রংপুরে রাতের আধারে বুলডোজার দিয়ে বিল্ডিং ভেঙ্গে অন্যের জমি দখলের চেষ্টা


রংপুরে দখল শর্ত মামলায় হেরে যাওয়ার পর রাতের আধাঁরে বুলডোজার দিয়ে নগরীর উত্তর হাজির হাট এলাকায় একটি গোডাউন ঘর ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ ওই এলাকার পাহাড়ী এলপিজি ফিলিং ষ্টেশনের মালিক আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে। গত সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে এ ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার পর সেখানে আব্দুর রহমান নিজ নামের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেন। 

এ ঘটনায় আদালত থেকে রায় পাওয়া জমির প্রকৃত মালিক ফারুক আজম সোবহান গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাজিরহাট থানায় আব্দুর রহমানকে প্রধান আসামী করে চারজনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা ৭-৮জনকে আসামী করা হয়েছে।  

মামলা ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, ৯ বছর আগে রংপুর-তারাগঞ্জ পাকা সড়কের পাশে নগরীর হাজিরহাট এলাকায় সাড়ে ৭ শতক জমি ক্রয় করেন ফারুক আজম সোবহান। ওই সময়ে সেখানে গোডাউন ঘর নির্মাণ করে ভোগদখল করে আসেন। কিন্তু সেই জমি দখল শর্ত দাবি করে পাশের পাম্প মালিক আব্দুর রহমান ছয় বছর আগে বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী (হাজিরহাট) আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন রংপুর মেট্রোপলিটন হাজিরহাট থানা পুলিশকে। পুলিশ তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। গত রোববার চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আব্দুর রহমানের মামলাটি খারিজ করে দেন। 

ফারুক আজম সোবহান বলেন, ‘আমি জমিটি এলাকার আমিনুল মেম্বার (সাবেক)সহ তিন ভাইয়ের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ওই সময়ে সেখানে গোডাউন ঘর নির্মাণ করি। পরে সেই জমি নিজের দাবি করে আদালতে নারাজি করেন আব্দুর রহমান। গত রোববার আদালত তার নারাজি খারিজ করে দেন। কিন্তু খারিজের পরদিন আব্দুর রহমান রাতের আধারে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আমার গোডাউন ঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। পরে তার নামে সেখানে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়। আমি এ ঘটনায় হাজিরহাট থানায় মামলা করেছি।

এ বিষয়ে আমিনুল মেম্বার বলেন, আমরা তিন ভাই ৯ বছর আগে জমিটি ফারুকের কাছে বিক্রি করেছি। তিনি সেখানে গোডাউন ঘরে তুলেছেন। গত সোমবার দিবাগত রাতে শব্দ শুনে রাস্তায় বের হয়ে দেখি প্রায় ২৫-৩০ জন লোক গোডাউন ভেঙ্গে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। অনেকের হাতে ছিল ধারালো অস্ত্র।
সুত্র মতে, আদালতের মামলায় হেরে যাওয়া এবং জমিটি দখলে না থাকায় একটি কৌশল অবলম্বন করে নাটক সাজায়। তারা গত সোমবার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে বরাবর ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৪/১৪৫ ধারায় একটি আবেদন করেন। যার স্মারক নং ৮৩৪/১(২)। বিজ্ঞ আদালত নালিশী ভুমিতে কোন পক্ষ যতদিন যাবৎ কি মুলে দখলদার আছেন, কোনরূপ সরকারি স্বার্থ আছে কিনা এবং নামজারী ও খাজনা পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্যসহ যাবতীয় তথ্য চেয়ে এসিল্যান্ডকে নির্দেশ দেন। এবং ওই আদেশে ভুমির বর্তমান দখলদারের দখল অক্ষুন্ন রেখে মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উক্ত ভুমি নিয়ে যাতে কোন শান্তি ভঙ্গ না ঘটে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের হাজীরহাট থানা রংপুরকে নির্দেশ প্রদান করেন। এই নির্দেশটি হাতে নিয়ে আব্দুর রহমান হাজিরহাট থানার একজন এসআই ও ডিআইজি অফিসের একজন এডিশনাল এসপির সহযোগিতায় সোমবার দিবাগত রাত ২টার পর আশপাশের সকল আলো বন্ধ করে বুলডোজার মেশিন ব্যবহার করে বাউন্ডারি ওয়াল, টিনসেট ঘর এবং গোডাউন ঘরের বড় তালা ভাংচুর করেন। পরে ওই গোডাউন ঘরে নিজের তালা মেরে এবং একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। এদিকে গভীর এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে জমির মুল মালিকসহ বর্তমান সকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গোডাউন ঘরসহ যাবতীয় জিনিসপত্র তাদের দখলে নেয়। এদে তাদের প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল লুট হয়। এদিকে, সকাল ১০টার দিকে আব্দুর রহমানের প্রতিনিধি আদালতের ওই আদেশ নিজ হাতে করে থানায় নিয়ে যায়। এতে করে তাদের কৌশল ধরা পড়ে যায়। তাদের কৌশলটি ছিল যে, ওই জমিটি রাতে আধারে দখলে নিয়ে পরের দিন মঙ্গলবার সহকারী ভুমি কমিশনারসহ হাজিরহাট থানা কর্তৃপক্ষকে ডেকে নিয়ে এসে তাদের দখলে রয়েছে বলে জানান দেয়া। কিন্তু তাদের অপকৌশল নষ্ঠ হয়েছে যায়।
যোগাযোগের চেষ্টা করে আব্দুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। তাঁর পাম্পের ম্যানেজার সুমন মিয়া বলেন, ‘মালিক বাইরে আছে।’ গোডাউন ঘর ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘জমিটি আমার মালিকের। আগে জমিটি তার দখলে ছিল। মালিক মামলায় হেরে গেছেন।
রংপুর মেট্রোপলিটন হাজিরহাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম সর্দার বলেন, সরেজমিনে তদন্ত করে বাদীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।


Share this news on:

সর্বশেষ

img
জাতির সঙ্গে সর্বপ্রথম বেঈমানি উপদেষ্টা পরিষদে থেকে দল গঠন করা : রাশেদ খান Jul 06, 2025
img
'হারুন-বিল্পবের বিরুদ্ধে মামলা করেছি, তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করুন' Jul 06, 2025
img
বিদেশি সংস্থার সাথে জামায়াতের বৈঠক Jul 06, 2025
img
ওয়েব সিরিজ মানেই গালিগালাজ : পরেশ রাওয়াল Jul 06, 2025
img
এবার রজিনীকান্তের ‘কুলি’তে আইটেম গানে পুজা হেগড়ে Jul 06, 2025
img
ক্যাটরিনার অটোগ্রাফে মুগ্ধ জেরিন, লিখলেন ‘ফ্যান গার্ল মোমেন্ট’ Jul 06, 2025
img
"ভা'রত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর রাফাল যুদ্ধবিমান নিয়ে ‘কুৎসা রটাচ্ছে’ চীন" Jul 06, 2025
img
৫ বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস Jul 06, 2025
img
জলমহালের প্রকৃত অধিকার মৎস্যজীবীদের : মৎস্য উপদেষ্টা Jul 06, 2025
img
‌‘দেশে ফ্যাসিবাদ না থাকলেও অনেকের সাথে লড়াই করতে হচ্ছে’ Jul 06, 2025
img
এই সরকারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দিল্লির সঙ্গে মন্দ সম্পর্ক : গোলাম মাওলা রনি Jul 06, 2025
img
কার্তিককে নিয়ে অমালের কথায় তোলপাড়, হুমকি পাচ্ছেন পডকাস্ট সঞ্চালক Jul 06, 2025
img
‘খাঁটি কোলাপুরী’-তেই মন কারিনার Jul 06, 2025
img
দ্বন্দ্ব কাটিয়ে ফের শুরু হচ্ছে ‘লহু’র শুটিং Jul 06, 2025
img
নিজেরা দলাদলি করলে নতুন দেশ গড়ার প্রত্যয় চরমভাবে ব্যর্থ হবে : শিক্ষা উপদেষ্টা Jul 06, 2025
img
মার্কিন মাটিতে ‘টাইগার বাহিনী’, ডেট্রয়েট ফ্যালকন্সে সাকিবসহ ৯ বাংলাদেশি Jul 06, 2025
img
জনগণের ক্ষমতায়ন এবং সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করা দরকার : ফখরুল Jul 06, 2025
img
নির্বাচনে যাদের ভরাডুবি হবে তারাই পিআর পদ্ধতি চায় : প্রিন্স Jul 06, 2025
img
ওয়েক আপ সিড নিয়ে গুজবে ইতি টানলেন কঙ্কনা Jul 06, 2025
পোশাক পরার আগে যা করতেই হবে | ইসলামিক জ্ঞান Jul 06, 2025