জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সাতচল্লিশের ঔপনিবেশিকবিরোধী আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রংপুর। তাই রংপুর থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টি পদযাত্রা শুরু করেছে। বিদ্রোহের নগরীতে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্লোগান তুলেছি। পদযাত্রার মাধ্যমে জনগণের দুঃখ-দুর্দশা শুনে এনসিপি ইশতেহার ও ঘোষণাপত্র তৈরি করবে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টার দিকে পদযাত্রা শেষে রংপুর নগরীর জিলা স্কুল মোড়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, রংপুরের ইতিহাস বিদ্রোহের ইতিহাস। কৃষক নেতা নূরলদীন থেকে শুরু করে কৃষক সন্তান আবু সাঈদের বিদ্রোহ আমরা মনে রেখেছি। সব ইতিহাস বাংলাদেশকে পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুগ যুগ ধরে লড়াই করার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। বিট্রিশবিরোধী আন্দোলনে নূরলদীন কৃষকদের সংগঠিত করেছিলেন। কৃষক সন্তান আবু সাঈদ নিজের বুকে বুলেট নিয়ে জীবন দিয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে ত্বরান্বিত করেছেন। রংপুরের কৃষক-মজলুমেরা বারবার লড়াই করেছেন নিজেদের অধিকারের জন্য। আমরা সেই ইতিহাসকে বুকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, রংপুরের মানুষ আর বৈষম্য প্রত্যাশা করে না। রংপুরের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, কৃষিসহ প্রত্যেক সেবা খাতে বৈষম্যের মুক্তি দিতে হবে। রংপুরের কৃষক, শ্রমিক, মজুরসহ সর্বস্তরের মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য কৃষির আধুনিকায়ন, হিমাগার স্থাপন, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। রংপুরের তিস্তা নদীর সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে। ঢাকা থেকে রংপুর যাতায়াতের জন্য সরকারকে অবিলম্বে সোজাসুজি রেললাইন স্থাপন করতে হবে। অন্য বিভাগের মতো রংপুরে গ্যাস সুবিধা নিশ্চিত করা, মেডিকেল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা ও বাজেট বৈষম্য দূর করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রংপুরের পুত্রবধূ খুনি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করতে হবে। তাহলেই আবু সাঈদের আত্মা শান্তি পাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না শেখ হাসিনার বিচার হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত রংপুরের মানুষ শান্ত থাকবে না। দেশের সব অঞ্চলে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য, নতুন বন্দোবস্তের জন্য মৌলিক সংস্কার করতে হবে। মৌলিক সংস্কারে বাধা তৈরিকারীদের বিরুদ্ধে রংপুরের মানুষ রাজপথে নেমে তাদের প্রতিহত করবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
এর আগে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শহীদ আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার স্থান থেকে রংপুর নগরীতে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা শুরু হয়। এতে কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও জেলা এবং উপজেলা পর্যায় থেকে আসা শত শত নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেন। পদযাত্রায় অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা নানা স্লোগানে পুরো এলাকা মুখর করে তোলেন।
পদযাত্রাটি পার্ক মোড়, লালবাগ, শাপলা চত্বর ও জাহাজ কোম্পানি, পায়রা চত্বর, সুপার মার্কেট, সিটি বাজার, টাউন হল মোড়ে হয়ে জিলা স্কুল সংলগ্ন ডিসির মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে দলীয় নেতারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে রংপুরের কাউনিয়ায় আয়োজিত পথসভায় যোগ দিতে গাড়িবহরে রওনা হন দলটির নেতাকর্মীরা।
পিএ/টিএ