নারীদের কোষ্ঠকাঠিন্য, কারণ-প্রতিকার ও লক্ষণ

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি যন্ত্রণাদায়ক ও বিরক্তিকর সমস্যা। এই সমস্যা একদিনে বা হঠাৎ করে হয় না। কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ফলে অনেকের টয়লেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়, কিন্তু পেট পরিষ্কার হয় না। বাজে ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারণে এমন অস্বস্তিকর সমস্যায় পড়ে থাকেন অনেকেই। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে এ সমস্যা প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ ভুগছেন।

তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের কোষ্ঠকাঠিন্যের হার অনেক বেশি। কিশোরীদের মধ্যেও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রায়ই বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এবং অনেকেই এ জন্য ক্রনিক পেটব্যাথায় আক্রান্ত হয়। এই সমস্যায় পড়লে অবশ্যই সময়মতো ব্যবস্থা নিতে হবে। তা নাহলে মলত্যাগের সঙ্গে রক্তপাত, পাইলস, এনাল ফিসারের মতো জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে।

গণমাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য সম্পর্কে বেশ কিছু কারণ-প্রতিকার ও লক্ষণ তুলে ধরেছেন গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ইসরাত জাবীন। নিম্নে সেসব বিষয় তুলে ধরা হলো-

যেসব কারণে নারীরা কোষ্ঠকাঠিন্যে বেশি আক্রান্ত হয়:

১. নারীদের মাসিকের সময়, গর্ভাবস্থায় কিংবা রজঃনিবৃত্তির (মেনোপজ) সময় শরীরের ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রায় স্বাভাবিক কিছু পরিবর্তন ঘটে, যা পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থার শেষের দিকে জরায়ু প্রসারিত হয়ে অন্ত্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

২. থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা পুরুষের তুলনায় নারীদের প্রায় ৮ গুণ বেশি। থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে বা হাইপোথাইরয়েডিজম হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

৩. পুরুষদের চেয়ে নারীরা সাধারণত বেশি বিষণ্নতায় ভোগেন। এ কারণে পরিপাকতন্ত্রের স্বাভাবিক গতি কমে যাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

৪. খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবারের ঘাটতি ও অপর্যাপ্ত পানি পান এবং অলস জীবনযাপন করা কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি বড় কারণ।

৫. ডায়াবেটিস থেকে যখন বিভিন্ন স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন অটোনমিক নিউরোপ্যাথির জন্য পরিপাকতন্ত্রের চলন কমে যায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

৬. মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক), অস্ত্রোপচার বা কোনো রোগের কারণে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা কঠিন হয়ে পড়ে।

৭. কিছু ওষুধ যেমন ক্যালসিয়াম, আয়রন, অ্যালুমিনিয়ামসমৃদ্ধ অ্যান্টাসিড; দীর্ঘদিন ধরে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

যেসব খাবার খাবেন:

১. পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন (প্রতিদিন ৮-১২ গ্লাস)। প্রতিদিন তাজা শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খান।

২. খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে, সময় নিয়ে ধীরে ধীরে খাবেন। চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড ও প্রসেসড ফুড পরিহার করা উচিত।

৩. পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম দরকার। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া ও ঘুমানো (৬-৮ ঘণ্টা) উচিত। বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা পরিহার করুন।

লক্ষণ:

১. পেটে তীব্র ব্যথা বা মলদ্বারে ব্যথা। মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া।

২. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া

৩. রক্তশূন্যতা

৪. পেটে কোনো লাম্প বা চাকা অনুভূত হলে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
“দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকে আরো ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো প্রয়োজন “ - শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল May 19, 2024
img
৭ উদ্যোক্তার হাতে জাতীয় এসএমই পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী May 19, 2024
img
ঢাকায় আসছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং May 19, 2024
img
তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী May 19, 2024
img
জীবন বাঁচাতে রাফা ছেড়েছেন ৮ লাখ ফিলিস্তিনি : জাতিসংঘ May 19, 2024
img
পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয় করলেন বাবর আলী May 19, 2024
img
দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন : আজ মাঠে নামবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী May 19, 2024
img
বেরিয়ে এলো জুজুৎসুর নিউটনের ‘ভয়ংকর’ যৌন নিপীড়নের তথ্য May 19, 2024
img
চেন্নাইকে বিদায় করে টানা ছয় ম্যাচ জিতে প্লে-অফে বেঙ্গালুরু May 19, 2024
img
রাসায়নিক খাতের উন্নয়নে দেশেই কারখানা তৈরি করতে চান ব্যবসায়ীরা May 19, 2024