ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ‘বেহেশত-দোজখের’ মাঝামাঝি অবস্থান করছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। রবিবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক বিশ্লেষণে এ মন্তব্য করেন তিনি।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘একটি সরকারের যে টার্নিং পয়েন্ট থাকে বা একটি সরকারের কর্মপন্থার যে ধারাবহিকতা থাকে, কিংবা সরকারের যে সুনাম বা দুর্নাম থাকে; সব জায়গায় এবড়োখেবড়ো অবস্থা। এই অবস্থা যখন কোনো রাষ্ট্রে থাকে তখন সবাই এক ধরনের ভয়ংকর পরিস্থিতিতে থাকে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, বর্তমান সরকার এ রকম একটি অবস্থায় আছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কোনো জনমত নেই। যারা সরকারের প্রশংসা করেন তারা ভাড়াটিয়া, আর যারা বিরোধিতা করেন তারা ব্যক্তিগত স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত। এ রকম পরিস্থিতিতে সরকার যে ক্রান্তিকাল মোকাবেলা করছে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দিল্লির সঙ্গে মন্দ সম্পর্ক।
সীমান্ত প্রায় বন্ধ, ব্যবসা-বাণিজ্য তলানিতে নেমেছে এবং ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে বাধা তৈরি হচ্ছে। ভারত হয়তো বছরে আমাদের দেশে ৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, এটা হারালে দেশটির কিছুই হবে না; কিন্তু এটা আমাদের জন্য বড় বিষয়। এই ৪০ বিলিয়নের পণ্য অন্য দেশ থেকে যদি ৫০ বিলিয়নে আমদানি করতে হয় তাহলে আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে। এক বছরও টিকে থাকতে পারব না।’
গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে এ সরকারের সম্পর্ক উন্নয়ন ফরজে কেফায়া। এ ছাড়া এ সরকার দীর্ঘ মেয়াদে টিকতে পারবে না। সরকার চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এতে ভারত খুবই বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যখন এসব বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে ঠিক একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছেন।
আমেরিকা আবার কোয়াড ও ইন্দো প্যাসিফিকে যোগ দিতে বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। আমেরিকা ভারতকে বলছে, বাংলাদেশ তার (আমেরিকার) স্বার্থ রক্ষা করলে ভারতের উচিত বাংলাদেশকে সহযোগিতা করা। এ কাজটি করলে বাংলাদেশকে চীন থেকে সরানো যাবে। সেই দিক থেকে আমেরিকা সরাসরি ড. ইউনূসের সঙ্গে একটি ডিল করতে চাচ্ছে। যেটা এখন স্পষ্ট যে, ড. ইউনূসের ক্ষমতা গ্রহণ, তার ক্ষমতায় পদায়ন, ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতা পরিচালনায় আমেরিকার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। কাজেই আমেরিকাকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। আর তাই যদি হয়, তাহলে চীনের সঙ্গে যা হচ্ছে সেগুলো বুমেরাং হবে।’
তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ করলাম, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাংলাদেশের ব্যাপারে খুব নরম কথা বলেছেন, যা একেবারেই নজিরবিহীন। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করা, বিবদমান সমস্যার ইতিবাচক সমাধানের ব্যাপারে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন। এই সিগন্যাল ড. ইউনূস গ্রহণ করলে রাশিয়া-চীন বলয় এ সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাবে। এই উভয় সংকট, এটাকেই আমি ‘বেহেশত ও দোজখের মাঝামাঝি’ বলেছি।”
পিএ/ এসএন