২০০৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সুপারহিট বলিউডি ছবি থ্রি ইডিয়টসের প্রধান চরিত্র ‘রাঞ্চো’ বাস্তবের যে ব্যক্তির আদলে নির্মাণ করা হয়েছিল, সেই সোনাম ওয়াংচুকের মুক্তি চেয়ে করে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন তার স্ত্রী গীতাঞ্চলি আংমো। আবেদনে সোনামের গ্রেপ্তারিকে ‘অবৈধ’ বলেও দাবি করেছেন গীতাঞ্জলি।
সর্বোচ্চ আদালতে আবেদনের পাশাপশি একই দাবি জানিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জন রাম মেঘওয়াল এবং লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবীন্দ্র গুপ্তকেও চিঠি দিয়েছেন গীতাঞ্জলি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন গীতাঞ্জলী আংমো নিজেই। পোস্টে তিনি লিখেছেন, “সোনম ওয়াংচুকের মুক্তি চেয়ে আমি সুপ্রিম কোর্টে হেবিয়াস কর্পাস আবেদন করেছি। আজ এক সপ্তাহ পেরিয়েছে; তবুও আমার কাছে ওয়াংচুকের স্বাস্থ্য, তার অবস্থা বা আটকের কারণ সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই।”
পোস্টে তিনি প্রশ্ন রাখেন, “জনগণের স্বার্থকে সমর্থন করা কি পাপ?”
ভারতের বৃহত্তম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে লাদাখকে পৃথক রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছিলেন নয়াদিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। তাদের ভাষ্য, লাদাখের জনজীবন, সংস্কৃতি, বৈচিত্র এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য এই স্বীকৃতি প্রয়োজন।
গত সপ্তাহের বুধবার এই দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় লাদাখে। এ সময় আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে নিহত হন ৪ জন এবং আহত হন কমপক্ষে ৫৯ জন। আহতদের মধ্যে ৩০ জনই আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর সদস্য।
বিক্ষোভে ইন্ধন ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার লাদাখের রাজধানী লেহ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় প্রকৌশলী, গবেষক ও সমাজকর্মী সোনাম ওয়াংচুককে।
ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মামলা রুজু হয়েছে বলে লাদাখের প্রশাসন জানিয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, নিরাপত্তাজনিত কারণে লেহর কারাগারে না রেখে তাকে পাঠানো হয়েছে রাজস্থানের জোধপুর কারাগারে।
‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমায় আমির খানের ‘রাঞ্চো’ চরিত্রটি বানানো হয়েছিল তাঁরই আদলে। অনেকের তাঁকে বাস্তবের ‘রাঞ্চো’ বলেও ডাকেন। লাদাখবাসীর একাংশের ধারণা, লেহতে ওয়াংচুক সমর্থকদের বিক্ষোভের আঁচ যাতে কারাগারে এসে না পড়ে, সেই কারণেই জোধপুরকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ সেপ্টেম্বরে লাদাখে জেন জ়ির বিক্ষোভের পরেই বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (ফরেন কনট্রিবিউশন রেগুলেশন অ্যাক্ট বা এফসিআরএ) লঙ্ঘনের অভিযোগে পদক্ষেপ করেছিল শাহের মন্ত্রক। সোনমের সংস্থা ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখ’ (এসইসিএমওএল)-এর এফসিআরএ লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছিল। তার আগে শুরু হয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন তদন্ত সংস্থা সিবিআই তদন্ত।
ওয়াংচুকের সংস্থা এসইসিএমওএল এবং ‘হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অল্টারনেটিভস লাদাখ’ (এইচআইএএল) এবং ‘স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখ’ (এসইসিএমওএল)-এর বিরুদ্ধে নিয়ম ভেঙে বিদেশি অনুদান নেওয়ার অভিযোগে গত মাসে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
টিজে/এসএন