ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড উপকূল, ১২ জনের মৃত্যু

ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে উপকূল। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ে ঘর-বাড়ি, দোকানপাট লন্ডভন্ড হয়েছে, ভেঙে পড়েছে গাছ-পালা।

রেমালের তাণ্ডবে ছয় জেলায় আরও দুইজনসহ এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে ৩ জন, ভোলায় ৩ জন, বরিশালে ৩ জন এবং সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় একজন করে রয়েছে।

রোববার (২৬ মে) থেকে সোমবার (২৭ মে) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ওই ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

খুলনা: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও বৃষ্টিতে গাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে লালচাঁদ মোড়ল নামে এক যুবক মারা গেছেন। রোববার রাতে উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের গাওঘরা গরিয়ারডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

সুরখালী ইউপির চেয়ারম্যান এস কে জাকির হোসেন বলেন, ঝড়ের রাতে নিজের ঘরে শুয়ে ছিলেন লালচাঁদ। ঘরের অবস্থা খুব বেশি ভালো ছিল না। ঝড়ে জামগাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে। সোমবার সকালে লোকজন গিয়ে গাছ কেটে মৃত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল হুসেইন খাঁন বলেন, রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন লাল চাঁদ মোড়ল। পরে রাতেই তিনি বাড়ি ফিরে যান। বাড়ি গেলে গাছচাপায় তিনি মারা যান।

ভোলা: ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে গাছ ও ঘরচাপায় নারী ও শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোররাতের দিকে লালমোহন, দৌলতখান ও বোরহান উদ্দিন উপজেলায় তাদের মৃত্যু হয়।

লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাহবুব উল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ঘরের নিচে চাপা পড়ে মনেজা খাতুন নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। দৌলতখান উপজেলায় ঝড়ের মধ্যে ঘর চাপা পড়ে মাইসা নামের একজন মারা গেছে বলে দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সত্য রঞ্জন খাসকেল জানান। এছাড়া বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন ফকির বলেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে জাকির নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

বরিশাল: ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে দেয়াল ধসে ও গাছের ডাল ভেঙে পড়ে জেলায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম জানান, রোববার (২৬ মে) রাতে ও সোমবার (২৭ মে) বরিশাল নগরের রুপাতলীতে দেয়াল ধসে দুজনের মৃত্যু হয় এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলায় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

সাতক্ষীরা: শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালি আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকত মোড়ল (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।

মৃতের ভাতিজা নুর মোহাম্মদ জানান, বিকেলের পর থেকে প্রচণ্ড ঝড় ও নদীতে তুফান উঠলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। চাচা শওকত মোড়ল নাপিতখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য জামাকাপড়সহ স্ত্রীকে নিয়ে বের হন। বাসা থেকে বাঁধের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে মারা যান তিনি।

চট্টগ্রাম: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে নগরীতে একটি নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৭ মে) সকালে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামীর চন্দ্রনগর তালতলার জেডএ আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পটুয়াখালী: কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল থেকে ফুপু ও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে মো. শরীফ (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৬ মে) দুপুরে ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে দুমকির নলদোয়ানি গ্রামে ঘরের ওপর গাছ পড়ে বৃদ্ধ জয়নাল হাওলাদারের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, বাউফলের নাজিরপুরে পরিত্যক্ত ঘরে গাছ পড়ে করিম নামের আরেক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া মোংলা, সাতক্ষীরার শ্যামনগর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, কুয়াকাটা ও খেপুপাড়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় রেমাল। বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় ভেঙে গেছে ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা। বাঁধ ভেঙে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

রেমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কলাপাড়া, খেপুপাড়া ও কুয়াকাটায়। বিষখালি-সন্ধ্যা, পায়রা, আন্ধারমানিক, গলাচিপা ও তেতুলিয়া নদীর উপচে পড়া পানিতে বরগুনা ও পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় চার ফুট পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে গোটা সুন্দরবন।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন। যার মধ্যে দুই কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ গ্রাহক ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন।

এছাড়া, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ওজোপাডিকোর ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮১ গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছেন।

সোমবার (২৭ মে) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গাজামুখী শেষ নৌযান ম্যারিনেটও আটক Oct 03, 2025
img
‘ফিলিস্তিন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা পাশে থাকবো’ Oct 03, 2025
img
আওয়ামী লীগ না থাকায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে জামায়াত : জাহেদ উর রহমান Oct 03, 2025
img
এখনও এগিয়ে যাচ্ছে ৯ জাহাজ, কৌশল প্রকাশ করলেন শহিদুল আলম Oct 03, 2025
img
ঢাকাকে সলিডারিটি হাব বানাতে হবে: ফরহাদ Oct 03, 2025
img
সমঝোতা হলে ১০০ আসন ছাড়বে জামায়াত : পরওয়ার Oct 03, 2025
img
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আইনগত কোনো বাধা নেই : অ্যাটর্নি জেনারেল Oct 03, 2025
img
আমাদের মূল লক্ষ্য বিশ্বকাপ, হারার পরে বললেন রশিদ খান Oct 03, 2025
img
নব্বই দশকের ‘ক্রাশ’ দিব্যা ভারতীর অকাল বিদায় আজও রহস্যময় Oct 03, 2025
img
পুলিশের সঙ্গে হামলার স্থানে যাচ্ছেন হিরো আলম Oct 03, 2025
img
জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতার রাজনীতি করে না : আমির আব্দুস সবুর Oct 03, 2025
img
বাংলাদেশসহ ১৭ দল নিশ্চিত করল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট Oct 03, 2025
img
আলজেরিয়া জাতীয় দলে জায়গা পেলেন জিদান পুত্র Oct 03, 2025
img
ড. ইউনূসের কথা আর কাজের মধ্যে অনেক পার্থক্য : জিল্লুর রহমান Oct 03, 2025
img
ভাষা সৈনিক আহমদ রফিকের মৃত্যুতে ঢাবি উপাচার্যের শোক প্রকাশ Oct 03, 2025
img
জামায়াত-শিবিরের অন্য দলে কর্মী যুক্ত করার নীতি বন্ধ করতে হবে : রাশেদ খান Oct 03, 2025
img
বিদেশে পালানোর সময় বিমানবন্দর থেকে যুবলীগ নেতা আটক Oct 03, 2025
img
থ্রি ইডিয়টসখ্যাত রাঞ্চোকে কেন আটক করলো ভারত সরকার? Oct 03, 2025
img
মহাসড়ক থেকে বাস খাদে পড়ে নিহত ১, আহত ৩০ Oct 03, 2025
img
দীর্ঘ ৯ বছর পর দেশের মাটিতে রাহুলের সেঞ্চুরি Oct 03, 2025