রেমালের তাণ্ডব, প্লাবিত গ্রামের পর গ্রাম

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যার পর বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে। রাত পৌনে নয়টার দিকে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে বাগেরহাটের মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র আঘাত হানতে শুরু করে। এ সময় উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড়টি।

এর প্রভাবে তছনছ হয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। ভেঙে পড়েছে গাছপালা। সেই সঙ্গে ঝড়টির তাণ্ডবে প্রাণ গেছে কয়েকজনের। এ ছাড়া বহু এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

রেমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কলাপাড়া, খেপুপাড়া ও কুয়াকাটায়। এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিষখালি-সন্ধ্যা, পায়রা, আন্ধারমানিক, গলাচিপা ও তেতুলিয়া নদীর উপচে পড়া পানিতে বরগুনা ও পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল থেকে ফুফু ও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে মো. শরীফ (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ভোলায় ঘরচাপা পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে সাতক্ষীরায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়টি কতটা তাণ্ডব চালিয়েছে রাতে তেমনটা বোঝা না গেলেও সকাল হওয়ার পর আস্তে আস্তে ঝড়টির তাণ্ডবলীলা স্পষ্ট হচ্ছে। উপকূলের বিভিন্ন জেলা থেকে যেসব খবর আসছে তাতে উপকূলজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডবই চালিয়েছে রেমাল।

বাগেরহাটে গ্রামের পর গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জোয়ারের পানিতে ডুবেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। আগাম প্রস্তুতির কারণে প্রাণহানি কম হলেও জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে গবাদি পশু, মাছের ঘের ও ফসলি ক্ষেত। বাড়িঘর ও জনপদ ভাসছে নোনাপানিতে। ঝড়ে উপড়ে গেছে গাছপালা। বিচ্ছিন্ন হয়েছে লাখো গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ। বিঘ্নিত হয়েছে মোবাইল ফোন-ইন্টারনেট সেবা। বিভিন্ন এলাকায় সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে।

রেমালের প্রভাবে বরগুনার প্রধান তিনটি নদী বিষখালী, পায়রা ও বলেশ্বর নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উচ্চ জোয়ারের চাপে বরগুনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ১০টি গ্রাম। এ ছাড়া জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে বরগুনার নিম্নাঞ্চল। বরগুনার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২০ হাজারের বেশি মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী, ডালভাঙা ও নলী এলাকা, নলটোনা ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া, নলটোনা, সোনাতল ও কুমিড়মারা, বুড়িরচর ইউনিয়নের গুলবুনিয়া, বাঁশবুনিয়া, চালিতাতলী, আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়ন, বদরখালী ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি, কুমড়াখালী ও গুলিশাখালী এলাকা, পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা, জীনতলা, টেংরা, কালমেঘা, কাকচিড়া, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া, ছোটবগী, নিদ্রার চর, তেঁতুলবাড়িয়া, খোট্টার চর, সোনাকাটা, নিউপাড়া, আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, গুলিশাখালী, বামনা উপজেলার রামনা, বদনীখালী, বেতাগী উপজেলার কালিকাবাড়ি, ঝিলবুনিয়া, ছোট মোকামিয়া এলাকার বাঁধের বাইরের লক্ষাধিক বাড়িঘর অধিক জোয়ারে নিমজ্জিত হয়েছে।

রেমালের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে গোটা সুন্দরবন। করমজলসহ বনের উঁচু এলাকাগুলোও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। সদর হাসপাতালের কোন একসাইড ভেঙে ভেতরে পানি ঢুকেছে। বাগেরহাটে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

মোংলার শ্যালা নদী ও পশুর নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপরে। রাস্তা ভেদ করে জয়মুনি এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।

চট্টগ্রামেও রেমালের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পাহাড় ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। কক্সবাজারে বঙ্গোপসাগরে জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে ২১ টি গ্রাম। এ ছাড়া নোয়াখালীর হাতিয়ার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।

খুলনার দুর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় উপজেলা দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের অনেক জেলায় গুড়ি গুড়ি থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
থাইল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম নারী মন্ত্রী হলেন জুবাইদা থাইসেত Oct 03, 2025
img
বাগেরহাটে প্রতিপক্ষের হামলায় বিএনপি নেতা নিহত Oct 03, 2025
img
শিগগিরই পাবনা-ঢাকা সরাসরি রেলযোগাযোগ চালু হবে : রেল সচিব Oct 03, 2025
img
নাসুম-শরিফুলের দাপটে ১৫০ রানের আগেই থামল আফগানিস্তান Oct 03, 2025
img
আগামী বছরের রোজা শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা Oct 03, 2025
img

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ

দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৯ রানে গুটিয়ে ১০ উইকেটের বড় জয় ইংল্যান্ডের Oct 03, 2025
img
রোহিত-কোহলিকে নিয়ে শনিবার আসতে পারে ঘোষণা Oct 03, 2025
img
হাসিনাকে ঠেকাতে তফসিল ঘোষণার পর দুটি অ্যাপ বন্ধ করে দিবে সরকার : গোলাম মাওলা রনি Oct 03, 2025
img
ফের চোটে ছিটকে গেলেন লামিনে ইয়ামাল Oct 03, 2025
img

প্রশ্ন আফতাবের

১৫ বছরে কিছুই করতে না পারা ব্যক্তিরা এখনও বিসিবিতে কীভাবে? Oct 03, 2025
img
অপপ্রচারের শিকার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ: চরমোনাই পীর Oct 03, 2025
img
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শিরোপার জন্য লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেন বার্সেলোনা কোচ Oct 03, 2025
img
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৪ Oct 03, 2025
img
আবারও হ্যাকড ইসলামী ব্যাংকের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ Oct 03, 2025
img
গণভবনকে কেন জাদুঘরে ‍রূপান্তর, প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিবের ব্যাখ্যা Oct 03, 2025
img
'ওয়ার ২' বক্স অফিসে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেল না, প্রথমবার মুখ খুললেন হৃত্বিক Oct 03, 2025
img

ইউজিসি-ইউনেস্কোর উদ্যোগ

২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার শিক্ষার্থী পাবেন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা Oct 03, 2025
img
বিশ্ববাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম Oct 03, 2025
img
তারেক রহমান হবেন আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী : আবুল কালাম Oct 03, 2025
img
মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে ন্যাটো স্টাইলে জোট গঠনের আশা পাকিস্তানের Oct 03, 2025