগুণ। এদিকে এলপিজি গ্যাসের দাম চড়া, তাই লাকড়ি নিয়ে রান্না করায় কিচেনের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং তা ব্যয় সাপেক্ষ। তাই রেস্তোরাঁ সেক্টরে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া রেস্তোরাঁয় গ্যাস লাইন ট্রান্সফার কোনো কারণ ছাড়াই বন্ধ রাখা হয়েছে। অবিলম্বে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে লাইন ট্রান্সফার এবং নাম পরিবর্তনের সব প্রতিবন্ধকতা তুলে নিতে হবে।

৭) মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যর প্রতিবছরই মাহে রমজান সমাগত হলে বিভিন্ন মৌসুমি-ফড়িয়া/ব্যবসায়ীরা ইফতারের নামে ইফতারি পসরা সাজিয়ে বসে। এদের হাইজেনিক/নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই, এই বিষয়ে নজর দেওয়া অতীব জরুরি।

৮) রমজানে ইফতারি ও সেহরি সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে পরিচালনা করার সুযোগ প্রদান করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি প্রমুখ।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তুমি আসবে বলেই আকাশ মেঘলা, বৃষ্টি এখনো হয়নি: পরীমণি May 05, 2024
img
দেশজুড়ে কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কতা জারি May 05, 2024
img
বাংলাদেশকে ১৩৯ রানের লক্ষ্য দিলো জিম্বাবুয়ে May 05, 2024
img
শুক্রবার ক্লাস নেওয়া নিয়ে ফেসবুক পোস্ট ভুলবশত: শিক্ষা মন্ত্রণালয় May 05, 2024
img
একদিনের ব্যবধানে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম May 05, 2024
img
পরিবেশ রক্ষায় ঢাকাসহ সারা দেশে গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট May 05, 2024
img
মানবপাচার মামলায় ৪ দিনের রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার May 05, 2024
img
প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস নেওয়া হবে: শিক্ষামন্ত্রী May 05, 2024
img
‘জনগণের ভরসাস্থল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে সেনাবাহিনী’ May 05, 2024
img
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত : কাদের May 05, 2024